• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফজলে হাসান আবেদ : এক দূরদ্রষ্টার নাম


হাসান শাওন
প্রকাশিত: এপ্রিল ২৭, ২০২৩, ০২:৩৮ পিএম
ফজলে হাসান আবেদ :  এক দূরদ্রষ্টার নাম

ফজলে হাসান আবেদ ধরায় এসেছিলেন ১৯৩৬ সালের আজকের দিন ২৭ এপ্রিল। সিলেটের বানিয়াচং তখনও টের পায়নি দূরদ্রষ্টার আবির্ভাব।

১৯৫৪ সালে আইএসসি পাস করেন তিনি। সে বছরই ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞানে। ১৯৫৬ সালের অক্টোবর মাসে স্কটল্যান্ডের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমান তিনি। চোখে স্বপ্ন দেশের প্রথম নেভাল আর্কিটেক্ট হবেন। কিন্তু যখন তিনি বুঝতে পারলেন এই পড়াশোনাটা দেশের মানুষের কাজে আসবে না তখন তিনি এ নিয়ে আগ্রহ হারান। দুবছর এ বিষয়ে পড়ে তা অসমাপ্ত রেখে লন্ডনে চলে আসেন। এবার ভর্তি হন অ্যাকাউন্টিংয়ে। ভাবলেন চার্টাড অ্যাকাউটেন্ট হয়ে দেশে ফিরে যাবেন। কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্টিংয়ের ওপর চার বছরের প্রফেশনাল কোর্স সমাপ্ত করেন তিনি। পড়া শেষ হয় ১৯৬২ সালে। এরপর লন্ডন, কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। এক পর্যায়ে আর বিদেশ ভালো লাগে না তার। দেশের পথে পা বাড়ান ফজলে হাসান আবেদ ১৯৬৮ সালে। ৭০-এর নির্বাচনের আগে ১১ নভেম্বর রাতে দেশে খুব শক্তিশালী একটি ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস আঘাত হানে। এই ঘূর্ণিঝড় আক্রান্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর তাগিদ অনুভব করেন ফজলে হাসান আবেদ। ক’জন বন্ধু মিলে তখন গড়ে তুললেন ‘হোপ’ নামে একটি সংস্থা। শুরু হয় সব হারা মানুষের মাঝে হেলপের কার্যক্রম। শুরু হলো মনপুরা দ্বীপকে ফের গড়ে তোলার কাজ।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে ফজলে হাসান আবেদ সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি লন্ডনে যাবেন। তার ভাবনায় ছিল ইংল্যান্ডে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধে সহায়তার জন্য একটি সংগঠন দাঁড় করানো। গড়ে উঠল ‘অ্যাকশন বাংলাদেশ’ নামে একটি সংগঠন। তাদের পাঠানো অর্থ ব্যয় হতো ভারতের শরণার্থী শিবিরে থাকা মানুষ ও মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তায়। ১৯৭২ সালের ১৭ জানুয়ারি দেশে ফেরেন তিনি।

ভারত থেকে শরণার্থীরা তখন ফিরে এসেছেন। প্রতিটি গ্রাম তখন ধ্বংসস্তূপ। ঘরে ঘরে খাদ্যের জন্য হাহাকার। সুপেয় পানি নেই। নেই চিকিৎসা সেবার ন্যূনতম ব্যবস্থা। এ অবস্থায় সিলেটের শাল্লা এলাকায় কাজের সিদ্ধান্ত নিলেন ফজলে হাসান আবেদ। এজন্য দরকার প্রতিষ্ঠান। নাম দিলেন ‘বাংলাদেশ রিহ্যাবিলেটশন অ্যাসিসট্যান্স কমিটি’। সংক্ষেপে ‘ব্র্যাক’।

সুনামগঞ্জের শাল্লা দিরাই ভাটি অঞ্চল ছিল ব্র্যাকের প্রথম কর্মক্ষেত্র। এখানেই শুরু হয় পরবর্তী সময়ে মহীরুহ হয়ে ওঠা প্রতিষ্ঠানটির কাজ। সব মিলিয়ে ১৮৭টি গ্রামের ৮৮ হাজার মানুষকে নিয়ে কর্মকাণ্ড পরিচালনা শুরু হয়।

দেশের গণ্ডি পেরিয়ে ফজলে হাসান আবেদের উন্নয়ন ভাবনা প্রশংসিত হয়েছে পৃথিবী জুড়ে। বহু দেশে এখন কাজ করছে ব্র্যাক। তিনি সামাজিক ক্ষেত্রে অনন্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অসংখ্য পুরষ্কারে ভূষিত হয়েছেন।

২০১৯ সালের ২০ ডিসেম্বর শুক্রবার ৮৩ বছর বয়সে এই কর্মে অক্লান্ত যোদ্ধা প্রয়াত হন।

Link copied!