• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বন্যার্তদের দেখতে যাওয়া রাজাকে ডিম মারল বিক্ষুব্ধ জনতা


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: নভেম্বর ৪, ২০২৪, ১২:০৩ পিএম
বন্যার্তদের দেখতে যাওয়া রাজাকে ডিম মারল বিক্ষুব্ধ জনতা

স্পেনের ভ্যালেন্সিয়া অঞ্চলে ভয়াবহ বন্যা মোকাবিলায় কর্তৃপক্ষের ধীর এবং সমন্বয়হীন পদক্ষেপ জনগণের মধ্যে ক্ষোভ উসকে দিয়েছে। ভয়াবহ বন্যার পর সফরে গিয়ে দেশটির রাজা ফিলিপে ও রানি লেতিসিয়াকে লক্ষ্য করে ডিম ছুড়ে মারা হয়। 

সম্প্রতি ভয়াবহ বন্যায় ভ্যালেন্সিয়ায় দুই শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

রাজা ফিলিপে প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ ও আঞ্চলিক গভর্নর কার্লোস মাথোনকে নিয়ে ভ্যালেন্সিয়া শহরের উপকণ্ঠে ক্ষতিগ্রস্ত পাইপোর্তা এলাকা পরিদর্শন করেন। তখন তাকে লক্ষ্য করে জনতা "খুনি" স্লোগান দেয়। স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, দুর্যোগ মোকাবিলায় কর্তৃপক্ষ উদাসীন ছিল।

তারা ছবি তোলার জন্য দাঁড়াতেই জনতা রাজা, মাথোন এবং সানচেজের দিকে তীব্র অপমানসূচক মন্তব্য করা শুরু করেন। নিরাপত্তা বাহিনী জনতার ছুড়ে মারা ডিম থেকে তাদের রক্ষা করতে ছাতা খুলে তা ঠেকানোর চেষ্টা করেন।

একজন ক্ষুব্ধ বাসিন্দার মুখোমুখি হলে রাজা ফেলিপে শান্তভাবে ছাতা নামিয়ে মনোযোগ দিয়ে তার কথা শোনেন। এসময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশকে অনেক সংগ্রাম করতে হয়েছে।

রানি লেতিসিয়াও বিক্ষুব্ধ জনতার সাথে কথা বলেন। এসময় রানিকে মাথায় হাত দিয়ে হতবাক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।

এই প্রতিবাদের পর রাজপরিবারের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চ্যানেলে একটি ভিডিও প্রকাশিত হয়েছে। ভিডিওতে দেখা যায় রাজা ও রানি ভ্যালেন্সিয়ার শোকাহত বাসিন্দাদের সান্ত্বনা দিচ্ছেন।

স্পেনের রাজা সাধারণত এমন তীব্র ক্ষোভের সম্মুখীন হন না। তুলনামূলকভাবে জনপ্রিয় রাজা ফেলিপে তার পিতার সিংহাসন ত্যাগের পর সিংহাসনে আরোহণ করেন। তবে এই সফরে জনগণের ক্রোধের প্রধান লক্ষ্য ছিলেন আঞ্চলিক গভর্নর কার্লোস মাথোন এবং প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ।

রাজা ফেলিপে উপস্থিত থাকার সিদ্ধান্ত নিলেও নিরাপত্তা প্রটোকল অনুযায়ী সানচেজকে এলাকা থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়।

এ বিষয়ে সানচেজের দপ্তর থেকে জানানো হয়, নিরাপত্তা প্রটোকল অনুসারে প্রধানমন্ত্রীর সরে যাওয়া জরুরি ছিল।

অন্যদিকে, মাথোন এক বিবৃতিতে জানান, তিনি জনগণের ক্ষোভকে সম্মান করেন এবং রাজা ফেলিপের ‘উদাহরণযোগ্য’ আচরণের প্রশংসা করেন।

ভয়াবহ বন্যায় ভ্যালেন্সিয়া অঞ্চলে এখন পর্যন্ত অন্তত ২১৪ জনের মৃত্যু নিশ্চিত হয়েছে। এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সর্বশেষ একজন ৭০ বছর বয়সী নারীর মৃতদেহ তার বাড়ি থেকে ১২ কিলোমিটারেরও বেশি দূরে পাওয়া গেছে।

