আফ্রিকার দেশ আলজেরিয়ায় ভয়াবহ দাবানলে কমপক্ষে ৩৪ জন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও অনেকে। এ ছাড়া দাবানলের কারণে হাজারও মানুষ বাড়ি ছেড়েছেন। নিহতদের মধ্যে দেশটির ১০ সেনাসদস্যও রয়েছেন। আগুন নেভানোর চেষ্টার সময় প্রাণ হারান তারা।
মঙ্গলবার (২৫ জুলাই) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে। এতে বলা হয়, আলজেরিয়ার উত্তরাঞ্চল সাম্প্রতিক দিনগুলোতে রেকর্ড তাপপ্রবাহের মুখোমুখি হচ্ছে। এমনকি এই অঞ্চলের বেশির ভাগ স্থানে তাপমাত্রা ৪৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছেছে।
সোমবার উত্তর আফ্রিকার এই দেশটির ১৬টি প্রদেশে ৯৭টি দাবানলের ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে। ভয়াবহ এই দাবানলের আগুন নেভানোর চেষ্টার সময় ১০ জন সেনাসদস্য নিহত হন। এ ছাড়া আবাসিক এলাকায় ছড়িয়ে পড়া আগুনে আরও ২৪ জন নিহত এবং ২৬ জন আহত হয়েছেন। আর এই দাবানলে বন, ফসল এবং কৃষিজমি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
প্রায় ৮ হাজার দমকল কর্মী আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে হাজারও মানুষকে। দেশটির রাজধানী আলজিয়ার্সের পূর্বে বেজাইয়া, বুইরা, জিজেল, ফেনাইয়া, জাবারবার প্রদেশ থেকে ১ হাজার ৫০০ মানুষকে তাদের বাড়িঘর থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
সবচেয়ে ভয়াবহ দাবানল দেখা দিয়েছে আলজেরিয়ার কাবিলি অঞ্চলে। আলজিয়ার্সের পূর্বে অবস্থিত এই পার্বত্য অঞ্চল থেকে আগুন উপকূলীয় শহর বেজাইয়া এবং জিজেলের আবাসিক এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। মূলত প্রবল বাতাসের কারণে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আগুনের কারণ অনুসন্ধানে বিচার বিভাগীয় তদন্ত শুরু করেছে তারা।
আলজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট আবদেলমাদজিদ তেবোউন নিহতদের পরিবার, বেসামরিক এবং নিরাপত্তা কর্মী সবার প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বুমার্ডেস, টিজি ওজু, জিজেল এবং স্কিকদা অঞ্চলে ৩৫০টি ট্রাক এবং বিমানের সহায়তায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে লড়াই করছে প্রায় ৭ হাজার ৫০০ অগ্নিনির্বাপক কর্মী।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, নাগরিকদের আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা এড়িয়ে চলতে বলছে এবং নতুন করে আগুন জ্বলতে দেখলে টোল-ফ্রি জরুরি নাম্বরে খবর দেওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছে। এ ছাড়া দাবানল সম্পূর্ণরূপে নির্বাপিত না হওয়া পর্যন্ত নাগরিক সুরক্ষা পরিষেবাগুলো সচল থাকবে বলেও জানানো হয়েছে।
বেজাইয়া প্রসিকিউটর অফিস এক বিবৃতিতে বলেছে, আগুনের সম্ভাব্য কারণ এবং অপরাধীদের চিহ্নিত করতে প্রাথমিক তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় গণমাধ্যম প্রদত্ত ছবিগুলোতে দেখা গেছে, যেসব অঞ্চলে আগুন লেগেছে সেসব স্থানে আগুনে পুড়ে যাওয়া যানবাহন পড়ে রয়েছে। এছাড়া স্টোরফ্রন্টগুলো পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে।
আলজেরিয়া গ্রীষ্মকালে দাবানল কোনো অস্বাভাবিক ঘটনা নয়। তবে এ বছর দেশটিসহ বেশ কিছু অঞ্চল ভয়াবহ তাপপ্রবাহের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এবং এই তাপপ্রবাহ আরও বেড়েছে। ফলে ভূমধ্যসাগরীয় কয়েকটি দেশ এ বছর রেকর্ড তাপমাত্রা দেখেছে।