ঘটনাটা ভারতের উত্তর প্রদেশের হাতরাস জেলার সাহাপাউ এলাকার। সেখানকার রসগাওন গ্রামে ডিএল পাবলিক স্কুল নামে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলেছিলেন জাসোধন সিং নামে এক ব্যক্তি। লাভের আশায় ঋণ নিয়ে স্কুলটি খুললেও ছাত্র ভর্তির হার ছিল হতাশাজনক।
স্কুলের উন্নয়ন আর সমৃদ্ধির পরিকল্পনা করছিলেন ‘তান্ত্রিক’ আচারে বিশ্বাসী জাসোধন সিং। শেষ অবধি স্কুল ও তার পরিবারের সমৃদ্ধির জন্য একটি শিশুকে বলি দেওয়ার জন্য নিজের ছেলে ও স্কুলের পরিচালক দীনেশ বাঘেলকে নির্দেশ দেন।
হাতরাস জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) অশোক কুমার সিং বলেন, হত্যার শিকার চতুর্থ শ্রেণীর শিক্ষার্থী কৃতার্থ স্কুলের প্রাঙ্গণে অবস্থিত হোস্টেলে থাকতো। গত ২৩ সেপ্টেম্বর হোস্টেল থেকে শিশুটিকে অপহরণ করেন রামপ্রকাশ সোলাঙ্কি, দীনেশ ও জাসোধন। তারা নির্জন স্থানে নিয়ে যান শিশুকে বলি দেওয়ার জন্য।
এএসপি অশোক আরও জানান, বলি দেওয়ার সময় শিশুটি কান্নাকাটি শুরু করলে তাড়াহুড়ো করে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। হত্যাকাণ্ডের সময় আরেক স্কুলের প্রধান শিক্ষক লছমন সিং ও আরেক শিক্ষক বীরপাল সিং উপস্থিত ছিলেন। তারা জায়গাটি পাহারা দিচ্ছিলেন।
নিহত ছাত্রের বাবা কৃষ্ণ কুশওয়া বলেন, ‘স্কুলের পরিচালক বাঘেলকে আমাকে ভোর ৫টার দিকে ফোন করে জানান আমার ছেলের শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছে। ওকে দেখতে যেতে বলে। আমি তাড়াতাড়ি স্কুলের দিকে রওনা হই। তবে মাঝপথে বলা হয় যে তারা আমার ছেলেকে চিকিৎসার জন্য সদাবাদে নিয়ে যাচ্ছে। তখন আমি সদাবাদের দিকে রওনা দেই।’
ছাত্রের বাবা আরও বলেন, ‘তারা আমাকে জানায় ছেলেকে আগ্রায় নিয়ে যাচ্ছে। তখন সন্দেহ হয় এবং তাদের পিছু নিই। আমি বারবার ফোন করি, তবে তারা থামেনি। আমি তাদের পিছন পিছন যেতে থাকি। অবশেষে তারা সদাবাদে থামে। আমি জোর করে গাড়িতে উঠে দেখি আমার ছেলের মৃতদেহ বাঘেলের গাড়ির ভেতরে রয়েছে।’
কৃষ্ণ কুশওয়া বলেন, ‘পরিচালক বাঘেল অপরাধের কথা স্বীকার করেছে। আমি চাই এই মামলাটি আরও তদন্ত করা হোক। এই হত্যার ষড়যন্ত্রে জড়িত সবাইকে গ্রেপ্তার করা হোক।’
হাতরাসের মৌলিক শিক্ষা কর্মকর্তা (বিএসও) স্বাতী ভারতী স্কুলটি বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়ার পাশাপাশি এ ঘটনার তদন্ত করতে আদেশ দিয়েছেন। তদন্ত শেষে স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ করা হবে। স্বাতী আরও জানান, স্কুলটি অনুমোদন ছাড়াই প্রথম শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত চলছিল। হোস্টেলটিও অবৈধভাবে পরিচালিত হচ্ছিল।
স্থানীয় সূত্রগুলো জানাচ্ছে, শিশু কৃতার্থকে হত্যার আগে গত ৬ সেপ্টেম্বর আরেকটি শিশুকে বলি দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল। তবে শিশুটি শ্বাসরোধ করার সময় চিৎকার করে ওঠায় পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। পরে শিশুটির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হলে দেখা যায় তাকে শ্বাসরোধ করার চেষ্টা করা হয়েছিল। তদন্তে পুলিশ স্কুল প্রাঙ্গণে টিউবওয়েলের পাশে একটি কক্ষ থেকে পূজার উপকরণ, একটি রশি, ধর্মীয় ছবি এবং একটি চাবি উদ্ধার করেছে।
ইতোমধ্যে পুলিশ স্কুলের মালিক ও পরিচালক ছাড়াও প্রধান শিক্ষক লছমন সিং ও দুই শিক্ষক রামপ্রকাশ সোলাঙ্কি ও বীরপাল সিংকেও গ্রেপ্তার করেছে। তাদের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। ময়নাতদন্তে জানা গেছে, কৃতার্থকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে।
এদিকে, জাতীয় শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান প্রিয়াঙ্ক কানুনগো ঘটনার ব্যাপারে পদক্ষেপ নেবেন বলে জানিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, রাজ্যের গভর্নরের নেতৃত্বে একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করবে। প্রাথমিক তদন্তে দেখা যাচ্ছে, নিয়ম লঙ্ঘন করা হয়েছে, ভারত সরকারের নির্দেশিকা অনুসরণ করা হয়নি।
উত্তর প্রদেশ শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান দেবেন্দ্র শর্মা ঘটনাকে ভয়ঙ্কর অপরাধ বলে উল্লেখ করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। সূত্র: আনন্দবাজার