ভারতের উত্তরাখন্ডের উত্তরকাশি টানেল ধসে আটকে পড়া শ্রমিকদের উদ্ধার করেন ১২ জন ‘র্যাট হোল মাইনার’। পুরস্কার স্বরূপ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামী তাদের ৫০ হাজার রুপির চেক প্রদান করেন। কিন্তু অনিচ্ছা সত্ত্বেও তারা শর্ত সাপেক্ষে পুরস্কার গ্রহণ করেন।
শনিবার (২৩ ডিসেম্বর) ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
উত্তরাখন্ড কর্তৃপক্ষকে খনিশ্রমিকেরা জানান, তারা চেক নিলেও সেটি ভাঙাবেন না। রাজ্য সরকার বিমাতাসুলভ আচরণ বন্ধ না করলে তারা চেক ফিরিয়ে দিবেন।
শুক্রবার (২২ ডিসেম্বর) উত্তরাখন্ডের রাজধানী দেরাদুনে এক অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ধামি উত্তর প্রদেশের ওই ১২ জন শ্রমিককে পুরস্কৃত করেন। তাদের প্রত্যেকের হাতে ৫০ হাজার রুপির চেক তুলে দেন। শ্রমিকেরা অসন্তুষ্ট থাকা সত্ত্বেও তা গ্রহণ করেন।
মুখ্যমন্ত্রী শ্রমিকদের বলেন, তারা যেন তাদের দাবি নিয়ে সরকারি কর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেন। তিনি বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন। এদিকে শ্রমিকেরা তখন মুখ্যমন্ত্রীকে জানান, সরকারের সিদ্ধান্ত পর্যন্ত তারা অপেক্ষা করবেন। তত দিন পর্যন্ত তারা চেক ভাঙাবেন না।
সুড়ঙ্গ ধসে আটকে পড়া ৪১ শ্রমিককে উদ্ধারের সব প্রচেষ্টা যখন বিফল হয়, খননকাজে ব্যবহৃত যন্ত্র নষ্ট হয়ে যায়, তখন মুশকিল আসান হিসেবে আটকে পড়া শ্রমিকদের উদ্ধারে হাজির হন ওই ১২ শ্রমিক।
ইঁদুরের গর্তের মতো দুই থেকে আড়াই ফুটের সুড়ঙ্গ কাটায় দক্ষ ওই শ্রমিকদের উদ্ধার কাজে নিযুক্ত করেন দিল্লির রকওয়েল এন্টারপ্রাইজেসের মালিক ওয়াকিল হাসান। বিশেষজ্ঞরা যে কাজ এক মাস সময় লাগবে বলে জানান, ওই শ্রমিকেরা সে কাজ দুই দিনে শেষ করেন। উদ্ধার পান আটক ৪১ শ্রমিক। এ শ্রমিকরা নানাভাবে সম্মানিত হলেও রাজ্য সরকারের দেওয়া পুরস্কার মূল্য তাদের অসম্মানিত করেছে। যার কারণে অনিচ্ছা সত্ত্বেও চেক গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেন তারা।
শ্রমিকদের হয়ে ওয়াকিল হাসান গণমাধ্যমকে বলেন, “রাজ্য সরকার আটকে পড়া শ্রমিকদের প্রত্যেককে ১ লাখ রুপি দিয়েছে। অথচ তাদের বেলায় ৫০ হাজার রুপি! যারা উদ্ধার পেলেন, তাদের বেশি অর্থ দেওয়া হলো। অথচ যাদের জন্য উদ্ধার পেলেন, তাদের দেওয়া হলো অর্ধেক। শ্রমিকেরা কেউ টাকা চাননি। তারা চান সরকার এমন কিছু একটা করুক, যাতে চিরকাল তাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ইঁদুরসুড়ঙ্গ খুঁড়তে না হয়। এমন কোনো কিছু নিশ্চয়তা দেওয়া হোক, যাতে তাদের পরবর্তী প্রজন্ম সম্মানজনক অন্য কিছু করতে পারে। অথচ সরকার তা না করে বিমাতাসুলভ আচরণ করল।”
হাসান আরও বলেন, “এ ধরনের কাজ সবাই করতে পারেন না। তা ছাড়া এ কাজের একটা পরম্পরাও আছে। এ কাজের দক্ষ শ্রমিকদের খনি খোঁড়া ছাড়া আরও অনেক কাজে লাগানো হয়। যেমন এ ক্ষেত্রে হলো। সেসব কাজের জন্য তাদের সরকারি সংস্থাগুলোতে নিয়োগ করা যেতে পারে। এতে তাদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত হয়। নাহলে এমনভাবে আর্থিক সহায়তা দেওয়া যেতে পারে, যাতে তারা তাদের ভবিষ্যৎ অন্যভাবে তৈরি করতে পারেন। এটা মনে রাখা দরকার, এই অনামী শ্রমিকেরা দেশকে গর্বিত করেছেন। সরকারের উচিত তার প্রতিদান দেওয়া।”