জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাবে ২১০০ সালের মধ্যে হিমালয়ের হিমবাহের ৭৫ শতাংশ বরফ গলে যাবে। যা বর্তমানে ৬৫ শতাংশ বেশি দ্রুত গলছে। বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছেন, এর ফলে প্রায় ২ বিলিয়ন মানুষ বিপজ্জনক বন্যা এবং পানযোগ্য পানির ঘাটতির সম্মুখীন হবেন। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে।
মঙ্গলবার (২০ জুন) কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে। এতে বলা হয়, কাঠমান্ডুভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ইন্টিগ্রেটেড মাউন্টেইন ডেভেলপমেন্টের (আইসিআইএমওডি) এক গবেষণা প্রতিবেদন এ সতর্ক বার্তা দেওয়া হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ দ্রুত হ্রাস করা না হলে আগামী বছরগুলোতে আকস্মিক বন্যা এবং তুষারপাতের সম্ভাবনা আরও বাড়বে। হিমালয়ের হিমবাহগুলো ২০১১ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত সময়ে আগের দশকের তুলনায় ৬৫ শতাংশ বেশি হারে হারিয়ে গেছে। এভাবে গলতে থাকলে চলতি শতকের মধ্যে হিমবাহগুলোর ৮০ শতাংশ উধাও হয়ে যাবে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণে পাহাড়-পর্বতে জমে থাকা বরফ গলবে, এতে কোনো অস্বাভাবিকতা নেই। বরং, বরফ গলে যাওয়াই স্বাভাবিক। কিন্তু হিমালয়ের ক্ষেত্রে যে বিষয়টি সবচেয়ে চিন্তার, তা হলো গলে যাওয়ার এই গতি।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হিন্দুকুশ হিলালয় অঞ্চলের (এইচকেএইচ) হিমবাহগুলো থেকে উৎপন্ন ১২টি নদী আশপাশের পাহাড়ি এলাকার ২৪ কোটি মানুষের পানির উৎস। এ ছাড়া নিচের দিকে নদী উপত্যকার আরও ১৬৫ কোটি মানুষ হিমালয়ের পানির ওপর নির্ভরশীল।
মাইগ্রেশন বিশেষজ্ঞ এবং প্রতিবেদনের অন্যতম লেখক আমিনা মাহারজান বলেন, “পাহাড়ে বসবাসকারী এই মানুষগুলো যারা বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে কোনো অবদান রাখেনি তারাই জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে উচ্চ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।”
আইসিআইএমওডির প্রতিবেদনের প্রধান লেখক ফিলিপাস ওয়েসটার বলেন, “তাপমাত্রা বাড়লে হিমবাহগুলো গলবে, এটা স্বাভাবিক। কিন্তু এগুলো গলছে অস্বাভাবিক হারে, দ্রুততার সঙ্গে। আমরা যেমনটা ভেবেছিলাম, তার চেয়ে বেশি গতিতে গলছে।”
অপর এক গবেষণায় দেখা গেছে, ২ হাজার বছরে মাউন্ট এভারেস্টের হিমবাহগুলোর যে পরিমাণ বরফ গলার কথা ছিল সেই পরিমাণ বরফ গত ৩০ বছরে গলে গেছে।
এছাড়া আগে এক গবেষণায় দেখা গেছে, ২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তি মেনে যদি বৈশ্বিক তাপমাত্রা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস করে বাড়ে, তাহলে হিমবাহের অর্ধেক ২১০০ সালের মধ্যে গলে নিঃশেষ হবে। আর যদি বিশ্ব তাপমাত্রা বৃদ্ধি শিল্পযুগের আগের অভীষ্ট দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমাবদ্ধ রাখতে পারে, এরপরও ৩৬ শতাংশ হিমবাহ উধাও হবে।
তবে আন্তসরকার সংস্থা আইসিআইএমওডি বলছে, যে হারে এখন গলছে, তাতে চলতি শতকেরই মধ্যেই ৮০ শতাংশ হিমবাহ উধাও হয়ে যাবে।
আইসিআইএমওডির সদস্যদেশের মধ্যে রয়েছে আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, ভুটান, চীন, ভারত, মিয়ানমার ও পাকিস্তান।
সংস্থাটির উপপ্রধান ইজাবেলা কোজিল বলেন, “হিমালয়ের হিমবাহ ও যে তুষার এখানে জমা আছে, তা থেকে পাওয়া পানির ওপর এশিয়ার ২০০ কোটি মানুষ নির্ভরশীল। হিমবাহের এই গলন এতটাই দ্রুত গলছে যে এর ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া কঠিন।”
ঊনবিংশ শতকের মাঝামাঝি থেকে এখন পর্যন্ত সারা বিশ্বের তাপমাত্রা সার্বিকভাবে ১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই কারণেই বিশ্বের নানা প্রান্তে আগের চেয়ে বেশি গরম অনুভূত হচ্ছে। বেড়েছে তাপপ্রবাহের মাত্রাও। এই পরিস্থিতিতে অবিলম্বে আবহাওয়া সংক্রান্ত সমস্যার সমাধানের জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।