• ঢাকা
  • বুধবার, ৩০ অক্টোবর, ২০২৪, ১৪ কার্তিক ১৪৩১, ২৬ রবিউস সানি ১৪৪৬

গানযোদ্ধা বব ডিলানের জন্মদিন


হাসান শাওন
প্রকাশিত: মে ২৪, ২০২৩, ০৯:০৫ এএম
গানযোদ্ধা বব ডিলানের জন্মদিন

একজন বব ডিলান ছাড়া সংগীত পূর্ণতা পায় না। কারণ, তিনি বিশ্বাস করেন শিল্পের এ ধারার শক্তি অসীম। তিনি বলে থাকেন, “গান সবই পারে। একবার দাঁড় করিয়ে ফেললে তা সম্পন্ন করতে পারে সময়ের করণীয়টুকু।” ষাটের দশকের ভিয়েতনাম যুদ্ধ বিরোধিতা থেকে এখনের যুক্তরাষ্ট্রের নির্মম বর্ণবাদী নিপীড়নের বিরুদ্ধে এই গানই তার অস্ত্র।  

আমাদের সময়ের এই জীবিত কিংবদন্তির আজ ৮২তম জন্মদিন।

শুভ জন্মদিন, গানযোদ্ধা বব ডিলান!

ডিলানের থেকে শেখার আছে আপসহীনতা। শিল্পীর নিজের মতো থাকার স্বাধীনতার এক নজির তিনি। পুরস্কার আর স্বীকৃতির জন্য যিনি লালায়িত নন। কোনো কিছুকে পাত্তা না দিয়ে নিজের কাজে নিষ্ঠ বব ডিলানকে আলাদা রাখে।      

২০১৬ সালে স্টকহোমের সুইডিশ নোবেল একাডেমি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারের জন্য বব ডিলানের নাম ঘোষণা করে। অনেক বিতর্ক হয় তখন। জীবনজুড়ে গানের মানুষ ডিলান। আর গ্রহের সবচেয়ে সমাদৃত পুরস্কারটি এলো সাহিত্যের জন্য। তখন সুইডিশ একাডেমির পক্ষ থেকে জবাব আসে এমন ভাষায়—

“ডিলানকে বেছে নেওয়া বিস্ময়কর মনে হতে পারে বটে। তবে পেছনে ফিরে তাকালে আপনারা হোমার (গ্রিক কবি) ও সাপফোকেও দেখতে পাবেন। তারা যেসব কাব্য রচনা করেছিলেন, সেসব লেখা হয়েছিল কেবল শোনার ও পরিবেশন করার জন্য, মাঝেমধ্যে যন্ত্রানুষঙ্গে। বব ডিলানও সেটাই করেন। তাকেও পড়া যায়।”  

কিন্তু এমন দৃশ্যময় গীতিকবি আহ্লাদে মাতেননি নোবেল জয়ে। তিনি নীরব থাকেন দীর্ঘ সময়। বিশ্ব গণমাধ্যম তার পিছু নেয়। উদ্দেশ্য, জানা এ নিয়ে তার প্রতিক্রিয়া। কিন্তু বব ডিলান নিশ্চুপ। সুইডিশ একাডেমিও যেন আশ্চর্য হয়। শিল্পীর এমন আচরণকে প্রতিষ্ঠানটি ‘শিষ্টাচারহীনতা ও ঔদ্ধত্য’ হিসেবে আখ্যায়িত করে।

‘বব ডিলান’ নামে দুনিয়া কাঁপালেও তার প্রকৃত নাম রবার্ট অ্যালেন জিমারম্যান। কবি টমাস ডিলান দ্বারা প্রভাবিত হয়ে তার এই নাম বদল। মাত্র দশ বছর বয়সে সংগীতে পথচলা তার। কবিতা লেখা, গিটার, পিয়ানো, হারমোনিকা বাজানো শুরু তখন থেকে। গানের মানুষ হবেন তিনি এই ছিল তার পণ। ১৯৫৯ সালে বব ডিলান ভর্তি হন মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ে। কিন্তু পড়া শেষ করেননি তিনি। ক্যাম্পাস জীবনে তাকে বেশি দেখা যেত ক্যাফেটেরিয়ায়।

১৯৬০ সালে নিউইয়র্কে আসেন বব। কলাম্বিয়া রেকর্ডস প্রকাশ করে তার প্রথম অ্যালবাম ‘দ্য ফ্রিহুইলিং বব ডিলান’। সংগীত আঙিনা টের পায় ভিন্ন ধারার এক কীর্তিমানের আগমন। একই সঙ্গে লোকসংগীত ও রক মিউজিক প্রবাহিত যার গানে। বাদ থাকে না যুদ্ধ, বর্ণবাদ এবং নানা সামাজিক অসংগতি বিরোধিতা। দ্রুত জনপ্রিয় হয় তার গান।

ডিলান বলে থাকেন, “আমার অস্ত্র নেই। কলম আছে।” গিটার, পিয়ানো আর হারমোনিকায় তিনি সে কলমের লেখাকে সংগীতে রূপ দেন। গানের তারকার বাইরে বিশ্বজনের কাছে তিনি পরিচিত অ্যাক্টিভিস্ট হিসেবে। পিট সিগার, জোন বায়াজ, জর্জ হ্যারিসনের মতো শিল্পী পাশাপাশি তাই উচ্চারিত হয় তার নাম। ৬০-এর দশকে নতুন আমেরিকা গড়ার স্বপ্ন দেখা মার্টিন লুথার কিংয়ের নেতৃত্বে নাগরিক আন্দোলনে তিনি সক্রিয় ছিলেন। এই বয়সেও অপ্রকাশ্য নয় তার দ্রোহ। মার্কিন মুলুকে নৃশংস বর্ণবাদী নিপীড়নে পুলিশের দ্বারা খুন হওয়া জর্জ ফ্লয়েডের জন্য আট বছর পর অ্যালবাম নিয়ে ফেরেন ডিলান। দাসপ্রথা বিরুদ্ধেও তিনি অক্লান্ত তার গানে।

শুধু নিজের দেশ আর ভাষায় বন্দী থাকেনি বব ডিলানের গান। বাংলা সংগীতের বরেণ্য ব্যক্তিত্ব কবির সুমন, অঞ্জন দত্তসহ অনেকেই প্রভাবিত হয়েছেন তার দ্বারা।

আমরা ঋণী যে, এই সৃষ্টিমান বাংলাদেশের পাশে ছিলেন ৭১-এর গণহত্যার শিকার হওয়া প্রহরেও। ঐতিহাসিক ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ এ বব ডিলান গেয়েছিলেন ৬টি গান। কিন্তু ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’র ফিনিক ছোটানো সরকার স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও বাংলাদেশের এই পরম বন্ধুর ঋণ শোধ করেনি। জাতি হিসেবে তা আমাদের দীনতাই প্রকাশ করে। কেন তা হলো না, মাথায় আসে না। এর জবাবও যেন ডিলানের গানেই পাই—দি আনসার ইজ ব্লেয়িং ইন দ্য উইন্ড...

Link copied!