তুরস্কের আধুনিক ইতিহাসে সম্ভবত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। কেননা, এ নির্বাচনেই সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান। কারণ, তার বিরুদ্ধে বিগত দিনে নির্বাচন করা সব বিরোধী দল এককাট্টা হয়ে মাঠে নেমেছিল। আর তাই তো ২০ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ানের ভবিষ্যৎ ঝুলে গিয়েছে। দেশটিতে আজ অনুষ্ঠিত হচ্ছে দ্বিতীয় রাউন্ডের ভোট বা রান-অফ নির্বাচন।
রোববার (২৮ মে) কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, দুই ডজন রাজনৈতিক দল, চারজন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী এবং নির্বাচনী জোটের এক বিস্ময়ের পর তুর্কি ভোটাররা আজ রোববার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পুনরায় ভোট দেবেন। ভোটে যিনি বিজয়ী হবেন, আগামী পাঁচ বছর তুরস্ককে নেতৃত্ব দেবেন তিনি।
তুর্কিভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আনাদোলু এজেন্সির খবরে বলা হয়েছে, স্থানীয় সময় সকাল ৮টা থেকে শুরু হয়েছে ভোট গ্রহণ, যা বিকেল ৫টা পর্যন্ত চলবে। ভোট দিতে দেশটির ৬ কোটির বেশি মানুষ নিবন্ধন করেছেন। প্রথমবার ভোট দিচ্ছেন ৪ কোটি ৯০ লাখ মানুষ। ভোটারদের জন্য দেশজুড়ে ১ লাখ ৯১ হাজার ৮৮৫টি ব্যালট বাক্স প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
তুরস্কের সুপ্রিম ইলেকশন কাউন্সিলের মতে, ইতোমধ্যে তুরস্কের প্রবাসী এবং শুল্ক গেটে ১৮ লাখ ৯৫ হাজার নাগরিক আগাম ভোট দিয়েছেন।
প্রথম পর্বের ভোটে এগিয়ে থাকলেও নির্বাচিত হতে পারেননি তুরস্কের বর্তমান প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান। তুরস্কের নির্বাচনের নিয়ম অনুযায়ী প্রেসিডেন্টকে ৫০ শতাংশ সমর্থন পেতে হয়। গত ১৪ মে অনুষ্ঠিত হয় তুরস্কের প্রথম দফা নির্বাচন। সেই নির্বাচনে এরদোয়ান পেয়েছিলেন ৪৯ দশমিক ৫২ শতাংশ ভোট। অল্পের জন্য ঝুলে যায় তার ভাগ্য। অন্যদিকে এই নির্বাচনে এরদোয়ানের প্রধান প্রতিপক্ষ কিলিচদারোগলু পেয়েছিলেন ৪৪ দশমিক ৮৮ শতাংশ ভোট। ফলে দেশটির নিয়ম অনুযায়ী দ্বিতীয় দফায় নির্বাচন হয়।
ওই একই ভোটে তৃতীয় স্থান পেয়েছিলেন সিনান ওগান। তিনি পেয়েছিলেন ৫ দশমিক ২০ ভাগ ভোট। গত ২২ মে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে দ্বিতীয় দফা ভোটে এরদোয়ানকে সমর্থন করার কথা জানিয়েছেন তিনি।
এ বিষয়ে শনিবার এক টুইটবার্তায় বর্তমান প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান দেশটির জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, তুর্কির বিজয়ের জন্য আসুন আমরা একসঙ্গে ভোট দিতে যাই।
দেশটির অর্থনীতিও এই নির্বাচনের একটি বড় ফ্যাক্টর। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, গত বছর মূল্যস্ফীতি ৮৫ শতাংশে পৌঁছেছে। গত এক দশকে ডলারের বিপরীতে দেশটির মুদ্রা লিরার মান তার মূল্যের এক-দশমাংশে নেমে এসেছে। এ ছাড়া এরদোয়ানের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় সমালোচনা হচ্ছে, তার সরকার ভিন্নমতকে স্তব্ধ করে দিয়েছেন, তাদের অধিকারকে ক্ষুণ্ণ করছেন।
ইস্তাম্বুলের সাবাঙ্কি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক বিশ্লেষক বের্ক এসেন বলেছেন, “জাতীয়তাবাদী দল আইই পার্টির কেমালের একটি দূরত্ব তৈরি হয়েছে। এই দূরত্বের কারণে জাতীয়তাবাদী তার্কিসরা কেমালকে ভোট দেননি। কিছু তার্কিস বিশেষভাবে এরদোয়ানকে পছন্দ করেন না, অপরদিকে তারা আবার কুর্দিবিরোধী। এরদোয়ানকে পছন্দ না করলেও তারা কেমালকে ভোট দেননি কারণ তার সঙ্গে কুর্দিদের সখ্যতা রয়েছে।”
বিশ্লেষকদের ধারণা, এ রাউন্ডে ফেভারিট এরদোয়ান এবং তার বিজয়ের সম্ভাবনাও খুব বেশি।