আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের জন্য নিজস্ব মুদ্রা চালু ও রিজার্ভের ক্ষেত্রে ডলারের একাধিপত্য কমাতে চায় অনেক দেশ ও জোট। মার্কিন ডলারের একাধিপত্য রোধে ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকার জোট ব্রিকসে আরও ২৫ দেশ যোগ দিয়ে নতুন মুদ্রা গ্রহণ করতে প্রস্তুত।
যদি এতগুলো দেশ ডলার ত্যাগ করে এবং একটি নতুন মুদ্রা দিয়ে আন্তঃসীমান্ত লেনদেন শুরু করে, তবে তা হবে মার্কিন ডলারের ওপর একটি বড় আঘাত। এতে বিশ্বব্যাপী দুর্বল হতে পারে ডলার এবং এর ঘাটতি পুনরুদ্ধার করার কোনো উপায় খুঁজে পাওয়া কঠিন হবে। আন্তর্জাতিক জোট আসিয়ান ও জিসিসিও এখন এ প্রচেষ্টায় শামিল হয়েছে। ওয়াচারডট গুরু এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে।
ব্রিকসে যোগদানে আগ্রহী দেশগুলোর মধ্যে তেলসমৃদ্ধ দেশও রয়েছে। তারা ডলারের পরিবর্তে ইউরোপীয় দেশগুলোকে তেলের জন্য নতুন মুদ্রা দিয়ে অর্থ প্রদান করতে বাধ্য করতে পারে। আর এটি ঘটলে যুক্তরাষ্ট্রের অনেকগুলো খাতের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
এদিকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার (আসিয়ান) ১০টি দেশ বৈদেশিক বাণিজ্যে একটি নিজস্ব মুদ্রা চালু করতে সম্মত হয়েছে। তারাও মার্কিন ডলার নির্ভরতা কমাতে এ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। আসিয়ান অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক লেনদেনে স্থানীয় মুদ্রার ব্যবহারকে উৎসাহিত করছে। দেশগুলো হলো ব্রুনেই, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া, লাওস, মালয়েশিয়া, মিয়ানমার, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম।
আসিয়ানের পদক্ষেপ ডলার-নির্ভরতা কমাতে ও স্থানীয় মুদ্রাকে শক্তিশালী করতে চায় যেসব দেশ, সেগুলোর হাতকে শক্তিশালী করবে। ডলারের পরিবর্তে স্থানীয় মুদ্রায় বাণিজ্য সস্তা ও সহজ হবে। আসিয়ানের এ ঘোষণাকে সব সদস্য দেশ অনুমোদন করেছে।
ব্রিকস ও আসিয়ানের পর তেলসমৃদ্ধ উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদও (জিসিসি) ডলারকে বাদ দিয়ে বাণিজ্য করার চিন্তা করছে বলে জানা গেছে।
এদিকে বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে লেনদেনের ক্ষেত্রে নিজ নিজ মুদ্রা অর্থাৎ টাকা ও রুপি ব্যবহার করতে সম্মত হয়েছে।
আন্তদেশীয় লেনদেনের সুবিধার্থে বাংলাদেশের সোনালী ব্যাংক এবং ইস্টার্ন ব্যাংক, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া এবং আইসিআইসিআই ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খুলবে। ভারতের দুটি ব্যাংক ও বাংলাদেশের দুটি ব্যাংকে একই ধরনের অ্যাকাউন্ট খুলবে।
এছাড়া বাণিজ্য পরিচালনায় ডলারের ব্যবহার বাদ দিয়ে নিজস্ব মুদ্রায় দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বিষয়ে একটি চুক্তিতে পৌঁছেছে চীন ও ব্রাজিল।
গত মাসে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও ভ্লাদিমির পুতিন দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে জাতীয় মুদ্রা ব্যবহার আরও বৃদ্ধি করেছে। চীন-রাশিয়ার মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ বাণিজ্য হচ্ছে ইয়েনে। পুতিনও চীনের মুদ্রাকে বিশ্বব্যাপী ব্যবহারের আহ্বান জানান।
মূলত ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে মার্কিন ও পশ্চিমা শক্তি রাশিয়ার ওপর সর্বাত্মক বাণিজ্যিক অবরোধ আরোপ করে। তাদেরকে আন্তর্জাতিক লেনদেনের সুইফট সিস্টেম থেকে বিচ্ছিন্ন করার মাধ্যমে আটকে দেয় ইউএস ডলারের বিশাল বৈদেশিক রিজার্ভ। ফলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে রাশিয়া তাৎক্ষণিকভাবে ব্যাপক ক্ষতির শিকার হয়। তাদের মুদ্রার মানে ধস নামে।
রাশিয়া এই অবস্থা মোকাবিলার পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে রুবল ব্যবহারের বাধ্যবাধকতার ঘোষণা দেয়। রাশিয়ার বক্তব্য তাদের সঙ্গে বাণিজ্য করতে হলে রুবলের মাধ্যমেই করতে হবে। এই ঘোষণায় বিশ্ব নড়েচড়ে বসে এবং রুবলের দাম ঝটপট বেড়ে শক্তিশালী হয়ে ওঠে মুদ্রাটি।
অপরদিকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ডলারে রিজার্ভ কমিয়ে আনছে। ফলে দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পর বিশ্বে ডলারের যে একক আধিপত্য তৈরি হয়েছে সেটি শেষ হতে হয় খুব বেশি দিন নেই। গল্পের এখনেই শেষ নয়, শুরু মাত্র।