সামরিক মহড়া শেষ হলেও চীনা যুদ্ধবিমান ও নৌবাহিনীর জাহাজ এখনো তাইওয়ানকে ঘিরে অবস্থান করছে। তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় মঙ্গলবার (১১ এপ্রিল) এ কথা বলেছে। ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে। তাইওয়ান ঘিরে চীনের তিন দিনব্যাপী সামরিক মহড়া গতকাল সোমবার শেষ হয়। এই মহড়াকে ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ আচরণ অভিহিত করে চীনের সমালোচনা করেছেন তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ওয়েন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, মহড়া শেষ হলেও চীনা যুদ্ধবিমান ও নৌবাহিনীর জাহাজ তাইওয়ানকে ঘিরে অবস্থান করছে। চীনের কঠোর হুঁশিয়ারি উপেক্ষা করে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় দেশটির প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার কেভিন ম্যাকার্থির সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন সাই।
চীন গতকাল রাতে মহড়া শেষ হয়েছে বলে জানায়। কিন্তু তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, আজ সকালে তারা দ্বীপের চারপাশে চীনা নৌবাহিনীর জে-১৬ ও ইসইউ-৩০ সহ ২৬টি যুদ্ধবিমান ও ৯টি জাহাজ দেখেছে। এগুলো দ্বীপের চারপাশে যুদ্ধ প্রস্তুতির টহল দিচ্ছিল।
মন্ত্রণালয়টি আরও বলেছে, তাইওয়ানের বিমানবাহিনী, নৌবাহিনী ও উপকূলভিত্তিক ক্ষেপণাস্ত্র ক্রুরা নিবিড়ভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। পরিস্থিতি অনুযায়ী তারা পদক্ষেপ নিচ্ছেন।
অবশ্য তাইওয়ানের সরকার বারবারই চীনের এই সামরিক মহড়ার নিন্দা করেছে।
সোমবার মধ্যরাতের কিছু আগে নিজের ফেসবুক পেইজে সাই ইং-ওয়েন বলেন, প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি বিশ্বের কাছে তাইওয়ানের প্রতিনিধিত্ব করেন। যুক্তরাষ্ট্রে যাত্রাবিরতিসহ তার বিদেশ সফর নতুন নয়। কিন্তু চীন সামরিক মহড়া শুরুর জন্য এই বিষয়কে ব্যবহার করেছে। চীনের এই মহড়া তাইওয়ানসহ এই অঞ্চলে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করেছে। এই অঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশের (চীন) এমন আচরণ দায়িত্বশীল নয়।
সর্বশেষ এই সামরিক মহড়ার সময় নির্ভুল আক্রমণ এবং তাইওয়ানকে চারদিক থেকে অবরোধের অনুকরণ করে চীন। এ সময় সেখানে কয়েক ডজন যুদ্ধবিমান এবং বোমারু বিমানও পাঠায় বেইজিং। তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সোমবার ৯১টি চীনা সামরিক বিমান দ্বীপের চারপাশে উড্ডয়ন করেছে।
চীনের একাডেমী অব মিলিটারি সায়েন্সেসের কর্মকর্তা ঝাও জিয়াওঝুও চীনা রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যম গ্লোবাল টাইমসকে দিন দু’য়েক আগে বলেন, “চীন এই প্রথম তাইওয়ানের লক্ষ্যবস্তুতে হামলার আদলে মহড়া চালাচ্ছে।”
তাইওয়ানের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোর পাশাপাশি বিমানবন্দরের রানওয়ে, সামরিক স্থাপনা ও অন্যান্য লক্ষ্যবস্তু ‘প্রয়োজনে এক হানায় ধ্বংস করা’ হবে বলে সেসময় জানান ঝাও।
চীনের সামরিক মহড়ায় উদ্বেগ জানিয়েছে জাপান। দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়াসুকাজু হামাদা আজ এ বিষয়ে তার প্রতিক্রিয়া জানান। তিনি চীনের সামরিক মহড়াকে ‘ভীতিকর প্রশিক্ষণ’ হিসেবে বর্ণনা করেন।
হামাদা সাংবাদিকদের বলেন, “চীন সামরিক মহড়ার মাধ্যমে তাইওয়ান ইস্যুতে একটি ‘আপসহীন মনোভাব’ দেখিয়েছে বলে মনে হচ্ছে।”
তাইওয়ান ইস্যুতে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর দীর্ঘদিন ধরেই উত্তেজনা চলছে। তাইওয়ান পূর্ব এশিয়ার একটি দ্বীপ, যা তাইওয়ান প্রণালীর পূর্বে চীনা মূল ভূখণ্ডের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে অবস্থিত। অবশ্য তাইওয়ানকে বরাবরই নিজেদের একটি প্রদেশ বলে মনে করে থাকে বেইজিং।
অন্যদিকে চীনের প্রদেশ নয়, বরং নিজেকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র বলে মনে করে থাকে তাইওয়ান। তাইওয়ানের ভাষ্য, দেশের ভবিষ্যৎ তার জনগণের হাতেই থাকবে। তবে তাইওয়ানকে চীনের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত করতে বেইজিংয়ের চেষ্টার কমতি নেই।