কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবিতে এক বিমানবন্দর অধিগ্রহণের প্রস্তাব দেওয়ায় ভারতের আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করছেন বিমানকর্মীরা। আন্দোলন শুরু করেছে দেশটির বিমান উড্ডয়ন পরিচালনাকারী কর্মী সংগঠন কেনিয়া এভিয়েশন ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন।
বিদেশের মাটিতে এমন বিক্ষোভে নতুন বিপদের গন্ধ পাচ্ছে ভারতের বিরোধীদল। তারা মনে করছে, নিজ দেশের বড় এক কোম্পানির বিরুদ্ধে এই বিক্ষোভ আর আন্দোলন শেষ অবধি ভারতের বিরুদ্ধে কেনিয়ায় জনরোষ তৈরি হতে পারে।
ভারতের বিরোধী নেতারা মনে করছেন, ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলোতে আদানি গোষ্ঠীর প্রকল্প নিয়ে সাম্প্রতিক অতীতে জন–অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের বিষয় তুলে ধরে বলেন, বিদ্যুৎ রপ্তানি করতে আদানি গোষ্ঠী দেশটির সঙ্গে যে চুক্তি করেছিল, সম্প্রতি সেখানে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে তার প্রভাব ছিল। যার পরিণতিতে শেষমেশ শেখ হাসিনাকে দেশ ছাড়তে হয়।
আশঙ্কা প্রকাশ করে কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ বলেছেন, কেনিয়ায় গজিয়ে ওঠা বিক্ষোভ-আন্দোলন কেনিয়ায় ভারতের বিরুদ্ধে জনমত গঠনে ইন্ধন দিতে পারে। শঙ্কিত জয়রাম তার এক্স হ্যান্ডলে আরও লিখেছেন, আদানিদের বিরুদ্ধে কেনিয়ার মানুষের এই আন্দোলন ভারত ও ভারতের সরকারের বিরুদ্ধে জনরোষে পরিণত হতে পারে।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, নাইরোবিতে জোমো কেনিয়াত্তা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর অধিগ্রহণ করতে আদানি গোষ্ঠী সেখানে সাবসিডিয়ারি কোম্পানি খোলার পরই বিমানকর্মীদের মধ্যে উদ্বেগ বেড়েছে।
বিমান কর্মীদের আশঙ্কা, তাদের বিমানবন্দর পরিচালনার ভার ভারতীয় আদানি কোম্পানির হাতে গেলে কর্মী ছাঁটাই হতে পারে। এমন আশঙ্কায় গত ২ সেপ্টেম্বর থেকে ধর্মঘট শুরু করে কেনিয়া এভিয়েশন ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন।
তাদের ভাষ্য, এমনিতেই তারা চাকরির নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় আছে। তার ওপর এখন আদানি গোষ্ঠীর হাতে বিমানবন্দরের নিয়ন্ত্রণভার গেলে তা হবে মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো।
জয়রাম রমেশের দাবি, বিদেশের মাটিতে ভারতীয় কোম্পানির বিরুদ্ধে এমন বিক্ষোভ দেশটির জন্য চিন্তার বিষয়। তার ভাষ্য, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে আদানির সখ্যের কথা সবাই জানেন। ফলে কেনিয়ার বিমানকর্মীদের এই আন্দোলন সহজেই ভারত ও কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে জনরোষে পরিণত হতে পারে।
দ্য ইস্ট এশিয়ানের সংবাদে বলা হয়েছে, কেনিয়ার নাইরোবিতে জোমো কেনিয়াত্তা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ৩০ বছর মেয়াদে পরিচালনাসহ আরও কিছু প্রস্তাব দিয়েছে আদানি গোষ্ঠী। গত জানুয়ারিতে মোট ৭৫ কোটি ডলারের প্রস্তাব দেয়। এর মধ্যে আছে নতুন টার্মিনাল ভবন নির্মাণ, ট্যাক্সিওয়ে সংস্কার ও দুটি নতুন দ্রুতগতির ট্যাক্সিওয়ে নির্মাণ। সেই সঙ্গে আরও কিছু কাজের জন্য আদানি আরও ৯ কোটি ২০ লাখ ডলারের প্রকল্প প্রস্তাব দেয়।
যদিও কেনিয়ার সরকার বিমানকর্মীদের আশ্বস্ত করেছে, বিমানবন্দর বিক্রি হচ্ছে না। এটি সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগ; কার হাতে যাবে তা-ও চূড়ান্ত নয়।