নেটফ্লিক্সের জনপ্রিয় সিরিজ ‘স্কুইড গেমে’ দেখা যায়, দক্ষিণ কোরিয়ার অর্থকষ্টে ভোগা একদল মানুষ ভাগ্যের চাকা ঘোরাতে যোগ দেন এক রিয়ালিটি শোয়ে। সেখানে প্রায় ৪ কোটি মার্কিন ডলার পুরস্কার জয়ের লোভে মৃত্যুঝুঁকিতে পড়েন সবাই।
এবার পর্দার সেই ঘটনা বাস্তবে রূপ নিয়েছে প্রতিবেশী দেশ উত্তর কোরিয়ায়। দেশটিতে স্কুইড গেম সিরিজ দেখায় নরকে পরিণত হয়েছে বেশ কয়েকজনের জীবন।
সিরিজটির পাইরেটেড কপি বিক্রির দায়ে একজনকে ফায়ারিং স্কোয়াডে অর্থাৎ গুলি করে মৃত্যুদণ্ডের সাজা দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে এই সিরিজ দেখা বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীসহ তাদের শিক্ষক, এমনকি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকেও আনা হয়েছে শাস্তির আওতায়। মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক পোস্টের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এ তথ্য।
চীন থেকে পেনড্রাইভে করে কোরিয়ান সিরিজটির ভিডিও ফাইল উত্তর কোরিয়ায় পাচার করেছিলেন মৃত্যুদণ্ডের সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তি। তার কাছ থেকে ভিডিও নিয়ে উচ্চমাধ্যমিকে পড়ুয়া সাতজন ছাত্র ধরা পড়ে।
পেনড্রাইভ কেনা শিক্ষার্থীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আর তার কাছ থেকে ধার করে ভিডিও ফুটেজ নেওয়া ছয়জনকে দেওয়া হয়েছে পাঁচ বছরের কঠোর সশ্রম কারাদণ্ড।
এছাড়া সেই শিক্ষার্থীদের স্কুলের শিক্ষক ও প্রশাসনকেও চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। কয়েকজনকে দেশটির প্রত্যন্ত অঞ্চলে খনিতে জোরপূর্বক শ্রমিকের কাজ করতে পাঠানো হয়েছে।
‘স্কুইড গেমে’র গল্পে ধনী-গরিবের বৈষম্য আর প্রশাসনের কঠোরতার সঙ্গে উত্তর কোরিয়ার আইনব্যবস্থারও সাদৃশ্য রয়েছে বলে মনে করেন অনেকে। রেডিও ফ্রি এশিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়, নিষিদ্ধ হওয়ার পরও সাম্প্রতিক সময়ে উত্তর কোরিয়ায় সীমান্ত দিয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে বিদেশি নাটক-সিনেমা চোরাই পথে ঢুকে পড়ছে। তাই বিদেশি সংস্কৃতি প্রদর্শন রোধে কঠোর হচ্ছে সরকার।
চীনের সীমান্তবর্তী দেশটির উত্তর হ্যামগং প্রদেশে এই ঘটনা ঘটে। বিদেশি মিডিয়া কনটেন্ট ঠেকাতে নিযুক্ত সরকারের বিশেষ স্ট্রাইক ফোর্স জড়িত ব্যক্তিদের আটক করে। এর মাধ্যমে প্রথমবারের মতো উত্তর কোরিয়া নাবালকদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হচ্ছে।
গত বছর “উসকানিমূলক চিন্তা ও সংস্কৃতি” নির্মূলে বিষয়ে একটি আইন জারি করে উত্তর কোরিয়া। এর আওতায় দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো ‘পুঁজিবাদী’ দেশের মিডিয়া কনটেন্ট দেখা বা বিতরণের সর্বোচ্চ শাস্তি রাখা হয় মৃত্যুদণ্ড। এ ঘটনার পর সেখানকার সব মার্কেটে মেমোরি কার্ডসহ স্টোরেজ ডিভাইস তল্লাশি করে দেখছে নিরাপত্তা বাহিনী।