চরম অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে রয়েছে মিশর। ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি মার্চ মাসে ৩০ শতাংশের উপরে চলে গিয়েছে। পরিস্থিতি এমন এক পর্যায়ে চলে গিয়েছে যে পরিবারের মুখে খাবার তুলে দেওয়ার জন্য প্রতিদিন লড়াই করতে হচ্ছে। এ অবস্থার মধ্যে প্রোটিনের চাহিদা পূরণে মুরগির পা রান্না করে খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে দেশটির সরকার। আর এ নিয়ে ব্যাপক ক্ষোভ ও সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
রোববার (১৯ মার্চ) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশটিতে মুরগি কিংবা পাখির প্রোটিন সমৃদ্ধ এ অংশটি সাধারণত কুকুর বা বিড়ালের জন্য বরাদ্দ থাকে। রাজ্যের সর্বশেষ পুষ্টি পরামর্শে মুরগির পা রান্না করে খেতে বলা হয়েছে।
অর্থনৈতিক সংকটে দেশটির অবস্থা এতোটাই বিপর্যস্ত হয়েছে যে, রান্নার জন্য তেল কিংবা পনিরের মতো উপকরণ যেগুলো আগে মৌলিক হিসেবে বিবেচনা করা হতো তা এখন বিলাসিতা হয়ে উঠেছে। কিছু পণ্যের দাম কয়েক মাসের মধ্যে দ্বিগুণ বা তিনগুণ বেড়েছে।
ষাট বছর বয়সী তিন সন্তানের মা ওয়েদাদ বলেন, “আমি মোটেই মাংস কিনি না। মাসে একবার মাংস খাই। সপ্তাহে একবার মুরগি কিনি।”
তিনি আরও বলেন, “আজকাল একটি ডিমও ৫ মিশরীয় পাউন্ডে (১৭ টাকা) বিক্রি হয়।”
বিবিসি বলছে, মিশরের এ অবস্থার পেছনে অন্যতম প্রধান কারণ হলো বিশাল জনসংখ্যাকে (১০ কোটি) খাওয়ানোর জন্য তারা দেশীয় কৃষি অর্থাৎ নিজস্ব উৎপাদনের পরিবর্তে আমদানি করা খাদ্যশস্যের উপর খুব বেশি নির্ভর করে।
গত এক বছরে ধারাবাহিকভাবে মিশরীয় পাউন্ড মার্কিন ডলারের তুলনায় অর্ধেক মূল্য হারিয়েছে। ফলে খাদ্যশস্যের আমদানি ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে।
ওয়েদাদ জানান, এক বছর আগে পেনশন হিসেবে মাসিক ৫ হাজার মিশরীয় পাউন্ড দিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে জীবনযাপন করতেন। নিজেকে মধ্যবিত্ত হিসাবে তুলে ধরেন তিনি।
তিনি হাসির সঙ্গে জানান, একজন বিক্রেতা আমাকে এক কেজি মুরগির ফিললেটের (শুধু মাংস) দাম ১৬০ মিশরীয় পাউন্ড (৫৫৫ টাকা) বলেছে। অন্যরা বলেছেন ১৭৫, ১৯০ এমনকি ২০০ মিশরীয় পাউন্ড। মুরগির পা ৯০ মিশরীয় পাউন্ড। এমনকি মুরগির হাড়ও এখন বিক্রি হয়।”
দেশটির প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল সিসি দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক দুর্দশার জন্য ২০১১ সালের মিশরীয় অভ্যুত্থান এবং দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধিকে দায়ী করেন। এছাড়া তিনি করোনা ভাইরাস মহামারী ও ইউক্রেন যুদ্ধকেও দায়ী করেছেন।
গত বছরের মার্চে ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক আগ্রাসনের কারণে মিশরের অর্থনীতি মারাত্মক হুমকির মুখে পড়ে। মিশর হল বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম গম আমদানিকারক দেশ। যার প্রধান সরবরাহকারী রাশিয়া ইউক্রেন। যুদ্ধের কারণে রপ্তানি ব্যাহত হলে গমের দাম বেড়ে যাওয়ায় রুটির দামও বেড়ে গিয়েছে।