জলবায়ু পরিবর্তন, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং করোনকালীন মহামারিতে বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন সংকট দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে বিশ্ব অর্থনীতিতে এর প্রভাব বিশাল। খাদ্য-সংকটসহ দৈনন্দিন ন্যূনতম চাহিদা পূরণে হিমশিম খাচ্ছে সাধারণ মানুষ। এই সংকট আগামী বছরগুলোতে আরও বাড়তে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার সম্পর্কিত মুখ্য কর্মকর্তা মারটিন গ্রিফিটস।
সিএনএনের খবরে জানা যায়, স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের মানবাধিকার সম্পর্কিত মুখ্য কর্মকর্তা মারটিন গ্রিফিটস বিশ্বের হতদরিদ্র মানুষদের বর্তমান অবস্থা এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের করণীয় সম্পর্কে বার্ষিক প্রতিবেদনে এমন উদ্বেগজনক তথ্য উপস্থাপন করেন।
মারটিন গ্রিফিটস জানান, চলতি বছর বিশ্বজুড়ে মানুষ বিভিন্ন কারণে সংকটে পড়েছে। তবে আগামী বছর ১৭ শতাংশ বেশি অর্থাৎ ২৭৪ মিলিয়ন (২৭ কোটি ৪০ লাখ) মানুষ আরও কঠিন সংকটে পড়বে। খাদ্য-সংকট, অর্থনৈতিক দুরবস্থা এবং দৈনন্দিন ন্যূনতম চাহিদা পূরণে প্রস্তুতি গ্রহণ করা প্রয়োজন। বিশেষ করে ১৮ কোটি ৩০ লাখ (১৮৩ মিলিয়ন) মানুষের অবস্থা হবে খুবই করুন। সংকট বাড়লে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে। হতদরিদ্রদের বাঁচানোর জন্য প্রয়োজন ৪১ বিলিয়ন ডলার।
মারটিন গ্রিফিটস বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ধাক্কা, পরিবেশদূষণ, দাঙ্গা-হাঙ্গামা, প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রতিদিনই বাস্তুহারা মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। ভিটে-মাটি হারিয়ে ভাসমান মানুষের তালিকাও বাড়ছে। ৬৩ দেশেই কঠিন সংকটে পড়া মানুষের সংখ্যা বেশি।
রিপোর্টে বলা হয়, মিয়ানমার, আফগানিস্তান, ইথিওপিয়ার মতো পরিস্থিতি মানুষের জীবন ব্যবস্থাকে নাজুক করে তুলেছে। সেই সঙ্গে করোনার প্রভাবে মানুষের স্বাস্থ্যগত অবনতিও হচ্ছে। গরিব দেশের অধিকাংশ মানুষই টিকা নিতে না পারা এর অন্যতম কারণ বলে উল্লেখ করেছেন গ্রিফিটস।
সংকট বেড়ে যাওয়ার আগেই পদক্ষেপ প্রয়োজন বলে মনে করছেন মারটিন গ্রিফিটস। তিনি বলেন, “মানবতা বিপন্ন হওয়ার আগেই ধনী দেশ ও বিত্তশালীরা এগিয়ে আসবেন বলে আশা করছি। দানশীল ব্যক্তি এবং সেবামূলক কাজে আগ্রহী সংস্থাগুলোর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি। তাদের যথাসাধ্য সহযোগিতা এমন পরিস্থিতি মোকাবিলায় ভূমিকা রাখবে।”
সারা বিশ্বে পরিচালিত হয় এই গবেষণা। গবেষণার জরিপের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রতিবেদনে গ্রিফিটস আরও বলেন, বিশ্বের মোট জনসংখ্যার শতকরা ১ শতাংশ বাস্তুচ্যুত হয়েছে এ বছর। চরম দারিদ্র্যও বাড়ছে। অনাহার-অর্ধাহারে দিনাতিপাতকারীর অধিকাংশই নারী এবং শিশু। তথ্যপ্রযুক্তির বিস্তার সত্ত্বেও নারী-পুরুষের বৈষম্য প্রকট আকার ধারণ করেছে। যার পরবর্তী চিত্র হবে আরও ভয়াবহ। ৪৩ দেশের ৪ কোটি ৫০ লাখ মানুষ দুর্ভিক্ষে পড়বে ২০২২ সালে।
খাদ্য-সংকট থেকে বিরাট জনগোষ্ঠীকে রক্ষার জন্য খাদ্যে উদ্বৃত্ত দেশগুলোর এগিয়ে আসা জরুরি। করোনা মহামারি, অর্থনীতি ভেঙে পড়া দেশগুলোর ১২০টি সিভিল-সোসাইটির মধ্যে ১০০টি এক যুক্ত বিবৃতিতে বিশ্বনেতাদের অর্থসহায়তা নিয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের এই কর্মকর্তা।
গ্রিফিটস তার প্রতিবেদনে আরও জানান, চলতি বছরের সংকটে বহু রাষ্ট্র, সংস্থা এবং ব্যক্তি খাদ্য, ওষুধ, চিকিৎসাসামগ্রী এবং অতি প্রয়োজনীয় সহায়তা দিয়েছেন, যা ছিল প্রশংসনীয়। সংকটে পড়া জনগোষ্ঠীর ৭০ শতাংশ তথা ১০ কোটি ৭ লাখ মানুষই সহযোগিতা পেয়ে ন্যূনতম চাহিদা পূরণে সক্ষম হয়েছে।