মিয়ানমারের পূর্বাঞ্চলের একটি এলাকায় বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের বর্ষবরণ উদ্যাপনের অনুষ্ঠানে সিরিজ গাড়ি বোমা বিস্ফোরণে অন্তত চারজন নিহত হয়েছেন। বিস্ফোরণে আরও অন্তত এক ডজন আহত হয়েছেন বলে বৃহস্পতিবার (১৩ এপ্রিল) স্থানীয় একজন উদ্ধারকর্মী ও নিরাপত্তা সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে। এতে বলা হয়, বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের বর্ষবরণ উদ্যাপনের অনুষ্ঠানে সিরিজ গাড়ি বোমা বিস্ফোরণে চারজন নিহত এবং এক ডজন আহত হয়েছেন। সেখানকার একটি বৌদ্ধমন্দিরে শত শত মানুষ যখন জড়ো হন, তখন এই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ২০২১ সালে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাসীন সরকারকে হটিয়ে সেনাবাহিনী ক্ষমতায় আসার পর থেকে দেশটিতে ব্যাপক অস্থিতিশীলতা চলছে। দেশটিতে প্রায়ই সামরিক বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে জান্তাবিরোধীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে।
দেশটির মধ্যাঞ্চলের এক এলাকায় সামরিক বাহিনীর বিমান হামলায় ১৩০ জনের প্রাণহানির ঘটনার দুদিন পর বৃহস্পতিবার এই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটল।
মিয়ানমারের বৌদ্ধধর্মাবলম্বীরা নতুন বছর উপলক্ষে সাধারণত আনন্দ উল্লাসের সঙ্গে থিংয়ান উৎসব পালন করে থাকেন। এ সময় একে অপরের দিকে পানি ছুড়ে আনন্দ করেন তারা। কিন্তু অভ্যুত্থানের পর দেশটিতে এই উৎসবকে রাজনীতিকরণ করা হয়েছে। দেশটির গণতন্ত্রপন্থীরা জান্তা-সমর্থিত এই অনুষ্ঠান বর্জনের আহ্বান জানিয়ে আসছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরের কিছুক্ষণ আগে পূর্বাঞ্চলীয় শান রাজ্যের লাশিও শহরের ইয়ান টাইং অং বৌদ্ধমন্দিরের কাছে বিস্ফোরণে অন্তত তিনটি গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে জানানো হয়েছে।
‘বিস্ফোরণস্থলে চারজন নিহত হয়েছেন,’ বলেছেন লাশিওর একজন উদ্ধারকর্মী। মৃত ও আহতদের ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধারের কাজ করেছেন তিনি।
ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপিকে তিনি বলেছেন, বিস্ফোরণে অন্তত ১২ জন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। আহতদের উদ্ধারের পর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
দেশটির একটি নিরাপত্তা সূত্র বিস্ফোরণে নিহতের সংখ্যা নিশ্চিত করেছে। ওই সূত্র এএফপিকে বলেছে, ওই এলাকায় আরও বিস্ফোরক আছে কি না, তা জানতে অভিযান শুরু করেছে।
তবে এখন পর্যন্ত কোনো গোষ্ঠী এই বিস্ফোরণের দায় স্বীকার করেনি।
এর আগে গত মঙ্গলবার মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিমান হামলায় ১৩৩ জন নিহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে অনেক নারী ও শিশুও রয়েছে। সেনা শাসনের বিরোধীদের আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া এসব মানুষের ওপর গত মঙ্গলবার বোমা হামলা চালায় সামরিক বাহিনী।
এ ছাড়া গত এক সপ্তাহে পিপলস ডিফেন্স ফোর্সেস (পিডিএফ) ও সশস্ত্র জাতিগত গোষ্ঠী দেশজুড়ে বিভিন্ন স্থানে হামলা করে অন্তত ১১৪ জন সরকারি সেনাকে হত্যা করেছে। পিডিএফ ও সশস্ত্র গোষ্ঠী যৌথভাবে সরকারের বর্ডার গার্ড ফোর্সেসের (বিজিএফ) ওপর একাধিক হামলা চালিয়েছে। কারেন রাজ্যের মিওয়াদি টাউনশিপে এই হামলা চালানো হয়।
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে মিয়ানমারে সামরিক বাহিনী নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে। এ ছাড়া নোবেলজয়ী সু চিকে গ্রেপ্তার করা হয়। সে সময় জান্তা সরকার ক্ষমতা দখল করলেও দেশটির সিংহভাগ জনগণ বিষয়টি মেনে নেয়নি। রাস্তায় বিক্ষোভ, সরকারি কার্যক্রম বর্জনসহ সশস্ত্র বিদ্রোহের মাধ্যমে জান্তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরু করে দেশটির বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। এতে এখন পর্যন্ত দুই হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন।
আহত হয়েছেন আরও অনেকে। অভিযান চালিয়ে অনেককে আটক করারও অভিযোগ ওঠে। বহু মানুষ ঘরছাড়া হয়েছেন দেশটির সেনাদের নির্যাতনে। শুধু তা-ই নয়, সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে মিয়ানমারের অর্থনীতি। এখনো প্রায় বিদ্রোহী গোষ্ঠী ও জান্তা বাহিনীর সদস্যদের লড়াইয়ের খবর পাওয়া যায়।