• ঢাকা
  • রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

হাসপাতালে আক্রমণ, মিথ্যে হলো ইসরায়েলের দাবি


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: নভেম্বর ১৬, ২০২৩, ০৯:৫৬ পিএম
হাসপাতালে আক্রমণ, মিথ্যে হলো ইসরায়েলের দাবি
ছবি : সংগৃহীত

ইসরায়েল যখন দাবি করে আসছিল গাজার বৃহত্তর আল-শিফা হাসপাতালের বেইজমেন্টে হামাসের কমান্ড সেন্টার রয়েছে এবং সেখান থেকেই তারা কমান্ড পরিচালনা করছে।

ইসরায়েলের এই দাবির বিপরীতে হামাস দাবি করেছে আল-শিফায় তাদের কোনো কমান্ড সেন্টার নেই। এটি ইসরায়েলি বাহিনীর কল্পনাপ্রসূত দাবি। ইসরায়েল আল-শিফায় হামলার প্রস্তুতি নিলে হামাস আন্তর্জাতিক সংস্থার উপস্থিতিতে অভিযানের আহ্বান জানায়। কিন্তু ইসরায়েলি বাহিনী হামাসের সেই আহ্বানে সাড়া দেয়নি।

সব দাবি ও আহ্বান উপেক্ষা করে ইসরায়েলি বাহিনী বুধ ও বৃহস্পতিবার আল-শিফা হাসপাতালে অভিযান চালায়। অভিযান চলাকালে হাসপাতালটিতে চিকিৎসাধীন অনেক রোগীর মৃত্যু ঘটে। ধ্বংস করা হয় গুরুত্বপূর্ণ অনেক চিকিৎসা সরঞ্জাম।

দুই দফা অভিযানে হাসপাতালটিতে হামাসের অস্তিত্বের প্রমাণ মেলেনি। তবে ইসরায়েলি বাহিনীর দাবি তারা হাসপাতালের বেইজমেন্টে হামাসের রেখে যাওয়া কিছু আলামত উদ্ধার করেছে যা ভিডিও করে প্রচার করা হয়েছে। হামাস দাবি করেছে এই ভিডিওটি ইসরায়েলি বাহিনীর বানানো ভিডিও। প্রথম বার প্রকাশের পর ভিডিওটি দ্বিতীয় বার পুনরায় এডিট করে প্রচার করে ইসরায়েল। যা মিথ্যা ও বানোয়াট। ভিডিওতে যা দেখানো হয়েছে তা ইসরায়েলি বাহিনীর রেখে দেওয়া সামান্য কিছু সামরিক সরঞ্জাম। যেখানে হামাসের অস্তিত্বের কোনো প্রমাণ নেই।  

যা পাওয়া গেছে হাসপাতালে
আলি-শিফা হাসপাতালের একটি পরিত্যক্ত ভবনে তিনটি ডাফেল ব্যাগ, যেগুলোতে একটি করে অ্যাসল্ট রাইফেল, গ্রেনেড, হামাসের ইউনিফর্ম ও ফ্ল্যাক জ্যাকেট রয়েছে। এছাড়াও ইসরায়েলের প্রকাশিত ওই ভিডিওর বাইরেও আরেকটি অ্যাসল্ট রাইফেল ও একটি ল্যাপটপ পাওয়া গেছে বলে দাবি করা হয়েছে।

হামাসের টানেল ও সামরিক কমান্ড
ইসরায়েল হাসপাতালটিতে অভিযানের আগে বলেছে আল-শিফার নিচে হামাসের টানেল রয়েছে এবং এখান থেকে টানেল পরিচালনা করা হয়। তারা এটিও দাবি করেছিলো যে, এখানে হামাসের কমান্ড সেন্টার রয়েছে এবং এখান থেকেই তাদের কমান্ড পরিচালনা করা হয়। ইসরায়েলের সেই দাবি সমর্থন করেছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এবং এজন্য বাইডেন হামাসকে যুদ্ধাপরাধী বলেও আখ্যা দিয়েছেন। কিন্তু অভিযান শুরুর ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময় পার হলেও তারা তাদের দাবির সপক্ষে এখনো কোনো নিরপেক্ষ প্রমাণ হাজির করতে পারেনি।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র জোনাথন কোনরিকাস বলেন, “উদ্ধার করা অস্ত্রগুলোর একটিও হাসপাতালের প্রয়োজন নেই। তিনি বলেন, আমি ভেবেছিলাম যে, উপাদানটি ‘আইসবার্গের শীর্ষ।”

