শুনতে অবাক লাগলেও সত্য যে, একসময় ইরান আর ইসরায়েল ছিলো একে অপরের পরম বন্ধু। যার সূচনা হয়েছিল সেই ১৯৪৮ সালে। ইসরায়েল রাষ্ট্র যখন প্রতিষ্ঠা হয় তখন প্রথম স্বীকৃতি দিয়েছিল তুরস্ক। এরপরের দেশটিই ছিল মুসলিম দেশ ইরান। শুধু স্বীকৃতি দিয়েই বসে থাকেনি দেশ দুটি। অর্থনৈতিক এমনকি তাদের মধ্যে সামরিক সম্পর্কও ছিল দারুণ।
ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্কের দুর্দান্ত সময়ের মধ্যেই ১৯৫৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ইরানের গোয়েন্দা সংস্থা ‘সাভাক’। আর তাতে সহায়তা করে ইরানের বন্ধু দেশ ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ। বিবিসির বাংলার একটি প্রতিবেদনে ইরান আর ইসরায়েলের পরম বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের পেছনের কারণ বিশ্লেষণ করা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, ইরান যে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক ধরে রাখায় অনেক মনোযোগী হয়, তার পেছনের কারণ মূলত মার্কিন সমর্থন নিশ্চিত করা।
আর ত্রিমুখী সম্পর্ক রক্ষা করতে গিয়েই মূলত ভারসাম্যে কিছুটা শিথিল হতে থাকে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরান সরকার ইসরায়েলের সঙ্গে দারুণ ভারসাম্যপূর্ণ সুসম্পর্ক অব্যাহত রাখার চেষ্টা করলেও অনেক আগে থেকেই ইরানের ভেতরে ইহুদি রাষ্ট্র ইসরায়েল বিরোধিতার ছিলো।
বিশ্লেষণে দেখা যায়, ইরানের শাহ শাসন বিরোধী বামপন্থীদের সঙ্গে ফিলিস্তিনি মুক্তি আন্দোলন ফাতাহ ও এর ইয়াসির আরাফাতের যোগাযোগ ছিলো। আর অন্যদিকে, ইসলামি প্রজাতন্ত্রী ইরানের প্রতিষ্ঠাতা আয়াতুল্লাহ খোমেনী এবং তার অনুসারীরাও ছিলেন ফিলিস্তিনে ইহুদি রাষ্ট্র ইসরায়েল প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে।
তবে চূড়ান্তভাবে ১৯৭৯ সালে ইরানে ইসলামি বিপ্লবের পরই মূলত ইরান আর ইসরায়েল সম্পর্ক ভেঙে পড়ে। তখন ক্ষমতায় আসা ইরানের বিপ্লবী সরকার রাষ্ট্রীয়ভাবে ফিলিস্তিনিদের পক্ষ নেয়ার ঘোষণা দেয়। সেইসঙ্গে তেহরানে ইসরায়েলের দূতাবাসকে ফিলিস্তিনি দূতাবাসে পরিণত করে। তারা ইসরায়েলের সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। মূলত ইরানের বিপ্লবী সরকার ফিলিস্তিনে ইসরায়েল রাষ্ট্রের অস্তিত্বকেই অস্বীকার করে।
বিবিসির সেই প্রতিবেদনে যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব এসেক্স এর শিক্ষক এবং মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আব্বাস ফয়েজের উদ্ধৃতি দেয়া হয়। তাতে অধ্যাপক আব্বাস বলেন, ইসলামি বিপ্লবের পর ইরান সরকার আমেরিকা এবং ইসরায়েলকে তার জন্য হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করেছিলো। একইসঙ্গে ফিলিস্তিনকে সমর্থন দেয়ার নীতিও নিয়েছিলো। ইরানি সরকারের ইসরায়েল নীতি পরিবর্তন হওয়ার কারণেই দুই দেশের সম্পর্ক বৈরি হতে শুরু করে।
এমনকি অন্য আরব দেশগুলো ইসরায়েল-ফিলিস্তিন দুই রাষ্ট্র সমাধানে একমত হলেও ইসলামি বিপ্লবের নেতা আয়াতুল্লাহ খোমেনী সেটা গ্রহণযোগ্য মনে করেননি। তারা ইসরায়েলকে রাষ্ট্র হিসেবে অস্বীকারের নীতি নেয়। অন্যদিকে ইরানের এমন উত্থানকে হুমকি হিসেবে বিবেচনা করতে শুরু করে ইসরায়েল।