বোমা হামলার হুমকিতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে ভারতের বিমান পরিবহন খাত। দফায় দফায় হুমকিতে তৈরি হয়েছে অস্থিরতা। যাত্রী ছাড়াও বিমান পরিবহনে জড়িত কর্মকর্তা ও কর্মীদের মধ্যে ব্যাপকমাত্রার আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। অসংখ্য আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বিলম্বিত হচ্ছে, অনেকগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। গেল দুই মাসে ৬ শতাধিক ফ্লাইটে বোমা হামলার হুমকি পেয়েছে ভারতের একাধিক বিমান সংস্থা।
শুধু চলতি নভেম্বরের গত দুই সপ্তাহে পাঁচ শতাধিক ফ্লাইটে বোমা থাকার হুমকির তথ্য ছড়িয়েছে। গেল সপ্তাহে কলকাতা বিমানবন্দরে আসা-যাওয়ার অন্তত সাতটি ফ্লাইটে বোমাতঙ্ক ছড়ায়। যদিও পরে দেখা যায়, সব ফ্লাইটেই বোমা রাখার তথ্য ভুয়া।
এমন পরিস্থিতির মধ্যেই বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) আবারও বোমা হামলার হুমকি পেয়েছে ভারতীয় সংস্থা ইন্ডিগোর একটা বিমান। ভারতীয় বার্তাসংস্থা পিটিআইয়ের বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দু জানায়, মহারাষ্ট্র রাজ্যের নাগপুর থেকে কলকাতায় আসার পথে বিমানটিতে বোমাতঙ্ক ছড়ায়। তড়িঘড়ি করে যাত্রী ও ক্রুসহ সবমিলিয়ে ১৯৩ জন আরোহী নিয়ে বিমানটিকে ছত্তীসগঢ়ের রায়পুর বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণ করানো হয়। পরে তল্লাশি চালানো হয়।
এভাবে একের পর এক বিমানে বোমাতঙ্কের ঘটনায় উদ্বেগ বেড়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের। নরেন্দ্র মোদি সরকারের পক্ষ থেকে এই বিষয়ে একাধিক পদক্ষেপও নেওয়া হয়েছে। কারা এই ভুয়া খবর ছড়াচ্ছেন, তাদের খোঁজে তল্লাশি অভিযানও চালানো হচ্ছে।
এর আগের মাসে ১৩ অক্টোবর থেকে ২০ অক্টোবর পর্যন্ত মাত্র সাতদিনে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক মিলিয়ে ভারতের বিভিন্ন বিমান সংস্থার বিমান উড্ডয়নকালে ৭০টিরও বেশি বোমা হামলার হুমকি আসে। এর মধ্যে শুধু ২০ অক্টোবর দিনই ৩০টি ফ্লাইটে ভূয়া বোমা হামলার হুমকি আসে। ওইদিনের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরে প্রতিবেদন প্রকাশ করে এএফপি।
তবে ভারতীয় বিমান সংস্থাগুলোর বিভিন্ন ফ্লাইটে বোমা হামলার হুমকি বিষয়ে সরকারি কোনো তথ্য প্রকাশ না করলেও টাইমস অব ইন্ডিয়া ও নিউজ১৮ এ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। যেসব প্রতিবেদনে উঠে আসে, উপর্যুপরি বোমা হামলার হুমকির কারণে ভারতীয় বিভিন্ন সংস্থার ফ্লাইট শিডিউল ও উড্ডয়ন খরচে চরম নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া পড়েছে। ভারতে এক অপ্রাপ্তবয়স্ক হুমকিদাতাকে গ্রেপ্তার করার পরও বন্ধ হয়নি হুমকি আসা।