ইসরায়েলের দাবি ও ভিডিওর অমিল
প্যালেস্টাইন ন্যাশনাল ইনিশিয়েটিভের জেনারেল সেক্রেটারি মুস্তাফা বারঘৌতি বলেছেন, ইসরাইলের প্রকাশিত ভিডিওতে যা দেখা গেছে, তা তো তারাই সেখানে রাখতে পারে। এটি তো খুব বেশি কিছু নয়।

তিনি আরও বলেন, “ইসরাইল প্রথমে কিছু দর্শককে আল শিফার ওই অব্যবহৃত কামরায় নিয়ে যাওয়ার ভিডিও প্রকাশ করেছে, সেখানে তারা দাবি করেছিল যে কোনো সম্পাদনা বা কাটছাঁট ছাড়াই তারা ভিডিওটি প্রকাশ করেছে। পরে তারা ওই ভিডিওটি আবার ডিলেট করে দেয়। এরপর তারা পুনরায় ভিডিওটি প্রকাশ করে। কিন্তু নতুন ভিডিওর সঙ্গে পুরোনো ভিডিওর অভিন্নতা পাওয়া যায়নি। এই বিষয়টিও ইসরাইলি বাহিনীর দাবির সত্যতা নিয়ে সন্দেহকে আরও ঘনীভূত করেছে।”

হামাসের প্রতিক্রিয়া
হামাস ইসরায়েলি বাহিনীর সর্বশেষ বিবৃতি অস্বীকার করে প্রত্যাখ্যান করেছে এবং এই ঘটনা ইসরায়েলি বাহিনীর সাজানো নাটক বলে আখ্যা দিয়েছে। কাতারভিত্তিক হামাসের সিনিয়র সদস্য ইজ্জাত আল রাশক বলেছেন, “দখলদার বাহিনী এখনও মিথ্যাচার করছে। তার কিছু অস্ত্র কাপড় ও সরঞ্জাম পাওয়ার দাবি করেছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো-তারা নিজেরাই সেগুলো আগে সেখানে নিয়ে রেখেছে।”

হামাসের এই সিনিয়র নেতা আরও বলেন, “হামাস বার বার জাতিসংঘ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ও রেড ক্রিসেন্টের আন্তর্জাতিক কমিটির অধীনে ইসরায়েলের দাবির সত্যতা যাচাইয়ের আহ্বান জানিয়েছে। কিন্তু তারা সেই আহ্বানে সাড়া দেয়নি।” 

আল রাশক আরও বলেন, “ইসরাইল বরাবরই আল-শিফা হাসপাতালের পরিস্থিতি তদন্তের জন্য একটি স্বাধীন ও আন্তর্জাতিক সংস্থার অধীনে তদন্তের আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে এসেছে। কারণ, তারা নিজেদের মিথ্যাচার সম্পর্কে সচেতন। তাই অন্যদের সামনে মিথ্যা যেন প্রকাশ না পায়, সেজন্য ওই আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছে।”

আল-শিফায় এখনো যা ঘটছে
আল শিফা হাসপাতালে এখনো হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। তারা হাসপাতালের চারপাশে সেনা মোতায়েন করে রেখেছে। আল জাজিরার হানি মাহমুদ দক্ষিণ গাজার খান ইউনিস থেকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

হানি মাহমুদ আরও জানায়, ইতোমধ্যে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী হাসপাতালের অপারেশন সেক্টর ধ্বংস করে ফেলেছে। এছাড়া কক্ষের মাঝখানের দেয়াল ও ভেতরের চিকিৎসাসামগ্রীও সম্পূর্ণ অকেজো করে ফেলেছে।

শতাধিক রোগী, ডাক্তার ও নার্স ও আল-শিফায় আশ্রয় নিচ্ছেন এমন আরও দুই হাজারেরও বেশি লোক এখনো হাসপাতালে রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

প্যালেস্টাইন ন্যাশনাল ইনিশিয়েটিভের জেনারেল সেক্রেটারি মুস্তাফা বারঘৌত বলেন, “আমরা আজকে যা দেখছি তা হলো এই যুদ্ধটি বেসামরিক নাগরিকদের ওপর আক্রমণ, হাসপাতাল আক্রমণ ও চিকিৎসাসামগ্রী ধ্বংসের জন্য করা হয়েছে।”

সূত্র : আল-জাজিরা

Link copied!