কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) নিয়ন্ত্রণ করতে আইন তৈরিতে প্রাথমিক চুক্তি নিয়ে একমত হয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সদস্যদেশগুলো। এই আইন প্রণয়ন হলে এটি এআই নিয়ে বিশ্বের প্রথম কোনো আইন হবে।
রোববার (১০ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে জার্মান গণমাধ্যম ডয়চে ভেলে এ তথ্য জানিয়েছে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রযুক্তিগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করার লক্ষ্যে এ আইন তৈরি করা হচ্ছে। এর মধ্যে চ্যাটজিপিটি এবং বায়োমেট্রিক নজরদারিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারের মতো বিষয়ও রয়েছে। প্রাথমিক চুক্তিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহারে স্বচ্ছতা ও সুরক্ষা নিশ্চিতের কথা বলা হয়েছে। অন্যথায় সাড়ে ৩ কোটি ইউরো বা প্রতিষ্ঠানের বৈশ্বিক রাজস্বের ৭ শতাংশ জরিমানার মতো গুরুতর দণ্ড প্রদানের বিধানও করা হয়েছে।
ইইউ কমিশনার থিয়েরি ব্রেটন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বলেন, “ইইউ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারের জন্য সুস্পষ্ট নিয়ম নির্ধারণ করেছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আইন শুধু একটি নিয়মের সংকলন নয়। এটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের স্টার্টআপ। এছাড়া এটি গবেষকদের জন্য বিশ্বব্যাপী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দৌড়ে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য একটি লঞ্চ প্যাড হিসেবে কাজ করবে।”
ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডার লেন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আইনের ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, “মানুষ ও ব্যবসার নিরাপত্তা এবং মৌলিক অধিকারের জন্য এটি বিশ্বব্যাপী প্রথম আইন হতে যাচ্ছে।”
এদিকে এ আইনের বিষয়ে ইইউ রাষ্ট্রগুলো একমত হওয়ায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন কোম্পানিগুলোর মধ্যে উদ্বেগ কাজ করবে। এই আইন পাস হলে তা বিশ্বের নানা প্রান্তে বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করতে থাকা অন্য রাষ্ট্রগুলোর কাছে উদাহরণ হিসেবে উপস্থাপিত হবে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ন্ত্রণে ২০২১ সালে প্রথম নিয়মের খসড়া তৈরি করা হলেও, প্রায় ২৪ ঘণ্টার বিতর্ক এবং এরপর আরও প্রায় ১৫ ঘণ্টা আলোচনার পর সর্বশেষ চুক্তিটি হয়েছে।
চেহারা শনাক্তকরণ নজরদারির জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার ছিল বিতর্কের কেন্দ্রে এবং এ নিয়েই সবচেয়ে জোরালো বিতর্ক হয়েছে। তবে দ্রুতই এই আইন চূড়ান্ত করার বিষয়ে একমত হয়েছে সদস্যরাষ্ট্রগুলো। ব্রাসেলস ২০২৫ সালের মধ্যে আইনটি কার্যকর করা হতে পারে বলে আশা করছে। তবে বিশ্বব্যাপী সরকারগুলো নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির সুবিধার ভারসাম্য বজায় রাখতে চাইছে।
অক্টোবরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এআই নিরাপত্তার মানদণ্ড নির্ধারণে একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন। এর আগে আগস্টে চীনও একই ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
ইইউর আলোচনায় বিষয়টিও উঠে এসেছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিষয়ে অতিরিক্ত নিয়ম ও বিধি আরোপ করা হলে জার্মানির আলেফ আলফা বা ফ্রান্সের মিস্ট্রাল এআইয়ের মতো ইউরোপীয় প্রতিষ্ঠানগুলো বিশ্বব্যাপী প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়তে পারে। এ বিষয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ইইউ ও সতর্ক করে।