অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে ইসরায়েলি বর্বর হামলায় আরও ৩১ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এতে করে উপত্যকাটিতে নিহতের মোট সংখ্যা ৪০ হাজার ৯৩০ ছাড়িয়ে গেছে।
এ ছাড়া গত বছরের অক্টোবর থেকে চলা এই হামলায় আহত হয়েছেন আরও ৯৪ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি।
রোববার (৮ সেপ্টেম্বর) এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, ইসরায়েলি বিমান হামলায় শনিবার গাজায় কমপক্ষে আরও ৩১ জন নিহত হয়েছেন। অন্যদিকে বৃহৎ আকারের প্রাদুর্ভাব রোধ করার লক্ষ্যে জরুরিভিত্তিতে পোলিও টিকাদান কর্মসূচির দ্বিতীয় ধাপটি শেষ করেছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা।
বেশ কয়েকটি সূত্র আল জাজিরাকে জানিয়েছে, ইসরায়েলি গোলাবর্ষণের কারণে শনিবার গাজার কেন্দ্রীয় নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে তিন নারী এবং দুই শিশু নিহত হয়েছেন।
আলাদাভাবে, গাজার বেসামরিক প্রতিরক্ষা সংস্থা বলেছে, বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত একটি স্কুলকে লক্ষ্য করে চালানো ইসরায়েলি হামলায় অন্তত আটজন নিহত হয়েছেন। উত্তর গাজা শহরের শেখ রাদওয়ান পাড়ার আবু ইস্কান্দার এলাকায় আমর ইবনে আল-আস স্কুলে হামলায় আহত হয়েছে ২০ জন।
এদিকে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, উপত্যকায় ইসরায়েলের চলমান হামলায় কমপক্ষে আরও ৬১ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এতে করে গত বছরের অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৪০ হাজার ৯৩৯ জনে পৌঁছেছে বলে শনিবার অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।
মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, নিরলস এই হামলায় আরও অন্তত ৯৪ হাজার ৬১৬ জন ব্যক্তিও আহত হয়েছেন।
মন্ত্রণালয় বলেছে, গত ৪৮ ঘণ্টায় ইসরায়েলি বাহিনীর অব্যাহত আগ্রাসনে ৬১ জন নিহত এবং আরও ১৬২ জন আহত হয়েছেন। অনেক মানুষ এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে এবং রাস্তায় আটকা পড়ে আছেন কারণ উদ্ধারকারীরা তাদের কাছে পৌঁছাতে পারছেন না।
ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ মনে করছে, গাজা উপত্যকা জুড়ে ধ্বংস হওয়া বাড়ির ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনও ১০ হাজারেরও বেশি লোক নিখোঁজ রয়েছেন। মূলত গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব সত্ত্বেও ইসরায়েল অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডে তার নৃশংস আক্রমণ অব্যাহত রেখেছে।
উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন আন্তঃসীমান্ত হামলার পর থেকে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েলি এই হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে।
এ ছাড়া ইসরায়েলি আগ্রাসনের কারণে প্রায় ২০ লাখেরও বেশি বাসিন্দা তাদের বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।
মূলত ইসরায়েলি আক্রমণ গাজাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। জাতিসংঘের মতে, ইসরায়েলের বর্বর আক্রমণের কারণে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। আর খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি এবং ওষুধের তীব্র সংকটের মধ্যে গাজার সকলেই এখন খাদ্য নিরাপত্তাহীন অবস্থার মধ্যে রয়েছেন।
এ ছাড়া অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডের ৬০ শতাংশ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। ইসরায়েল ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছে।