ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে কয়েক দিনের অবিরাম বর্ষণে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। রাজ্যের চারটি নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যায় আবাসিক এলাকা ও ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। অন্তত সাতজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
প্রবল বন্যার তোড়ে ডুম্বুর জলবিদ্যৎ প্রকল্পের জলাধারের পানিস্তর বেড়ে গেছে অস্বাভাবিকভাবে। এতে প্রায় তিন দশক পর বাঁধের গেট খুলে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
ত্রিপুরার একটি সংবাদমাধ্যম বোরক টাইমসের প্রতিবেদনের বলা হয়েছে, ১৯৯৩ সালের পর প্রথমবারের মতো ডুম্বুর জলবিদ্যৎ প্রকল্পের বাঁধ খুলে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। যা ত্রিপুরা রাজ্যের সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয়।
জলবিদ্যৎ কর্তৃপক্ষ বলছে, ডুম্বুর প্রকল্পের বাঁধ খুলে দেওয়ার কারণে বন্যা পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে। সমভূমিতে নদীর পানি ধারণক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। ত্রিপুরার চারটি নদী হাওড়া, ধলাই, মুহুরি ও খোয়াই নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
ডুম্বুর প্রকল্পের বাঁধ খুলে দেওয়ার ঘটনা ত্রিপুরার ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য হলেও বাংলাদেশের জন্য তা ভয়াবহ বিপদ ডেকে আনছে। ত্রিপুরার ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে হাওড়া নদী ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায়, ধলাই নদী মৌলভীবাজারে, মুহুরি নদী ফেনী জেলায় এবং খোয়াই নদী সিলেটে প্রবেশ করেছে। এসব নদী দিয়ে প্রবল বেগে পানি নেমে আসছে বাংলাদেশে পূর্ব-উত্তরাঞ্চলে।
ইতোমধ্যে ফেনীর ফুলগাজী ও পরশুরামে বন্যা পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি হয়েছে। সলিয়া, চিথলিয়া, সাতকুচিয়া, শাহপাড়া, জগতপুরসহ বিভিন্ন এলাকার অর্ধলাখ মানুষ ঘরবন্দি হয়ে পড়েছে।
এদিকে, ভারতীয় পাহাড়ি ঢলের তোড়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দর তলিয়ে গেছে। পানি উঠেছে আশপাশের অন্তত ১০টি গ্রামে। পানির তোড়ে অস্থায়ী সেতু ভেঙে আখাউড়া-আগরতলা সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।
ত্রিপুরার গোমতী জেলা ম্যাজিস্ট্রেট তার অফিসিয়াল সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টে জানিয়েছেন, গোমতী নদীর পানি আরও বাড়তে পারে। ভারতীয় আবহাওয়া দপ্তর (আইএমডি) ত্রিপুরায় আরও ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিয়েছে।
দেশের মধ্য ও পূর্বাঞ্চলের বাসিন্দারা বলছেন, ভারত থেকে হু হু করে পানি আসছে বাংলাদেশে। নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধান করছেন হাজার হাজার মানুষ।
কুমিল্লায় গোমতী নদীপাড়ের বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, গেল ১০ বছরের মধ্যে গোমতীতে এত পানি দেখেননি তারা। পানি বাড়ায় চরাঞ্চলের সহস্রাধিক পরিবার বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে। ভারত থেকে আসা পানির সঙ্গে যোগ হয়েছে তিন দিনের টানা বৃষ্টি। ফলে কুমিল্লার গোমতী, কাকড়ী, পাগুলি ও সালদা নদীতে হু হু করে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।