“সবে মাত্র নমাজ শেষ করে উঠেছি। আচমকাই বিকট শব্দ! এমন শব্দ সত্যিই আগে শুনিনি। আর ছুটে এসে যা দেখেছি, নিজের চোখকেই বিশ্বাস পারছিলাম না। বীভৎস অবস্থা! দেখলাম, একটা মালগাড়ি কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসকে পিছন দিক থেকে এমন জোরে ধাক্কা মেরেছে যে, এক্সপ্রেসের একটা বগিটা উপরের দিকে উঠে রীতিমতো ঝুলছে। আরও দুটো বগি লাইনচ্যুত হয়ে দু’পাশে পড়ে রয়েছে। চারদিক থেকে তখন শুধু ‘বাঁচাও বাঁচাও’ চিৎকার। আর কান্নার শব্দ!”
এভাবেই বলছিলেন কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ফজলুর রহমান। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার অনলাইনকে তিনি এসব কথা বলেন।
সোমবার (১৭ জুন) ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিংয়ে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস নামের ওই যাত্রীবাহী ট্রেনের সঙ্গে একটি মালবাহী ট্রেনের সংঘর্ষ হয়েছে। এতে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৫ জনে দাঁড়িয়েছে। আহত হয়েছেন অন্তত ৬০ জন। হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ফজলুর রহমান বলেন, “প্রতিদিন মোটামুটি সকাল ৮টা নাগাদই এখান থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা যায়। আজ ওই সময়েই ঘটনাটা ঘটেছে। পাশেই নির্মলজোত গ্রামে থাকি। তখন সকাল ৮টা বেজে ৫ মিনিট। সময়টা মনে আছে, কারণ তখনই নমাজ শেষ হয়েছে। তখনই বিকট শব্দটা কানে আনে। মনে হলো যেন, পুরো গ্রাম কেঁপে উঠল! ওই আওয়াজ শুনেই বেরিয়ে এসেছিল অনেকে। আওয়াজটা রেললাইন থেকে এসেছে বুঝতে পেরেই আমরা কয়েক জন ওই দিকে ছুট দিই। গিয়ে দেখি ওই অবস্থা! গত বছর ওড়িশায় করমণ্ডল এক্সপ্রেসে দুর্ঘটনার খবর টিভিতে দেখেছিলাম। আঁতকে উঠেছিলাম সেই সব দৃশ্য দেখে। ওই মৃত্যুমিছিল দেখে হাড়হিম হয়ে গিয়েছিল। এ বার যেন নিজের চোখে সেই ছবি দেখলাম।
দেরি না করে আমরা উদ্ধারকাজে নেমে গিয়েছিলাম। কিছুক্ষণের মধ্যে পুলিশ আর কিছু অ্যাম্বুলেন্স আসে। আমার চোখের সামনেই এক জন মারা গেল! লাইনে উল্টে থাকা একটা বগিতে এক জন আটকে ছিল। তাকে কোনও ক্রমে টেনে বার করতে না-করতেই মরে গেল! আমরাই সাত-আট জনের দেহ উদ্ধার করেছি। ৩০-৩৫ জন জখম হয়েছিল। অনেক বাচ্চা, নারী ছিল। তাদের বার করে হাসপাতালে পৌঁছনোর ব্যবস্থা করেছি। অত অ্যাম্বুলেন্স ছিল না। অনেকের প্রাইভেট গাড়িতেও আহতদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। অনেককে তো আমার বাড়িতেও নিয়ে গিয়েছি।
আমাদের আজ কোরবানি দিন। কিন্তু আজ আর সে সব করলাম না। চোখের সামনে যা ঘটল, তারপর আর কিছু করা যায় না। যা করার কাল করব।”
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, পণ্যবাহী ট্রেনটি সিগন্যাল অতিক্রম করে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসে ধাক্কা দেয় বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব দিল্লির রেলওয়ে ওয়ার রুম থেকে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন বলে জানা গেছে।
রেলমন্ত্রী এক্স পোস্টে লিখেছেন—‘দ্রুততার সঙ্গে উদ্ধারকাজ শুরু হয়েছে। রেলওয়ে, এনডিআরএফ এবং এসডিআরএফ এক সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছে। আহতদের হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছেছেন।’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ছবিতে দেখা গেছে, ট্রেন থেকে ছিটকে যাওয়া দুইটি বগি দুমড়ে মুচড়ে গেছে। একটি কামরা লাইন থেকে ওপরের দিকে উঠে রয়েছে। তার নিচে ঢুকে রয়েছে মালবাহী ট্রেনের কামরা। স্থানীয়রা উদ্ধার কাজে হাত লাগিয়েছেন।