ভারত আর যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক দিন দিন আরও জোরালো হয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে ভিন্নতা আর উত্তেজনা থাকলেও গত দুই দশক ধরে সম্পর্ককে আরও এগিয়ে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি রয়েছে ওয়াশিংটন ও নয়াদিল্লির। তবে উত্তেজনাহীন এই সম্পর্কের মধ্যে হঠাৎ করেই যেন বোমা ফাটাল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর ও ‘ডিপ স্টেটের’ (কোনো দেশের সরকারের ওপর গোপনে নিয়ন্ত্রণ করা সরকারি বা সামরিক কর্মকর্তাদের সংঘ) বিভিন্ন শক্তি ভারতকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে বলে হঠাৎ অভিযোগ আনল ভারতের ক্ষমতাসীন দলটি। শুধু তাই নয়, দলটি এজন্য আঙ্গুল তুলল ভারতের একদল অনুসন্ধানী সাংবাদিক এবং বিরোধী দলীয় নেতা রাহুল গান্ধীর দিকে।
নয়াদিল্লি আর ওয়াশিংটনের মধ্যে জোরালো সম্পর্কের মধ্যেই এমন অভিযোগ বিস্ময়কর বলে মনে করছেন কূটনীতিকরা। এ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে লন্ডনভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্স। যুক্তরাষ্ট্র, বিরোধী নেতা আর সাংবাদিকদের প্রতি এমন সন্দেহজনক অভিযোগ বিজেপি নিয়ে আলোচনা সমালোচনা শুরু হয়েছে।
বিজেপির আরও অভিযোগ, ভারতের আদানি শিল্পগোষ্ঠী এবং তাদের সঙ্গে বিজেপি সরকারের ঘনিষ্ঠতা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন রিপোর্টিং প্রজেক্ট (ওসিসিআরপি)। যেখানে বলা হয়, ২৬ কোটি ৫০ লাখ ডলার ঘুষ-কাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে আদানি শিল্পগোষ্ঠীর প্রধান গৌতম আদানিসহ আটজনকে অভিযুক্ত করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের আদালত।
শুধু তাই নয়, ইসরায়েলের তৈরি পেগাসাস স্পাইওয়্যার ব্যবহার করে ভারত সরকারের সমালোচকদের ওপর নজরদারির অভিযোগ আনা হয়। ওসিসিআরপির এই প্রতিবেদনে নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে রাহুল গান্ধীর কংগ্রেস দল ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ করে বিজেপি। তবে আদানির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগকে ভিত্তিহীন দাবি করছে আদানি গ্রুপ। একই সঙ্গে ভারত সরকারও সব অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে ধারাবাহিকভাবে যেসব পোস্ট করেছে বিজেপি, তাতে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে লক্ষ্যবস্তু করার মাধ্যমে ভারতকে অস্থিতিশীল করার স্পষ্ট লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে চলেছে ডিপ স্টেট।’ এই এজেন্ডার পেছনে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর। এই এজেন্ডা পূরণে ওসিসিআরপি মাধ্যম হিসেবে কাজ করেছে।
গত বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিজেপির মুখপাত্র সম্বিত পাত্র বলেন, ফ্রান্সের একটি অনুসন্ধানী গণমাধ্যম গোষ্ঠী জানিয়েছে, ওসিসিআরপির ৫০ শতাংশ অর্থায়ন সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে আসে।
তবে এক বিবৃতিতে ওসিসিআরপি দাবি করেছে, তারা স্বাধীন গণমাধ্যম। তাদের সঙ্গে কোনো রাজনৈতিক দলের সংশ্লিষ্টতা নেই। যুক্তরাষ্ট্র সরকার ওসিসিআরপিতে কিছু অর্থায়ন করে থাকে। তবে গণমাধ্যমটির সম্পাদকীয় নীতি ও প্রতিবেদনের ওপর তাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই।