এডেন উপসাগরে ব্রিটিশ মালিকানাধীন একটি তেল ট্যাংকারে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শিকার একটি বাণিজ্যিক জাহাজে থাকা ক্রু সদস্যদের মধ্যে একজন বাংলাদেশিও আছেন।
শনিবার (২৭ জানুয়ারি) ভারতীয় নৌবাহিনী এক্স (সাবেক টুইটার) বার্তায় জানায়, হামলার শিকার জাহাজটিতে মোট ২৩ জন ক্রু আছেন। তাদের মধ্যে ২২ জন ভারতীয় ও একজন বাংলাদেশি। এই ক্রুদের নাম-পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি। তবে সবাই নিরাপদে আছেন।
এর আগে, শুক্রবার সন্ধ্যার ওই হামলায় জাহাজটিতে আগুন ধরে যায়।
হুতিরা বলেছে, তারা ইয়েমেনে মার্কিন-ব্রিটিশ আগ্রাসনের জবাব দিতে মার্লিন লুয়ান্ডা নামের ওই জাহাজটিকে হামলার নিশানা করে।
ভারতের নৌবাহিনীর বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, হামলার শিকার মার্লিন লুয়ান্ডা জাহাজের নাবিকদের কাছ থেকে সাহায্যের আবেদন পাওয়ার পর দ্রুত সাড়া দেয় তাদের ক্ষেপণাস্ত্র বিধ্বংসী যুদ্ধজাহাজ আইএনএস বিশাখাপত্তম।
এক বিবৃতিতে ভারতীয় নৌবাহিনী বলেছে, সমুদ্রে জাহাজ চলাচল নির্বিঘ্ন রাখতে তাদের সেনারা সচেষ্ট রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীও জানিয়েছে, তাদের নৌবাহিনীর জাহাজ এবং অন্য আরও জাহাজ হামলার শিকার মার্লিন লুয়ান্ডাকে সহায়তা করে।
লন্ডনের বহুজাতিক ট্রাফিগুরা বাণিজ্যিক ফার্মের মালিকানাধীন মার্লিন লুয়ান্ডা জাহাজ পরিচালনা করে যুক্তরাজ্যের ওশেনিক্স সার্ভিস কোম্পানি।
শুক্রবার ট্রাফিগুরা জানিয়েছিল, মার্লিন লুয়ান্ডা লোহিত সাগর পাড়ি দেওয়ার সময় ক্ষেপণাস্ত্র হামলার শিকার হয়। এডেন উপসাগরের ৬০ নটিক্যাল মাইল দক্ষিণ-পূর্বে থাকার সময় জাহাজটিতে হামলা হয় বলে জানায় ইউকে মেরিটাইম ট্রেড অপারেশনস (ইউকেএমটিও)।
পরে গতকাল ট্রাফিগুরা সর্বশেষ তথ্য দিয়ে জানায়, জাহাটির সব ক্রু নিরাপদে আছেন এবং আগুন নিভিয়ে ফেলা হয়েছে। জাহাজটি এখন নিরাপদ গন্তব্যে যাত্রা করছে। লোহিত সাগরে আর কোনো যাত্রায় নিরাপত্তাঝুঁকি আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলেও জানিয়েছে ট্রাফিগুরা।
এক বিবৃতিতে প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, ট্রাফিগুরার পক্ষ থেকে চলাচল করা আর কোনো জাহাজ বর্তমানে এডেন উপসাগর অতিক্রম করছে না। আর কোনো জাহাজের সমুদ্রযাত্রায় হামলার ঝুঁকি আছে কি না, তা সতর্কতার সঙ্গে খতিয়ে দেখছে তারা।
আর হুতিদের মুখপাত্র এক বিবৃতিতে বলেছেন, “মার্লিন লুয়ান্ডা একটি ব্রিটিশ জাহাজ। আমাদের দেশের বিরুদ্ধে মার্কিন-ব্রিটিশ আগ্রাসনের জবাবে এ জাহাজে হামলা করা হয়েছে।”
ইয়েমেনের বিদ্রোহী গোষ্ঠী হুতিরা দেশটির বিস্তীর্ণ এলাকা নিয়ন্ত্রণ করে। ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচার হামলার প্রতিবাদে গত নভেম্বর থেকে লোহিত সাগরে ইসরায়েলের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা আছে, এমন বাণিজ্যিক জাহাজ নিশানা করে একের পর এক হামলা চালাচ্ছে তারা। লোহিত সাগর বিশ্ব বাণিজ্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নৌপথ। হুতিদের হামলায় এ পথে জাহাজ চলাচল কমে গেছে। এর প্রভাব পড়েছে বিশ্ব বাণিজ্যে। এই পরিস্থিতিতে সম্প্রতি ইয়েমেনে হুতিদের অবস্থান নিশানা করে একাধিক হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। নতুন করে হুতিদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় তারা।
দুই দেশের হামলা শুরুর পর থেকে লোহিত সাগরের পাশাপাশি এডেন উপসাগরে ইসরায়েল ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা আছে, এমন বাণিজ্যিক জাহাজ নিশানা করে হামলা চালাচ্ছে হুতিরা। এর আগে ১৮ জানুয়ারি এডেন উপসাগরে একটি জাহাজে ড্রোন হামলা করে তারা।