ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ২৪ ঘণ্টায় নির্বিচারে হামলা চালিয়ে ২৫০ জনকে হত্যা করেছে ইসরায়েল। এর মধ্যে মাগাজি শরণার্থী শিবিরেই শতাধিক মানুষকে হত্যা করেছে তারা। এদিকে ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ৭ অক্টোবরের পর থেকে এখন পর্যন্ত ২৩০ বিমান ও ২০ জাহাজে ইসরায়েলে অস্ত্র পাঠিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, ক্যাম্পের একটি আবাসিক চত্বরে ইসরায়েলি হামলায় সাতটি পরিবার নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। মাগাজির বাসিন্দা জেয়াদ আওয়াদ বলেন, “ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বেসামরিক মানুষকে রেহাই দেয় না।”
গাজায় ক্রিসমাসের আগের রাতে ইসরায়েল তীব্র বোমা হামলা চালিয়েছে। বেশ কয়েকটি ভবন নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হয়েছে। অনেক পরিবার ধ্বংসস্তুপের নিচে আটকে পড়েছে।
আল জাজিরার সংবাদদাতা হিন্দ খুদারি মাগাজি থেকে জানান, একটি তিনতলা ভবনকে লক্ষ্যবস্তু করেছিল ইসরায়েল। এছাড়াও আরও বাড়ি গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। একজন জানিয়েছেন, তাদের পরিবারের পাঁচজন এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে রয়েছে। কোনো উদ্ধারকারী না থাকায় নিজের খালি হাতে তিনি খনন করার চেষ্টা করছিলেন।
ইসরায়েলি হামলায় খান ইউনিস, বুরেইজ এবং নুসিরাতের মতো এলাকায়ও বহু মানুষ নিহত হয়েছে। গত দিনে ইসরায়েলি হামলায় প্রায় ৫০০ মানুষ আহত হয়েছে।
অক্টোবর থেকে কার্যত গাজার বেশিরভাগ এলাকা গুড়িয়ে দিয়েছে ইসরায়েল। স্থল, আকাশ ও জলপথে তীব্র আক্রমণ করছে দখলদার ইসরায়েল। এখন পর্যন্ত গাজায় ২০ হাজার ৫০০ এর বেশি মানুষকে হত্যা করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। বলা বাহুল্য, তাদের প্রায় সবাই বেসামরিক ফিলিস্তিনি। নিহতদের মধ্যে ৯ হাজারের বেশি শিশু এবং বাকিদের বেশিরভাগই নারী।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, গাজার সম্ভাব্য ২৪ লাখ মানুষের বেশিরভাগই বাস্তুচ্যুত হয়েছে। সর্বাত্মক অবরোধের কারণে লাখ লাখ মানুষ নানামুখী সংকটের মুখোমুখী হয়েছে। খাবার নেই, পানি নেই। তীব্র শীতে সামান্য বাসস্থানটুকুও নেই। যেটুকু সাহায্য মিশরের রাফাহ ক্রসিং দিয়ে প্রবেশ করছে তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম।
এদিকে সোমবার ইসরায়েলি মিডিয়া জানিয়েছে, ৭ অক্টোবর গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ২৩০টি কার্গো বিমান এবং ২০টি অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম বোঝাই জাহাজ ইসরায়েলে পাঠিয়েছে। মার্কিন সামরিক সহায়তার মধ্যে রয়েছে- আর্টিলারি শেল, সাঁজোয়া যান এবং সৈন্যদের জন্য মৌলিক যুদ্ধ সরঞ্জাম।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় গাজা উপত্যকায় বর্তমান যুদ্ধের ব্যয় অনুমান করেছে, প্রায় ৬৫ বিলিয়ন শেকেল (১৭ বিলিয়ন ডলার)। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে ইয়েডিয়ট অহরনোথ সংবাদপত্র বলেছে, যুদ্ধের শুরুতে সেনাবাহিনী তাদের গুদামগুলোতে থাকা বেশিরভাগ গোলাবারুদ ব্যবহার করেছিল।
সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, কিন্তু ইসরায়েল লেবাননের হিজবুল্লাহ গ্রুপের সাথে একটি সম্ভাব্য বড় আকারের যুদ্ধের প্রস্তুতির জন্য গুদামগুলো পুনরায় পূরণ করতে সক্ষম হয়েছে।
ইসরায়েলি সামরিক পরিসংখ্যান অনুসারে, ৭ অক্টোবর থেকে গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের সঙ্গে সংঘর্ষে কমপক্ষে ৪৮৯ ইসরায়েলি সেনা নিহত হয়েছে।
সূত্র: আল জাজিরা ও আনাদুলু