একেবারেই অজপাড়ার এক নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারে তার জন্ম। বাবা ছিলেন দিনমজুর, করতেন শ্রম বিক্রি।আর মা গৃহিণী। শৈশব থেকেই ছিলেন কঠোর পরিশ্রমী আর অধ্যবসায়ী। অনেক সংগ্রাম করেই গ্রামের স্কুল,কলেজের পড়ালেখা শেষ করে ভর্তি হন বিশ্ববিদ্যালয়ে।
তবে সীমাহীন প্রতিকূলতার মধ্যেও ছাত্রজীবনেই জড়িয়ে পড়েন রাজনীতিতে। কালেক্রমে সেই রাজনীতির মাধ্যমেই আজ তিনি দেশটির নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট। যা দেশবাসীর কাছে তো বটেই গোটা বিশ্বের কাছেই বিস্ময়ের।
সেই বিস্ময়কর নেতার নাম অনূঢ়া কুমারা দিশানায়েকে। পুরো নাম দিশানায়েকে মুদিয়ানসেলাগে অনূঢ়া কুমারা দিশানায়েকে। যিনি দেউলিয়া হওয়া থেকে ঘুরে দাঁড়ানো দেশ শ্রীলঙ্কার নতুন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট।
বছর দুয়েক আগেও যে দেশটি বিশ্বের কাছে উদ্বেগের বিষয় হয়ে উঠেছিল। চরমে উঠেছিল আর্থিক সংকট। তার ওপর বিপুল অঙ্কের ঋণের বোঝা। সব কিছু সামলাতে হিমশিম খাচ্ছিল সরকার। জনতার গণঅভ্যুত্থানে পালিয়ে যায় স্বৈরাচার রাজপাকসে পরিবার।
এরপর দুই বছর ধরে একজন যোগ্য রাষ্ট্রনায়কের অপেক্ষায় ছিল দেশটি। অবশেষে ন্যাশনাল পিপলস পাওয়ার (এনপিপি) জোটের নেতা হিসেবে অনূঢ়া কুমারা দিশানায়েকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে পেল শ্রীলঙ্কা।
নতুন প্রেসিডেন্ট দিশানায়েকের জন্ম ১৯৬৮ সালের ২৪ নভেম্বর শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বো থেকে প্রায় ১৭০ কিলোমিটার দূরে অনুরাধাপুরা জেলার থাম্বুতেগামা গ্রামে। শৈশব থেকে কঠোর অধ্যবসায়ের মাধ্যমেই কেলানিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞানে ডিগ্রি অর্জন করেন। ছাত্রজীবনেই রাজনীতিতে সক্রিয় হন।
১৯৮৭-৮৯ সালে দিশানায়েক জেভিপির (জনতা ভিমুক্তি পেরামুনা) সশস্ত্র আন্দোলনে যুক্ত হন। ১৯৯৫ সালে জেভিপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটিতে যোগ দেন। এরপর ২০০০ সালে জাতীয়তাবাদী তালিকা থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি এলটিটিইর (তামিল বিদ্রোহী গোষ্ঠী) বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য লড়াই করেন।
তাছাড়া, বৌদ্ধ ভিক্ষুদের সমর্থন নিশ্চিত করতে দিশানায়েক সংবিধানের ৯নং অনুচ্ছেদের প্রতি নিজস্ব সমর্থন জানান। ১৯৮৭ সালের ভারত-শ্রীলঙ্কা চুক্তির তীব্র সমালোচনা করেন। এছাড়া ভারতীয় সম্প্রসারণবাদবিরোধী অবস্থান গ্রহণ করেন। তিনি কাচাথিভু দ্বীপকে ভারতকে ফেরত দেয়ার যেকোনো প্রচেষ্টার বিরোধিতা করেন।
দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কার নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর দিশানায়েক প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তার সরকার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের বেইলআউট চুক্তির শর্ত পুনরায় আলোচনা করবে। যা বর্তমান সরকারের নীতির বিপরীত। এর পাশপাশি তিনি অর্থনৈতিক সংকট থেকে মুক্ত করার লক্ষ্যে শ্রীলঙ্কার জন্য নতুন সূচনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।