নির্বাচনি প্রচারে বক্তৃতা দেওয়ার সময় এক হামলাকারীর গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে। কঠোর বন্দুক নিয়ন্ত্রিত দেশটিতে যা ইতিহাস হয়ে গেল।
রয়টার্স বলছে, ১৯৩০ এর দশকে যুদ্ধ-পূর্ববর্তী সময়ের সামরিক শাসনের দিন থেকে জাপানের ইতিহাসে এটিই প্রথম কোনো বর্তমান বা সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে গুপ্তহত্যার ঘটনা।
এর আগে শুক্রবার স্থানীয় সময় বিকাল ৫টা ৩ মিনিটে গুলিবিদ্ধ শিনজো আবেকে মৃত ঘোষণা করেছেন চিকিৎসকরা। তার চিকিৎসার দায়িত্বে থাকা নারা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান এক সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে নারা মেডিকেল ইউনিভার্সিটির চিকিত্সকরা জানান, শিনজো আবেকে যে বুলেটটি হত্যা করেছিল তা ‘তার হৃদযন্ত্রে পৌঁছানোর মতো গভীর ছিল’। বুলেটের আঘাতে আবের রক্তপাত হয়, চিকিৎসকরা অনেক চেষ্টা করেও রক্তপাত বন্ধ করতে পারেনি।
রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম এনএইচকে বলছে, দুইদিন পরে অনুষ্ঠিত হবে জাপানের উচ্চ কক্ষের নির্বাচন। সেটির প্রচারে অংশ নিয়ে শুক্রবার দেশটির পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর নারায় একটি রেলস্টেশনের বাইরে সমাবেশে বক্তৃতা দিচ্ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী আবে। এসময় পেছন থেকে তাকে উদ্দেশ্য করে দুবার গুলি চালানো হয়।
পুলিশ জানায়, ঘটনাস্থল থেকে সন্দেহভাজন তেতসুয়া ইয়ামাগামি নামে ৪১ বছর বয়সী এক যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। একটি বন্দুক উদ্ধার করেছে নিরাপত্তা বাহিনী। হামলাকারী পুলিশকে জানিয়েছে সে আবের প্রতি অসন্তুষ্ট ও তাকে হত্যা করতে চেয়েছিল।
জাপানের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী প্রধানমন্ত্রী ছিলেন শিনজো আবে। প্রথম দফায় ২০০৬ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত দেশটির ক্ষমতায় ছিলেন তিনি। এরপর ২০১২ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত টানা আট বছর শক্ত হাতে দেশ চালিয়েছেন আবে। দেশকে মুদ্রাস্ফীতির চক্র থেকে বের করতে বড় ভূমিকা ছিল তার। তিনি ক্ষমতাগ্রহণের সময় চীনের সঙ্গে জাপানের বিরোধপূর্ণ সম্পর্ক ছিল দীর্ঘদিনের। তবে আবের সুদক্ষ কৌশলে এ পরিস্থিতির উন্নতি ঘটে।
বন্দুক নিয়ন্ত্রণে জাপানে রয়েছে কড়াকড়ি নিয়ম। এমন দেশে এরকম রাজনৈতিক সহিংসতা বিরল। সবশেষ ২০০৭ সালে নাগাসাকির মেয়রকে ইয়াকুজা গ্যাংস্টার গুলি করে হত্যার ঘটনা ঘটে। এর আগে ১৯৬০ সালে বক্তৃতার সময় জাপানের সোশ্যালিস্ট পার্টির প্রধানকে ডানপন্থী এক যুবক সামুরাই ছোট তলোয়ার দিয়ে হত্যা করেছিল।