ভারত সরকার ও বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ হুশিয়ারি দিয়েছে, দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ‘অত্যন্ত কঠোর পদক্ষেপ’ নেওয়া হবে। এর আগে ভারতের বিমান পরিবহনমন্ত্রী রাম মোহন নাইডু বলেন, ‘ফ্লাইট চলাচলে বিঘ্নের জন্য দায়ী সকল ব্যক্তিকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে।’
গেল মাসে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সামাজিক মাধ্যম এক্সের একটি অ্যাকাউন্ট থেকে গেল মাসের ১৮ ও ১৯ অক্টোবর দুদিনে অন্তত ৪০টি ফ্লাইটে বোমা হামলা চালানোর হুমকি দেওয়া হয়। যার মধ্যে ভারতের বিভিন্ন শহরে ও নিউজিল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো গন্তব্যের ফ্লাইটও অন্তর্ভুক্ত ছিল।
হুমকি আসা সেই অ্যাকাউন্টটি পরে স্থগিত করা হয়। যার একটি মেসেজের বর্ণনা দিয়েছে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস। হুমকি বার্তায় বলা হয়, ‘উড়োজাহাজের ভেতর বোমা পেতে রাখা হয়েছে…কেউ জীবিত বের হয়ে আসতে পারবেন না। দ্রুত উড়োজাহাজটি থেকে সবাইকে বের করে আনুন।’
বিঘ্নিত ফ্লাইটগুলোর মধ্যে অন্যতম এয়ার ইন্ডিয়ার মুম্বাই থেকে নিউইয়র্কের ফ্লাইট। পরিশেষে ১৯ অক্টোবর ফ্লাইটটি নিরাপদে গন্তব্য পৌঁছালে মার্কিন নিরাপত্তা কর্মকর্তারা এতে তল্লাশি চালান।
এর আগে ১৫ অক্টোবর হুমকি পেয়ে এয়ার ইন্ডিয়ার নয়াদিল্লি-শিকাগো ফ্লাইটটি কানাডার উত্তরাঞ্চলীয় শহর ইকালুইটে জরুরি অবতরণ করতে বাধ্য হয়। পরবর্তীতে, কানাডার বিমানবাহিনী যাত্রীদের গন্তব্যে নিয়ে যায়। একইদিন এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের একটি উড়োজাহাজ সিঙ্গাপুরে অবতরণের সময় পাহারা দিতে চারপাশে যুদ্ধ বিমান ওড়ানো হয়।
একই কায়দায় এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং ৭৭৭-৩০০ উড়োজাহাজটি হুমকি পাওয়ার পর ব্রিটিশ আরএএফ ফাইটার জেটের সহায়তায় লন্ডনে অবতরণ করে। ১৮ অক্টোবর ভিস্তারা এয়ারলাইন্সের নয়াদিল্লি থেকে লন্ডনগামী ফ্লাইট জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্টে অবতরণ করতে বাধ্য হয়।
বোমা হামলার হুমকিতে নিউইয়র্কগামী এয়ার ইন্ডিয়ার একটি ফ্লাইট নেমে পড়ে দিল্লিতে। তবে হুমকি পেলেও, সবগুলো ফ্লাইটই নিরাপদে অবতরণ করে। শুধু ঝুঁকির কারণে ফ্লাইটের গতিপথ বদলে কানাডা ও জার্মানিতে পাঠানো হয়। যুক্তরাজ্য ও সিঙ্গাপুরের আকাশে যুদ্ধবিমানের প্রহরায় কয়েকটি ফ্লাইট অবতরণ করে।
প্রসঙ্গত, গত দুই মাস ধরে ধারাবাহিকভাবে ভারতের বিভিন্ন বিমান সংস্থার কাছে বোমা হামলার হুমকি পাঠানো হচ্ছে। অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট তো বটেই, আন্তর্জাতিক ফ্লাইটেও ছড়ানো হচ্ছে বোমাতঙ্ক। গত দুই মাসে অর্ধসহস্রাধিক ফ্লাইটে বোমা থাকার হুমকির তথ্য ছড়িয়েছে।