দাবানলে পুড়ছে কানাডা। হাজার হাজার কানাডীয় নাগরিক বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন। ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়েছে প্রতিবেশী যুক্তরাষ্ট্রেও। নিউইয়র্কসহ দেশটির পূর্ব উপকূল রেকর্ড পরিমাণ ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে।
এ অবস্থায় গতকাল বুধবার বায়ুদূষণ নিয়ে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। নিউইয়র্ক সিটির বাসিন্দাদের বাড়ির বাইরে বের না হতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ঘরের দরজা জানালা বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। পাবলিক স্কুলগুলোতে বাতিল করা হয়েছে বাইরের কার্যক্রম। লাখো মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর দাবানলের প্রভাব নিয়ে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এদিকে এই পরিস্থিতিতে কানাডাকে সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছেন বাইডেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সঙ্গে আলাপকালে দেশটির ‘বিধ্বংসী’ দাবানল নিয়ন্ত্রণে সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছেন।
সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান, আল-জাজিরা পৃথক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, দাবানল নিয়ন্ত্রণে অগ্নিনির্বাপক কর্মীদের আপ্রাণ চেষ্টার পরও এখন পর্যন্ত ৩ দশমিক ৮ মিলিয়ন হেক্টরের বেশি এলাকা পুড়ে গেছে। ২০ হাজারের বেশি মানুষ বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। কুইবেক প্রদেশের বাসিন্দা রয়েছেন ১১ হাজার।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এক টুইটে জানিয়েছেন, কানাডায় দাবানল নিয়ন্ত্রণে তার দেশের ফায়ার সার্ভিসের ছয় শতাধিক কর্মী এবং সংশ্লিষ্ট কর্মী নিয়োগ করা হয়েছে।
দাবানলের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের স্বাস্থ্যে দীর্ঘ মেয়াদে প্রভাব পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এই সপ্তাহে সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করা ছবিগুলোতে দেখা যায়- অটোয়া, মন্ট্রিল ও টরন্টোর আকাশে কমলা রং। যেখানে সিএন টাওয়ার ও কানাডার বৃহত্তম শহর ডাউনটাউন স্কাইলাইনের ওপর ঘন কুয়াশা দেখা যায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে চলেছে। কর্তৃপক্ষকে এ সমস্যা সমাধানে আরও ভালোভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে।
এক সাক্ষাৎকারে ক্লাইমেট অ্যাকশন নেটওয়ার্ক কানাডার নির্বাহী পরিচালক ক্যারোলিন ব্রুইলেট বলছেন, এখানে এখন জলবায়ু সংকট ঘটছে। খুব ধোঁয়াটে আকাশে ভয়ংকর দৃশ্য তৈরি হয়েছে। কাঠ পোড়ানোর গন্ধও আছে।
এদিকে কানাডার দাবানলের ধোঁয়া মে মাস থেকে দক্ষিণে যুক্তরাষ্ট্রে চলে আসছে। পশ্চিমের প্রদেশগুলো থেকে পূর্বে নোভা স্কটিয়া এবং কুইবেক পর্যন্ত ছড়িয়েছে ধোঁয়া। কয়েকটি বড় শহরের আকাশ ঘোলাটে বাদামি রং ধারণ করে। বাতাসে ক্ষতিকারক দূষণ ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। নিউইয়র্ক, ম্যাসাচুসেটস, কানেকটিকাটসহ পূর্বের রাজ্যগুলোতে বায়ু মানের সতর্কতা জারি করা হয়েছে। উত্তর আমেরিকার লাখো মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর দাবানলের প্রভাব নিয়ে আশঙ্কা করা হচ্ছে। নিউইয়র্ক সিটির বাসিন্দাদের বাড়ির বাইরে বের না হতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। পাবলিক স্কুলগুলোতে বাতিল করা হয়েছে বাইরের কার্যক্রম।
আইকিউ এয়ারের মতে, বুধবার নিউইয়র্ক সিটির বায়ুর মান বিশ্বের যেকোনো বড় শহরের চেয়ে খারাপ ছিল। দ্বিতীয় সবচেয়ে খারাপ ছিল পাকিস্তানের লাহোর। যেখানে পরবর্তী বায়ুমানে সবচেয়ে খারাপ মার্কিন শহর ডেট্রয়েট, মিশিগান ছিল ১৩তম স্থানে।
যুক্তরাষ্ট্রের পরিবেশ সুরক্ষা সংস্থা (ইপিএ) জানিয়েছে, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলসহ পশ্চিমের শিকাগো ও দক্ষিণের আটলান্টা পর্যন্ত ১০ কোটির বেশি মানুষ বায়ুদূষণ নিয়ে জারি করার সতর্কতার আওতায় পড়েছে। এ অবস্থায় মেয়র এরিক অ্যাডামস নগরবাসীকে ঘর থেকে বের না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ধোঁয়ার কারণে বিমান ওঠানামায় দেরি হয়। আগে থেকে নির্ধারণ করা বিভিন্ন খেলার ম্যাচ স্থগিত করা হয়।
গত শতকের ষাটের দশকের পর নগরবাসী সবচেয়ে দূষিত বায়ুর মুখে পড়েছে বলে উল্লেখ করেছেন নিউইয়র্কের জনস্বাস্থ্যবিষয়ক কমিশনার আসউইন ভাসান। আর নিউইয়র্কের গভর্নর ক্যাথি হোচুল বিদ্যমান পরিস্থিতিকে ‘জরুরি অবস্থা’ অভিহিত করেছেন।
নিউইয়র্ক সিটির মেয়র এরিক অ্যাডামস বলছেন, “ধোঁয়াটে কুয়াশা আকাশকে অস্পষ্ট করে রেখেছে। আমরা এটি দেখতে পাচ্ছি, ধোঁয়াটে গন্ধ পাচ্ছি। এটি উদ্বেগজনক। এটি আমাদের শহরের জন্য একটি নজিরবিহীন ঘটনা। নিউইয়র্কবাসীদের অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। তিনি নগরের বাসিন্দাদের বাসার ভেতরে থেকে দরজা জানালা বন্ধ করে রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। মানুষজনকে বাড়ির বাইরে কম বের হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।”
অ্যাডামস বলেন, “যদিও প্রথমবার আমরা এই মাত্রায় এ রকম কিছু অনুভব করেছি। তবে এটি শেষ নয়। জলবায়ু পরিবর্তন এই পরিস্থিতিকে ত্বরান্বিত করেছে। আমাদের অবশ্যই বায়ুর মান উন্নত করতে হবে।”
এরিক অ্যাডামস বলেন, যাদের আগে থেকে হার্ট বা শ্বাসকষ্টের সমস্যা, সেই সঙ্গে শিশু ও বয়স্কদের এই সময়ে বাড়ির ভেতরে থাকা উচিত।
বাইডেন এক টুইট বার্তায় জানিয়েছেন, দাবানল নিয়ন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্র ফায়ার সার্ভিসের ছয় শতাধিক কর্মী এবং সংশ্লিষ্ট লোকবল নিয়োগ দিয়েছে।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো জানিয়েছেন, কানাডা এর আগে এত ভয়াবহ দাবানলের কবলে পড়েনি।