ভ্যালেন্সিয়ায় এই সংকট মোকাবিলায় কর্তৃপক্ষের ধীর এবং সমন্বয়হীন পদক্ষেপ জনগণের মধ্যে ক্ষোভ উসকে দিয়েছে। আবহাওয়া দপ্তর থেকে বন্যা সতর্কতা দেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর জরুরি বার্তা পাঠানো হয়েছে। এতে অনেকেই ক্ষুব্ধ হয়েছেন।

শনিবার (২ নভেম্বর) প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ বন্যাকবলিত এলাকায় উদ্ধারকাজের জন্য ৫ হাজার অতিরিক্ত সৈন্য পাঠানোর নির্দেশ দেন। তিনি এই ঝড়কে দেশের ইতিহাসে "সবচেয়ে ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়" হিসেবে উল্লেখ করেন। দেরিতে প্রতিক্রিয়া জানানোর জন্য দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপ "যথেষ্ট ছিল না"।

এই সংকটের একটি অংশ রাজনৈতিক কারণে তৈরি হয়েছে। মাথোন ও সানচেজ ভিন্ন রাজনৈতিক দলের। এদিকে, স্পেনের ফেডারেল সরকার আঞ্চলিক সরকারের অনুমোদন ছাড়া জরুরি তহবিল এবং সম্পদ ছাড় দিতে পারে না। বন্যা শুরু হওয়ার চার দিন পর শনিবার সেই অনুমতি আসে।

রোববার (৩ নভেম্বর) স্প্যানিশ আবহাওয়া সংস্থা উপকূলীয় ভ্যালেন্সিয়া এলাকায় আরও বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়ে সর্বোচ্চ লাল সতর্কতা জারি করে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জনগণকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকার আহ্বান জানিয়েছে।

স্থানীয়রা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও পোস্ট করেছেন। এসব ভিডিওতে পূর্ব স্পেনের আলদাইয়া শহরে পুলিশের গাড়ি থেকে সবাইকে ঘরে ফিরে যেতে এবং স্থানীয় খাদের পাশের এলাকা এড়িয়ে চলতে মাইকিং করতে শোনা গেছে।

আলদাইয়ার মেয়র গিয়ের্মো লুহান সর্বশেষ সতর্কতার পরিপ্রেক্ষিতে বাসিন্দাদের কর্মস্থল ছেড়ে রাস্তাঘাট থেকে দূরে থাকার অনুরোধ জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করেছেন।

দক্ষিণাঞ্চলে মুরসিয়া আঞ্চলিক সরকার মাথারোন এলাকার বাসিন্দাদের কিছু এলাকা এড়িয়ে চলতে এসএমএস-এর মাধ্যমে সতর্কতা পাঠিয়েছে। বৃষ্টির কারণে এই এলাকায় পানির স্তর বাড়ছে।

এদিকে, বন্যার ধ্বংসাবশেষ পরিষ্কারে সহায়তার জন্য প্রাদেশিক সরকারের আহ্বানে হাজার হাজার স্বেচ্ছাসেবক সাড়া দিয়েছেন। তবে কর্তৃপক্ষের পর্যাপ্ত প্রস্তুতি না থাকায় দ্রুত সরবরাহ ফুরিয়ে যায়। এর ফলে স্বেচ্ছাসেবকদের পরিবহণের জন্য বাস জোগাড় করতে কর্তৃপক্ষকে হিমশিম খেতে হয়।

অনেক স্বেচ্ছাসেবক ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও ফিরে যেতে বাধ্য হন। এতে তারা হতাশ হয়েছেন।

১৮ বছর বয়সী পেদ্রো হুয়ান বলেন, এমন দৃশ্য তিনি কেবল সিনেমাতেই দেখেছেন। কিন্তু সকাল ৭টার আগেই তিনি স্বেচ্ছাসেবকদের বাসে উঠতে হাজির হন।

অপেক্ষার সময় সিএনএনকে তিনি বলেন, “সরকার বলছে, হ্যাঁ, এটি আমাদের দোষ নয়; অন্য কারও দোষ। কিন্তু এই মুহূর্তে আমাদের একে অপরের পাশে দাঁড়াতে হবে।”

তিনি আরও বলেন, “সেনাবাহিনী এবং পুলিশ সহায়তা করছে। তবে আমাদের প্রত্যাশার তুলনায় তাদের সহায়তা অনেক কম এবং তারা বেশ কয়েকদিন দেরি করেছেন।”

আন্তর্জাতিক বিভাগের আরো খবর

Link copied!