ইসরায়েলের প্রধান অস্ত্র সরবরাহকারী দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। দুই দেশের মধ্যে দশ বছর মেয়াদি সামরিক অস্ত্র সরবরাহে চুক্তি হয়েছে। ২০১৮ থেকে ২০২৮ সাল পর্যন্ত ৩৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার দামের সামরিক অস্ত্র কেনাবেচা করবে তারা। এর মধ্যে রয়েছে ৩৩ বিলিয়ন ডলার অনুদানসহ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার জন্য ৫ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি।
তবে হঠাৎ করেই শক্তিশালী ও বাঙ্কার উড়িয়ে দিতে সক্ষম বোমার ইসরায়েলি একটি চালান স্থগিত করেছে ওয়াশিংটন। শুধু তাই নয়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সিএনএনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন ইসরায়েলকে। বলেছেন, দেশটির সামরিক বাহিনী যদি গাজার রাফাহ শহরে হামলা চালায়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র অস্ত্র সরবরাহ একেবারেই বন্ধ করে দেবে।
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, যুদ্ধের শুরু থেকেই গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে এ ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করে হামলা চালিয়ে আসছে ইসরায়েল। তাদের নির্বিচার বোমা হামলায় এ পর্যন্ত প্রায় ৩৫ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো বলছে, ইসরায়েলের বোমা হামলায় ও স্থল অভিযানে গাজায় যারা প্রাণ হারিয়েছেন, তাদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক।
ইসরায়েলে সবচেয়ে বেশি অস্ত্র সরবরাহকারী দেশ যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি যখন অস্ত্রের চালান স্থগিত করেছে তখনই প্রশ্ন উঠেছে, আর যেসব দেশ ইসরায়েলকে অস্ত্র দেয় তারা কী সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে? এ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দীর্ঘদিন ধরেই মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইসরায়েলে প্রধান অস্ত্র সরবরাহকারী তার ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্র। এরপরই রয়েছে জার্মানি। তারপর ইতালি। অবশ্য তালিকায় থাকা কানাডা ও নেদারল্যান্ডস আন্তর্জাতিক মানবিক আইন লঙ্ঘন করার শঙ্কায় আগেই অস্ত্রের চালান স্থগিত করেছে। তাহলে বাকি দেশগুলো ইসরায়েলে অস্ত্র সরবরাহ নিয়ে কী ভাবছে?
ব্রিটেন: যুক্তরাষ্ট্রের মতো সরাসরি ইসরায়েলে অস্ত্র চালান না দিয়ে বরং ব্রিটিশ সরকার তাদের কোম্পানিগুলোকে অস্ত্রের বিভিন্ন উপকরণ বিক্রির লাইসেন্স দিয়ে থাকে। গেল বছর ইসরায়েলে অন্তত ৪২ মিলিয়ন পাউন্ড (৫২.৫ মিলিয়ন ডলার) মূল্যের প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম রপ্তানির লাইসেন্স অনুমোদন দেয় ব্রিটেন। এর মধ্যে রয়েছে যুদ্ধাস্ত্র, চালকবিহীন বিমান, ছোট অস্ত্র, গোলাবারুদ ও বিমান, হেলিকপ্টার, অ্যাসল্ট রাইফেল তৈরির উপকরণ।
ইতালি: গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই ইতালি নতুন করে ইসরায়েলে অস্ত্র রপ্তানির অনুমোদন স্থগিত করেছে। তবে আগের চুক্তির আলোকে ইসরায়েলে অস্ত্র সরবরাহ অব্যাহত রেখেছে ইতালি। তবে রয়টার্সকে ইতালির একটি সূত্র জানিয়েছে, দুই দেশের মধ্যে সবকিছু বন্ধ রয়েছে। গত নভেম্বরের সর্বশেষ চালান সরবরাহ করা হয়েছে।
দেশটির আইন বলছে, যেসব দেশে যুদ্ধ চলছে আর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে বলে মনে হচ্ছে, সেসব দেশে অস্ত্র রপ্তানি নিষিদ্ধ। গেল মার্চে প্রতিরক্ষামন্ত্রী গুইদো ক্রোসেত্তো বলেছিলেন, গাজায় বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হবে না, সেটি নিশ্চিত হওয়ার পরই আগে হওয়া চুক্তির আওতায় ইসরায়েলে অস্ত্র সরবরাহ অব্যাহত রেখেছে। সূত্রমতে, ২০২২ সালের তুলনায় গত ডিসেম্বরেই ইসরায়েলে তিনগুণ পরিমাণ অর্থাৎ ১.৩ মিলিয়ন ইউরো মূল্যের অস্ত্র সরবরাহ করেছে ইতালি।
জার্মানি: আগের বছরের তুলনায় ২০২৩ সালে ১০ গুণ বাড়িয়ে ইসরায়েলে ৩২৬.৫ মিলিয়ন ইউরো (৩৫১ মিলিয়ন ডলার) মূল্যের প্রতিরক্ষা রপ্তানির অনুমোদন দিয়েছে জার্মানি। তবে এ বছরের শুরুতে গাজা যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ায় জার্মান সরকার ইসরায়েলে অস্ত্র রপ্তানির অনুমোদন কমিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। অর্থনীতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে গত ১০ এপ্রিল জানানো হয়, তখন পর্যন্ত মাত্র ৩২ হাজার ৪৪৯ ইউরো মূল্যের অস্ত্র সরবরাহের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র: ইসরায়েলে পাঠাতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্র অস্ত্রের যে চালানটি স্থগিত করেছে, তার মধ্যে কয়েক কোটি ডলারের বোমা রয়েছে। যদিও ট্যাঙ্ক গোলা ও গোলাবারুদসহ কয়েক বিলিয়ন ডলার মূল্যের অস্ত্র সরবরাহের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। তবে সেই অনুমোদন প্রক্রিয়াও অনেকটা ধীর হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছেন সিনেট ফরিন রিলেশন কমিটির শীর্ষ রিপাবলিকান নেতা সিনেটর জিম রিশ। তবে স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এসআইপিআরআই) দেয়া তথ্য থেকে জানা গেছে, ২০১৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ৬৯ শতাংশ সামরিক সহযোগিতা পেয়েছে ইসরায়েল।