২০ বছর পর আবারও আফগানিস্তানের ক্ষমতয়ায় তালেবান। বিদ্রোহীদের হাতে কাবুলের পতনের পর থেকেই আফগানিস্তানের সরকার আর শাসনব্যবস্থা নিয়ে উদ্বিগ্ন গোটা বিশ্ব।
এরইমধ্যে তালেবান জানিয়েছে দেশটির পরিবর্তিত নাম হবে ইসলামিক আমিরাত অব আফগানিস্তান। আর গণতন্ত্র নয় ইসলামি শরিয়াহ আইনেই চলবে দেশ।

যদিও সংবাদ সম্মেলনে তালেবান নেতারা জানান, আগের মতো কঠোর আর অসহিষ্ণু হবে না তালেবানের শাসন। সরকারব্যবস্থায় নারীদের যুক্ত করার পাশাপাশি তাদের অধিকার নিশ্চিতের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে গোষ্ঠীটি। একইসঙ্গে সংবাদমধ্যমকেও পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হবে।
তবে রাষ্ট্র পরিচালনায় কে থাকবেন আর কোন নীতিতে পরিচালিত হবে সেটি এখনও স্পষ্ট করেনি তালেবান। যদিও এ বিষয়ে রয়টার্সকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে কথা বলেছেন এক তালেবান নেতা।

তালেবানের জ্যেষ্ঠ সদস্য ও দলের নীতিনির্ধারণ প্রক্রিয়ায় যুক্ত ওয়াহিদুল্লাহ হাশিমি বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানান, তালেবানের সর্বোচ্চ নেতা হাইবাতুল্লাহ আখুনজাদাই দেশের নেতৃত্বে থাকতে পারেন। তবে সর্বোচ্চ নেতা হলেও প্রেসিডেন্ট পদে তিনি থাকছেন না।
ওয়াহিদুল্লাহ হাশিমি জানান, আফগানিস্তানের কেন্দ্রীয় পরিষদের সার্বিক দায়িত্বে থাকবেন সর্বোচ্চ নেতা হায়বাতুল্লাহ আখুন্দজাদা। তবে ‘প্রেসিডেন্ট’ পদে থাকতে পারেন তাঁর (আখুন্দজাদার) কোন সহকারি নেতা।
এই মুহূর্তে তালেবানের সর্বোচ্চ নেতার তিনজন ডেপুটি আছেন। তারা হলেন, দলটির সহপ্রতিষ্ঠাতা মোল্লা ওমরের ছেলে মৌলবি ইয়াকুব, হাক্কানি নেটওয়ার্কের নেতা সিরাজউদ্দিন হাক্কানি এবং তালেবানের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও দোহায় রাজনৈতিক কার্যালয়ের প্রধান আবদুল গনি বারাদার।
এ সপ্তাহের শেষ দিকে তালেবানের বৈঠকে এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হবে বলে জানান হাশিমি। তবে নতুন প্রশাসনে গণতান্ত্রিক সরকারব্যবস্থা থাকছে না এ ব্যাপারে নিশ্চিত করেছেন এই নেতা।

তিনি বলেন, “আফগানিস্তান কিভাবে পরিচালিত হবে সে সম্পর্কিত অনেক বিষয় এখনও চূড়ান্ত হয়নি। তবে কোন ধরনের রাজনৈতিক ব্যবস্থা থাকবে, তা নিয়ে আমরা আর আলোচনা করব না। কারণ, এটা পরিষ্কার যে দেশে শরিয়া আইনই থাকছে।”
এসময় তিনি আরও উল্লেখ করেন, “আফগানিস্তানে কোনভাবেই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা থাকবে না। কারণ আমাদের দেশে এর কোন ভিত্তি নেই।”
সামরিক বাহিনী পুনর্গঠন এবং তুরস্ক, জার্মানি ও ইংল্যান্ডে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত তালেবান কমান্ডারকে সেনাবাহিনীতে নিয়োগ দেওয়ার কথাও জানান হাশিমি।
ওয়াহিদুল্লাহ হাশিমির কথায় অনেকেই ধারণা করছেন আফগানিস্তানে ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠিত হলে এর সর্বোচ্চ নেতা ও প্রেসিডেন্ট উভয় পদই রাষ্ট্র পরিচালনায় নিযুক্ত থাকবে। যা ইরানের শাসনব্যবস্থার সঙ্গে অনেকটাই মিলে যায়।

১৯৭৮ সালে ইরানের ইসলামী বিপ্লবের পর থেকেও দেশটিতে ইসলামী শাসন চলছে। বর্তমানে দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি। সম্প্রতি নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন সাবেক বিচারপতি ইব্রাহিম রাইসি।
এমন পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোর বিশ্লেষণ বলছে, ইরানের শাসনব্যবস্থারই প্রতিফলন দেখা যেতে পারে নয়া আফগানিস্তানে।