• ঢাকা
  • রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আহা! জীবন


রাজীব কুমার দাশ
প্রকাশিত: অক্টোবর ২৯, ২০২২, ০২:৩৪ পিএম
আহা! জীবন

চলার পথে, অনেক মানুষের সাথে দেখা হয়, কথা হয়। হিতাকাঙ্ক্ষী সেজে থাকা অনেক অনেক মানুষ চোখে পড়ে। চলার পথে, এই পর্যন্ত যেই পরিমাণ লেগে থাকা সেজে থাকা  হিতাকাঙ্ক্ষী, আমাকে ছেলে বানিয়েছে, সত্যি সত্যি যদি ওদের বাবা মনে করতাম, তাহলে কয়েকশ বাবা পেয়ে, নতুন-নতুন মা খোঁজে দিগ্বিদিক হারিয়ে যেতাম। যে পরিমাণ নারী, তাদের হারানো সন্তান মনে করে, মা’র স্বীকৃতি দিয়ে হাউমাউ করে
কেঁদে কেঁদে বলেছেন :
‘তুমি আমার সন্তান। আমার আর কোনো
সন্তানের দরকার নাই।’
যদি, সত্যি সত্যি এঁনাদের ‘মা’ মনে বাবা
খোঁজে ইতিউতি হেঁটে চলতাম :

মনে হয়, এতদিনে হেঁটে হেঁটে আমাজন জঙ্গলে চলে যেতাম। জঙ্গম মনে প্রতিদিন হয়ে যাই, কারোর না কারোর বড়ো মেঝো সেজো  ছোট ভাই। কারোর মামাতো ফুফাতো ভাই। কারোর অক্ষম আক্রোশ গোপন মনের শালা। খামোখা মনে, চাচা জ্যাঠা,  মিছেমিছি অগুনতি গোপন মনের হাবাগোবা ব্যর্থ প্রেমিক,কারোর দাদু ভাই আরো কত কত কী!

দিস্তা-দিস্তা কাগজ শেষ করে একনাগাড়ে নিবিষ্ট নয়নে হাতে কলমে স্বার্থান্ধ মানিত পালিত পিতাদের, পিতা স্বর্গ, পিতা ধর্ম মনে যেইমাত্র তিল তুলশী বিশুদ্ধ ঘৃত মধু বাসমতী চলের গুঁড়ো পিণ্ড দিয়ে সন্তুষ্ট করে দিয়েছি, আমায় মানীত পালিত মনের বাবারা সেই যে, স্বর্গীয় হাসিতে চিরতরে হারিয়ে গেলেন! কোনোদিন আমার খোঁজ করেননি। একটিবারও স্বর্গ হতে ইন্দ্রদেবের রাজসভা ভোজসভা সেরে অপ্সরা নৃত্য দেখে, মর্ত্যবাসী হাবাগোবা মুখচোরা ‘আমি’ ছেলেটার কথা মনে করেননি।

যে পবিত্র মা বলেছিল, ‘তুমি ছেলেটা একমাত্র আমার। তোমার গর্ভধারিণী মা’র সাথে আমার অনেক ঝগড়া আছে। আমার এখন মনে পড়ছে, ‘আমার ছেলে খোকার সাথে আমার চেহারার তেমন মিল নাই। তোমার মা’কে পেলে এখন জিজ্ঞেস করতাম? কেন কেন তিনি আমার বুক খালি করে কুমুদিনী হাসপাতাল হতে তোমাকে বদল করে নিয়ে গেলেন?’ এই দেখ, খোকা! আমিই তোমার আসল মা। তোমার দুটি চোখ কান গ্রীবা, তোমার মায়া ভরা হাসি, ভয় ডর ছাড়া চাহনি! দেখ দেখ! কী এক অন্ত্যমিল। তোমার কথিত মাকে কিন্তু ছাড়ছি না। শুনেছি বাবা, এখন নাকি টেস্ট দিলে সব বেড়িয়ে আসে?
-জ্বী  খালাম্মা।
-ছি! আম্মা বলো, আম্মা। ‘এই পৃথিবীর চন্দ্র সূর্য গ্রহ নক্ষত্র খসে পড়ে ধ্বংস হতে পারে, তুমি ছেলেটা কিন্তু আমারি থাকবে।’

বাবার মতোন মাকেও যেই মাত্র বিদায় করেছি! সেই যে মাতৃহারা হলাম,মাদের পরে কখনও খুঁজে পাইনি।

