জীবনের পটভূমি হয় শিল্প সৃষ্টির রসদ। অন্য সব শিল্পমাধ্যমের মতো কথাসাহিত্য এর ব্যতিক্রম নয়। একজন সমরেশ মজুমদারের সাহিত্যে তাই ডুয়ার্সের চা-বাগান অবধারিত। নিঝুম মফস্বল জলপাইগুড়িকে জীবন্ত করেন তিনি তার কলমে। কলকাতার স্কটিশ চার্চ বাদ থাকে না। ষাটের দশকের গনগনে নকশাল বিদ্রোহের উত্তাপে লাল ছাপ মারা থাকে তাই সমরেশের চরিত্ররা।
১৯৭৫ সালে বাংলা সাহিত্য আঙিনায় সমরেশ মজুমদারের আবির্ভাব। কলকাতায় তখন সেই আকাশে জ্বলজ্বলে ছিলেন সমরেশ বসু, মহাশ্বেতা দেবী, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ও শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের মতো নক্ষত্ররা। এর মধ্যে নিজের স্বকীয়তা চেনান সমরেশ মজুমদার।
ধ্রুপদি সাহিত্য ও জনপ্রিয় সাহিত্য নিয়ে তর্ক কোনো দিন থামবার নয়। কিন্তু আমরা একটু বিচার করে দেখলে বুঝব, জনপ্রিয় সাহিত্যিকরা নতুন পাঠক তৈরি করেন। বইয়ের বাজার ও প্রকাশনা বাণিজ্য বিকশিত হয় তাদের ঘিরে। সমরেশ মজুমদারের সৃষ্টি অনেকের কাছে সস্তা হিসেবে গ্রাহ্য হতে পারে। কিন্তু তার প্রভাব ডিঙিয়ে যাওয়ার সক্ষমতা অনেকের নেই। লেখক হয়ে জীবনকালে জনপ্রিয়তার আকাশ ছুঁয়ে দেখার সৌভাগ্য সবার হয় না। তিনি তা সম্ভব করেছেন।
৮১ বছরের জীবন শেষে সমরেশ মজুমদার এখন অনন্তভুবনে। কিন্তু তিনি বিলীন হওয়ার নন। সিনেমার চিত্রনাট্যে তার প্রভাব রইবে। সাহিত্যের মলাট ভেঙে তার চরিত্ররা আমাদের হৃৎস্পন্দনে থাকবেন অগণন প্রহর।
সীমান্ত কাঁটাতার গুঁড়িয়ে ‘ইন্ডিয়ান রাইটার’ হয়ে আমাদের কাছে পৌঁছেছেন এ লেখক। বহুবার নানা নিমন্ত্রণে বাংলাদেশে এসেছেন তিনি। এই সাহিত্য আয়োজনের অকালে ভারত-বাংলা মৈত্রীর দূত যেন হয়ে উঠেছিলেন সমরেশ মজুমদার। তার কলমের নিথর হওয়া আর তাকে হারানোর শোক শুধু একটি পরিবার, পশ্চিমবঙ্গ বা ভারতের নয়। সর্বজনের লেখক সমরেশ মজুমদারের চলে যাওয়ার বেদনা বরং সমষ্টির।