• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
মুক্তগদ্য

সুন্দর কে, সৌন্দর্য্য কারে কয়?


বুশরা আহমেদ
প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৩, ২০২২, ০২:২৬ পিএম
সুন্দর কে, সৌন্দর্য্য কারে কয়?

সৌন্দর্য্য কী, সুন্দর কাকে বলে, এসব নিয়ে আলাদা করে ভাবিনি কখনো। তবে বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় অস্বস্তি ও বিরক্তি টের পেতাম; বিশেষত অন্যের মুখাবয়ব নিয়ে কতকের আনন্দমুখর, তারস্বর আলোচনায়! আমি ঠিক ঠাওরে উঠতে পারি না ,এ নিয়ে আলোচনার কী আছে? তাদের এটি বলতেও পারি না যে, এটি নিয়ে আলোচনার কিছু নেই! এমনকি অপরাধবোধ নিয়ে নিজেও কতক অংশগ্রহণ করে ফেলি কখনো-সখনো (মানবকূলের মজ্জাগত আলোচনা কি না!) যাহোক সৌন্দর্য্যের তো কোনো তত্ত্ব নেই! মানদণ্ড বা সংজ্ঞাও! কেউ জানে না সৌন্দর্য্য আসলে কী, এটি কোথায় থাকে এবং কোন কোন ক্ষেত্রে বজায় রাখতে হয়! এবং চিন্তাভাবনাতেও যে এটি প্রতিফলিত হয়! কিংবা এটা কি কেবলই মুখমণ্ডলে সীমাবদ্ধ? মুখমণ্ডলের বর্ণনাতেই বিশেষণ হিসেবে গৃহীত? জানলে, অন্যের মুখ নিয়ে যে ব্যক্তি মুখরা, তার নিজ-আচরণ এত কদর্য কেন!

আবার দেখছি- একই বিষয়/জিনিস/চেহারা-কারও কাছে অপূর্ব তো কারও কাছে বিশ্রী, কুৎসিৎ! যাহোক এসব সমীকরণ মিলে না আমার। তবে সব মিলিয়ে আপেক্ষিক এই শব্দটি নিয়ে ভীষণ হইচই, মাতামাতি। তৈলমর্দন থেকে শুরু করে অহমবোধ! ভালোবাসা থেকে শুরু করে যুদ্ধ! সবশেষে এক বন্ধুর করা প্রশ্নে “তোর কাছে সুন্দরের সংজ্ঞা কী?” ভাবতে বসলাম ব্যাপারটি নিয়ে!

দেখলাম: যা কিছু প্রশান্তি দেয়,সেটাই সৌন্দর্য্য। কিছু জিনিস আমাদের চোখকে শান্তি দেয়, কিছু বিষয় আমাদের মনকে শান্ত করে,আর কিছু আছে,যা আমাদের আত্মাকে তৃপ্ত করে- সবই সৌন্দর্য্য।

এক্ষেত্রে, যে উদাহরণ টা দেব,সেটা দিতে ভালো না লাগলেও- সবচেয়ে বেশি প্রচলিত বা বহুল ব্যবহৃত বিধায় সেটা সহজবোধ্য হবে।

কোনো সুন্দর মানুষকে দেখলে আমাদের চোখে ভালো লাগে, চোখ আরাম পায়, আমরা তখন বলে উঠি "কি সুন্দর!" 

আবার একজনকে দেখে হয়তো চোখে ভালো লাগলো না, কিন্তু তার সাথে মেশার পর, তাকে জানা বা বোঝার পর আমরা দেখলাম তার মন যে কোনো বাহ্যিক সৌন্দর্য্যধারী মানুষকেও হার মানায়! তাহলে তাকেও কি আমরা সুন্দর বলবো না?

আরও পড়ুন : কোন মুখের সঙ্গে কেমন চশমা

তারপর ধরা যাক, শিল্প। সেটাকেও তো আমরা সুন্দর বলি! কারণ তা আমাদের মধ্যে ভালো লাগার অনুভূতি তৈরি করে। কারো কারো সে অনুভূতি তৈরি হয়, এই মাধ্যমে যুক্ত থেকে, কাজ করে, চর্চা করে, আবার কেউ কেউ শুধুই উপভোগ করে। আবার সৌন্দর্য্যের সাথে শিল্প এত ওতপ্রোতভাবে জড়িত যে ,আমরা প্রায়শই বলি: “সুন্দরের চর্চাই শিল্প” বা “শিল্প মাত্রই সুন্দর”।

আর, আত্মিক প্রশান্তি এত সহজ-ব্যাখ্যাযোগ্য নয়। এটি জীবনব্যাপী একটি চলমান প্রক্রিয়া। এটুকু বলা যায় যে, আমরা মহাবিশ্বের সাথে যখন কানেক্টেড হই বা কানেকশন ফিল করি, তখন সবই অনেক সুন্দর লাগে, সবই ভালো লাগে, সবই শান্তি দেয়; সেসবও সুন্দর।

আর, সবকিছুর উর্ধ্বে যেটি তা হল: সব বিষয়েরই সংজ্ঞা নির্ধারণ করা যায় না, বা নির্ধারণ করা ঠিক না। যার যেটা ভালো লাগে, যার কাছে যেটাকে সুন্দর লাগে সেটাই সুন্দর। সব বিষয়েরই একটা তত্ত্ব বা একটা নির্দিষ্ট পথ বা মত দাঁড় করানো যায় না যে সেটা অনুসরণ করেই আমরা কিছুকে ‘ওটা’ (এক্ষেত্রে ‘সুন্দর’) বলে চিহ্নিত করতে পারবো।

উদাহরণস্বরূপ, বেশ অনেক বছর আগে, পত্রিকায় একটা লেখা পড়েছিলাম, ওই বছরই ওটা জানা গিয়েছিল আর পরবর্তীকালে আমি ইন্টারনেটেও দেখলাম: মুখাবয়বের সৌন্দর্য্য নির্ধারণের তত্ত্ব! ‘গোল্ডেন রেশিও’ বলে একটা মাপজোখ বের করা গেছে যেটাকে সৌন্দর্য্যের কারণ বলে উল্লেখ করা হচ্ছে। রেশিও বা অনুপাত অনুযায়ী, কার মুখের আয়তনে চোখ দুটোর আয়তন কত, চোখ দুটো কত কাছাকাছি বা দূরত্বে অবস্থিত, দুই চোখের কতটা মাঝখানে ঠোঁট, নাক ইত্যাদি কী কী যেন! দুঃখিত অনেক আগে পড়েছি, হুবহু মনে নেই। এই অনুপাত থাকলেই নাকি কাউকে সুন্দর দেখায়! এখন এই সৌন্দর্য্য সংজ্ঞার উদাহরণ হিসেবে একজন নারীর ছবি দেয়া হয়েছে, তিনি কোনো একজন অভিনেত্রী বা মডেল, আমি চিনি না, বলা হয়েছে, তার চেহারায় এই ‘গোল্ডেন রেশিও’ পাওয়া গেছে, তাকে পারফেক্ট বিউটি বলা হচ্ছে। আপনারা বিশ্বাস করুন, আমি দুঃখিত এভাবে বলতে হচ্ছে, কিন্তু কোনো কোণ থেকেই তাকে আমার চোখে সুন্দর লাগাতে পারিনি, সেই বয়সে! তাহলে ওর মুখে “রেশিও” থেকে লাভটা কী হলো?

তাই যার যা কিছুই ভালো লাগে, সুন্দর লাগে, সেটাই সুন্দর।

 

Link copied!