ভাইদের অবস্থা আরো ভয়াবহ। মাথা নীচু করে চলা ভদ্রবেশি আচরিত  কথিত ছোট ভাই হাবাগোবা আচরণ নিয়ে আমার সামনে দাঁড়িয়ে যখন বলত, ‘ভাইজান আপনি ছাড়া আমাকে দেখার মতোন কেউ নাই।’
যেই মাত্র ভায়ের হাতে মুখে অভিলাষী মনের সকল দায়িত্ব তুলে দিয়েছি, ভাইটি একলাফে হয়েছে মহিষাসুর।

এত এত বোনের আবদার কী করে কীভাবে সামলিয়ে আনব! আমার চিন্তার কমতি ছিল না। বোনদের সুখি করতে ছিলাম, দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। উঠেপড়ে লেগে গেলাম। দুখি-সুখি বোন সামলিয়ে, একজন বোনেরও ভাইফোঁটা পেলাম না।

কেউ কস্মিনকালেও আমার প্রেমিকা হতে চায়নি। আমি ঠিকঠাক মতো, ওদের চোখের ভাষা, মুখের ভাষা, বডি ল্যাংগুয়েজ বুঝতে পারতাম না।
মুখের ভাষা সত্যি মনে করে হাবুডুবু খেয়ে বার বার কুল হারিয়েছি। তীর খুঁজে পাইনি। সারাদেশের অসংখ্য ভাতিজা ভাগিনা মনে আমি কারোর চাচা, কারোর মামা হই। স্বার্থান্ধ ভাই-বোন আমায় ছেড়ে চলে গেছে। তাতে কী? ভাগিনা ভাতিজা তো পাশে আছেই। সেই মনে, এক ভাতিজা তার পরিচয় দিয়ে বলল :
-আঙ্কেল
: জ্বী, বলুন।

আমি আপনার হারিয়ে-যাওয়া তোতা ভায়ের ছেলে সিভিল ইঞ্জিনিয়ার আবদাল বলছি।
: বলুন।
-আঙ্কেল, আমার পার্টনার টাকা মেরে চলে গেছে বছর দুয়েক আগে। আপনি যদি বলে দেন, টাকাগুলো নিশ্চিত পেতে পারি।

: আমি তো ওদের চিনি না। আইনসিদ্ধ ও হবে না।
-আঙ্কেল, একবার বলে দেখেন না। টাকা উদ্ধারের পরে আমি অনেক কিছু করব। আপনি কিন্তু না করতে পারবেন না।

যাই হোক, ইতস্তত : মনে ফোন করে পরিচয় দিলাম। বুঝিয়ে বললাম। ভদ্রলোক আমার সম্পর্কে জেনে বললেন, আপনি যখন বলছেন, আমি দিয়ে দেবো। তবে, আপনার ভাতিজাকে পরীক্ষা করলে আপনি
নিশ্চিত হেরে যাবেন।

মাসখানেক পরে ভাতিজা জানালেন, টাকা পেয়েছে। সে মহাখুশি। আমি তার প্রমিজ
মনে করিয়ে দিলাম।

রাত প্রায় বারোটা হবে। মেসেঞ্জার খুলে দেখি, ভাতিজার বিপদ। বেডে শুয়ে কাতরাচ্ছে, কথা বলতে পারছেন না, মোটরসাইকেল এক্সিডেন্ট। হাত পা ব্যান্ডেজ। চোখগুলো খোলা, চপল চৌর্য উন্মাদ চাহনি। তবুও তার কথামতো মেডিকেল সেন্টারে খবর নিলাম। ছবিগুলো ডাক্তারদের দেখালাম। ডাক্তার
বললেন, এই নামের রোগী আসেননি, তাছাড়া এই এক্সিডেন্টাল ছবি নিজেই তৈরি করে পাঠিয়েছে। তারপরেও  ঘটনাস্থলে গেলাম। ট্রাফিক পুলিশসহ আশে পাশে জিজ্ঞেস করলাম। সবাই বললেন, কই! না তো।

মনে-মনে ভীষণ ধাক্কা খেলাম। এদিক-ওদিক তাকিয়ে  ভাতিজাকে ফোন দিলাম। ভাতিজা বললেন, ‘আঙ্কেল, আমি হাসপাতাল ছেড়ে এইমাত্র শ্বশুরবাড়ি চলে এসেছি।’

আহা!  জীবন।

Link copied!