ডায়রিয়া নাকি কলেরা! অনেক অভিভাবক বুঝতে পারে না শিশু কীসে আক্রান্ত? আসলে ডায়রিয়া থেকে কখনো কলেরা হয় না। শিশুর ডায়রিয়ার একটি কারণ হলো কলেরা।
ডায়রিয়া ও কলেরার পার্থক্য, হওয়ার প্রধান কারণ এবং এর সমাধানের উপায় সংবাদ প্রকাশকে জানিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু নিউরোলোজী বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. নাজনীন আক্তার। তিনি বলেন, “শিশুর ঘন ঘন পাতলা পায়খানা হচ্ছে এটাকে আমরা বলি ডায়রিয়া। দুই বছরের নিচে যেসব শিশুদের বয়স তাদের ডায়রিয়া বেশির ভাগ সময় রোটাভাইরাস থেকে হয়। ব্যাকটেরিয়াজনিত ও প্যারাসাইটজনিত কারণেও ডায়রিয়া হতে পারে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যাদের কম তাদের ফাঙ্গাল ডায়রিয়া হয়। দুই বছরের নিচের শিশুদের ভাইরাসজনিত কারণে ডায়রিয়া হয় বেশি।
লক্ষণ দেখে আমাদের বুঝতে হয় কোনটা ডায়রিয়া, কোনটা ডিসেনট্রি, কোনটা কলেরা। শীতের শুরুতে বা শেষে রোটাভাইরাস ডায়রিয়াটা বেশি হয়। এটা প্রতিরোধের জন্য ভ্যাকসিনও আছে। এই ভাইরাসের লক্ষণ হলো শিশু প্রথমে বমি করবে। তারপর পাতলা পায়খানা। প্রথম ছয় মাস সাধারণত ডায়রিয়া হয় না। ছয় মাসের পর থেকে ডায়রিয়াটা বেশি দেখা যায়।”
অন্যদিকে দুই বছর বয়সের উপরের শিশুদের ডায়রিয়ার একটা কারণ হলো কলেরা জীবাণু! এটা একটা ব্যাকটেরিয়া। পানিটা যে খাওয়ানো হয় শিশুকে কোনো কারণে সেখানে কলেরার জীবাণু চলে আসতে পারে। বিশুদ্ধ পানি পান না করলে কলেরা হওয়ার সুযোগ আছেই।
যেমন পুকুরের পানি, খালের পানি, নদীর পানি যেখানে কলেরার জীবাণু আছে, সেটা খেলেই মূলত কলেরা হতে পারে। এ ছাড়া টাইফয়েডের জীবাণু থেকেও কলেরা হয়।
রোটাভাইরাসজনিত ডায়রিয়া ও কলেরা পৃথক করার উপায় জানিয়ে ডা. নাজনীন আক্তার বলেন, “ডায়রিয়ায় শিশুর ছাকরা ছাকরা পায়খানা বের হবে। কলেরা হলে পায়খানা হবে চাল ধোঁয়া পানির মতো। পায়খানা আগে হবে, বমি হবে পরে। খুব দ্রুত তৈরি হবে পানিশূন্যতা।”
ডায়রিয়া ও কলেরার সমাধান জানিয়ে তিনি বলেন, “শিশুর ডায়রিয়া হলে তার পানিশূন্যতা কতটুকু আছে এটা বুঝেই শিশুকে ওরস্যালাইন খাওয়াতে হবে। শিশুর বয়স দুই বছরের নিচে হলে তাদেরকে আমরা বলি প্রতিবার পাতলা পায়খানার পরে ১০ থেকে ২০ চা চামচ করে ওরস্যালাইন খাওয়াতে। যাদের বয়স দুই বছরের উপরে তাদের আমরা ওরস্যালাইন খেতে বলি ২০ থেকে ৪০ চা চামচ। স্যালাইন খাওয়ার পাশাপাশি শিশুকে স্বাভাবিক খাবার দেয়া যাবে।”
অন্যদিকে, কলেরা সন্দেহ হলে বয়স অনুযায়ী চিকিৎসা করতে হবে। যদি পায়খানার সাথে রক্তও যায় সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খাওয়াতে হবে এন্টিবায়োটিক।’
সবশেষে ডা. নাজনীন বলেন, “পানিশূন্যতা তীব্র দেখা দিলে অনেক সময় শিশুর পরিস্থিতি গুরুতর হয়ে যায়। সেক্ষত্রে কিডনি নষ্ট হয়ে পড়ে। এর থেকে বাচ্চার মৃত্যুও হতে পারে। তাই তীব্র পানিশূন্যতা দেখা দিলে শিশুকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করার পরামর্শ দেওয়া হয়।