ভারতকে নতুন কিছু চেষ্টার ‘ল্যাবরেটরি’ বলে আখ্যা দিয়েছেন মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস। বলেছেন, “ভারত আসলে একটি ল্যাবরেটরি, যেখানে নানারকম ট্রায়ালের পরে তার ফলাফল অন্যত্র প্রয়োগ করা যায়।”
সম্প্রতি এক পডকাস্টে ভ্যাক্সিনের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল নিয়ে কথা বলতে গিয়ে এমন মন্তব্য করেন বিল গেটস। লিঙ্কডইন-এর প্রতিষ্ঠাতা রেইড হফম্যানের সঙ্গে করা সেই পডকাস্টে ভারতের উন্নতির প্রশংসাও করেন তিনি।
তবে ভারতকে ল্যাবরেটরির সঙ্গে তুলনা করার পরই তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন বিল গেটস। সমালোচকদের অভিযোগ, এমন মন্তব্যের মাধ্যমে মার্কিন ধনকুবের আসলে ভারতকে গিনিপিগের সঙ্গে তুলনা করেছেন।
বিলের ওপর প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হয়ে ‘এক্স’ ব্যবহারকারী একজন লেখেন, “ভারত একটি পরীক্ষাগার আর আমরা ভারতীয়রা বিল গেটসের জন্য গিনিপিগ। এই ব্যক্তি সরকার থেকে শুরু করে বিরোধীদল, মিডিয়া সবাইকে ম্যানেজ করেছেন।”
সেই ব্যক্তি আরও লেখেন, “বিল গেটসের অফিস এখানে এফসিআরএ ছাড়াই চলে। আর আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা তাকে হিরো বানিয়েছে! জানি না কবে আমাদের ঘুম ভাঙবে।” আরেক ‘এক্স’ ব্যবহারকারী বিল গেটসের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করে লেখেন, “অনুগ্রহ করে ভারত থেকে দূরে থাকুন।”
প্রসঙ্গত, ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিকেল রিসার্চের (আইসিএমআর) সঙ্গে মিলে ২০০৯ সালে ভারতে সার্ভাইক্যাল ক্যানসারের টিকার ট্রায়াল করে বিল গেটসের ‘গেটস ফাউন্ডেশন’। গুজরাটের বদোদরা ও তেলঙ্গানার খাম্মামে ১৪ হাজার আদিবাসী শিক্ষার্থীকে ওই ট্রায়ালের জন্য বেছে নেওয়া হয়।
তবে পরবর্তীতে ট্রায়ালে অংশগ্রহণকারী অনেকের শরীরেই সমস্যা দেখা দেয়। এমন কি তাদের মধ্যে সাত কিশোরী মারাও যায়। যদিও টিকার পরীক্ষার সঙ্গে তাদের মারা যাওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই বলে দাবি করা হয়। তবে বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক রয়েই গেছে।
রেইড হফম্যানের সঙ্গে সেই বিষয়ে পডকাস্টে কথা বলতে গিয়ে বিল গেটস বলেন, “ভারত এমন একটি দেশ, যেখানে অনেক চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও শিক্ষাক্ষেত্রে উন্নতি হচ্ছে। ২০ বছরের মধ্যে এখানকার মানুষ আরও ভালো অবস্থায় থাকবে। ভারত আসলে একটি ল্যাবরেটরি, যেখানে নানারকম ট্রায়ালের পরে তার ফলাফল অন্যত্র প্রয়োগ করা যায়।”
পডকাস্টে গেটস জানান যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে গেটস ফাউন্ডেশনের সবচেয়ে বড় অফিস ভারতে। ভারতে গেটস ফাউন্ডেশনের একাধিক পাইলট প্রজেক্ট চালানো হয়।
গেটস ফাউন্ডেশনের কাজে চলতি বছরের শুরুতে ভারত ভ্রমণ করেছিলেন বিল গেটস। তখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেছিলেন। অনেক আগে থেকেই অভিযোগ রয়েছে, গেটস ফাউন্ডেশনের সংস্থাগুলো ভারত ও আফ্রিকার মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোকে গবেষণার জন্য ব্যবহার করে।
বিল গেটসের মন্তব্য সেই বিতর্ককেই নতুন করে সামনে এনেছে। এ ব্যাপারে ভারতের এক আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ বলেছেন, “বিল গেটস বলছেন যে, নতুন ওষুধের পরীক্ষার জন্য উনি ভারতকে গবেষণাগার হিসেবে ব্যবহার করেন। আর আমাদের গিনিগিপ হিসেবে ব্যবহার করার জন্য সরকার এই ভয়ংকর মানুষ এবং তার ফাউন্ডেশনকে অনুমতি দেয়। জঘন্য এবং লজ্জাজনক।”
অনেকে আবার গেটসের পাশে দাঁড়িয়েছেন। এমন একজন লিখেছেন, “ভারতে গিনিপিগের মতো কোনো টিকা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে না। ভারতে বিল গেটসের বিরুদ্ধে যে চক্রান্তমূলক তত্ত্ব প্রচার হচ্ছে, সেটা আমি সত্যিই বুঝতে পারছি না।”
তবে ভারতকে পরীক্ষাগারের সঙ্গে তুলনা করায় বিল গেটসের ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে আরেক এক্স ব্যবহারকারী লিখেছেন, “অনুগ্রহ করে ভারত থেকে দূরে থাকুন।”
সূত্র: ইন্ডিয়ান একপ্রেস