• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর, ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জন্মদিনে বিপ্লবের কবি নেরুদাকে স্মরণ


হাসান শাওন
প্রকাশিত: জুলাই ১২, ২০২৩, ০৯:১৭ এএম
জন্মদিনে বিপ্লবের কবি নেরুদাকে স্মরণ
পাবলো নেরুদা (১২ জুলাই ১৯৪০-২৩ সেপ্টেম্বর ১৯৭৩)

কবিতার অক্ষর যখন বই থেকে পালায়, ভর করে জনতার সিনায়, শোণিতে, শরীরে। তখন বিপ্লরের ডাক দেওয়া একজন পাবলো নেরুদা জন্ম নেন। রিকার্দো এলিয়েসের নেফতালি রেইয়েস বাসোয়ালতো নামের এ কবির জন্ম ১৯০৪ সালের আজকের দিন ১২ জুলাই চিলিতে।

কবিতার সর্বোচ্চ সামর্থ্য প্রমাণ করে গেছেন যিনি জীবনজুড়ে। মলাটবন্দী না থেকে যার সৃষ্টি হয়েছে গণমুখী। শাসকের ফ্যাসিস্ট জুলুম রুখতে, প্রেমে, কামনায়, প্রকৃতি বন্দনায় নিয়মিত ফিরতে হয় যার কাব্যে।

এক জীবনে বহু কিছু ছিলেন পাবলো নেরুদা। দায়িত্ব সামলেছেন কূটনীতিবিদ থেকে সিনেটরের। তবু শেষ পর্যন্ত তিনি কাব্যের পরশ রাঙানো কবি। যিনি বিশ্বাস করতেন কিছুই রাজনীতি বিচ্ছিন্ন নয়। মাত্র ২০ বছর বয়সে তার লেখা ‘বিশটি ভালোবাসার কবিতা ও একটি হতাশার গান’ কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়। কবিতার পথে তার এ যাত্রা থামেনি আমৃত্যু। নেরুদাকে বলা হয় ২০ শতকের সবচেয়ে বেশি অনুদিত কবিতার কবি। কাব্যগুণে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেছেন ১৯৭১ সালে। কবিতার সামর্থ্যেই তিনি তারকা। তাকে দেখতে, তার কবিতা শুনতে ব্যাপক সাড়া পড়ত সর্বত্র। স্টকহোম থেকে নোবেল পুরস্কার নিয়ে চিলিতে ফেরার পর তিনি স্টেডিয়ামে প্রায় ৭০ হাজার জনতার সামনে কবিতা পড়ে শোনান। গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজের ভাষায় তিনি বিশ শতকের সেরা কবি।

নেরুদা অন্য সবকিছুর চেয়ে আলাদা তার রাজনৈতিক বিশ্বাসের জন্য। তার বন্ধু ছিলেন লাতিন আমেরিকার বিপ্লবী ও গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত চিলির প্রথম প্রেসিডেন্ট সালভাদোর আয়েন্দে। ১৯৪৫ সালে নেরুদা চিলির কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দেন। সেই সঙ্গে শুরু রাজনৈতিক রোষানলে পড়া। একপর্যায়ে বাধ্য হন দেশত্যাগে। পাড়ি জমান আর্জেন্টিনা। আয়েন্দের সরকার তিন বছরও টেকেনি। ১৯৭৩ সালের ১১ সেপ্টেম্বর সে দেশে অভ্যুত্থান ঘটায় মার্কিন সিআইএ ও চিলির সামরিক বাহিনী। খুন হন আয়েন্দে। তার মৃত্যুর ১২ দিন পর নেরুদার মৃত্যু হয়। এ মৃত্যু নিয়ে বহু বিতর্ক আছে। অনেকে মনে করেন নেরুদার মৃত্যু ছিল পরিকল্পিত খুন। এরপর বিদেশি শক্তির স্বার্থের পিনোশের একনায়কতান্ত্রিক জুলুম পর্ব শুরু।

পাবলো নেরুদা এমন কবি ছিলেন যাকে সমাহিত করা হয় কারফিউ দিয়ে। সামরিক বাহিনীর কর্ডন ভেঙে জনতা তার কফিন ফুলে পূর্ণ করে তোলে। তার কাব্য শক্তির সীমাহীন প্রভাব গুণে এটি সম্ভব হয়েছিল। বিশ্বব্যাপী বিপ্লবের প্রতিশব্দ রূপে বিরাজিত আর্নেস্তা চে গুয়েভারা অন্যতম প্রিয় কবি ছিলেন এই নেরুদা।

নশ্বর নেরুদার দেহ প্রয়াণে বিলীন হয় না। তিনি নিম্নবর্গের কাছে ফিরে আসেন তার সেই কবিতার লাইনের মতোই, “চাই সেই কবিতা যা একই সঙ্গে ঘাম আর ধোঁয়ায় ঠাঁসা, যা একই সঙ্গে ফুল আর পেশাবের গন্ধভরা, যা আমাদের পরিহিত পোশাকের মতোই অশুচি কিংবা আমাদের দেহের মতোই দূষিত।”
 

Link copied!