বিশ্বজুড়েই লাফিয়ে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। দেশেও এর চিত্র ভয়াবহ। প্রতিদিন মৃত্যুর রেকর্ড গড়ছে। সংক্রমণও ছাড়িয়ে যাচ্ছে পুরোনো রেকর্ড। টিকাদান কর্মসূচিও চলছে। তবে এসবের মধ্যেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপর জোর দিচ্ছে সরকার।
সম্প্রতি এক গবেষণায় উঠে এসেছে, করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার প্রবণতা অনেকাংশে ব্যক্তির রক্তের ওপর নির্ভর করে। রক্তের গ্রুপ অনুযায়ী ব্যক্তির সংক্রমণের ঝুঁকি কমবেশি থাকতে পারে।
কাউন্সিল অব সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডিয়ান রিসার্চে এই তথ্য উঠে আসে। ১০ হাজারের বেশি মানুষের ওপর গবেষণা পরিচালনা করেছেন ১৪০ জন চিকিৎসক। গবেষণার পর তারা জানিয়েছেন, করোনা সংক্রমিত ব্যক্তিদের অধিকাংশের রক্তের গ্রুপ ‘এবি’ ও ‘বি’। তুলনামূলকভাবে ‘ও’ গ্রুপের মানুষের শরীরে সংক্রমণের ঝুঁকি কম থাকে। ও গ্রুপের ব্যক্তির যদি করোনায় সংক্রমিতও হন, তাদের মধ্যে উপসর্গ কম থাকবে বা কিছুক্ষেত্রে উপসর্গ পরিলক্ষিত হবে না।
গবেষণায় আরও বলা হয়, যারা নিরামিষ খাবার খান তাদের করোনায় সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা কম। কারণ, নিরামিষ খাবারে পুষ্টিগুণ বেশি থাকে। যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। এ ছাড়া যারা সুস্থ হয়ে উঠেছেন, তাদেরও বেশি পরিমাণে নিরামিষ খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন গবেষকরা।
এদিকে এই গবেষণা তথ্যের উল্টো কথা বলছেন আরেক দল গবেষক। তারা বলছেন, রক্তের গ্রুপ ‘এ’ ‘বি’. ‘এবি’ কিংবা ‘ও’ কোনো রক্তের গ্রুপেই করোনা সংক্রমণের ওপর প্রভাব ফেলে না। অর্থাৎ করোনা সংক্রমণের ঝুঁকির সঙ্গে রক্তের গ্রুপের এর কোনো সম্পর্ক নেই।
মহামারির শুরুর দিকে, কিছু প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল যে A- টাইপ রক্তের লোকেরা কোভিডের জন্য বেশি সংবেদনশীল ছিল, যখন O- টাইপ রক্তের লোকেরা কম ছিল।
জনস হপকিন্স সেন্টার ফর হেলথ সিকিউরিটির একজন সিনিয়র স্কলার জানান, ১ লাখ ৮ হাজার রোগীর তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে রক্তের ধরন এবং কোভিড ঝুঁকির মধ্যে কোনো যোগসূত্র নেই।
স্কলার বলেন, “এই বৃহৎ অধ্যয়ন থেকে দেখা যাচ্ছে যে, রক্তের ধরন এবং সংবেদনশীলতা বা তীব্রতার মধ্যে কোনো সম্পর্ক নেই। সংক্রমণে অন্যান্য কারণ সম্ভবত উপস্থিত ছিল।”
চীন থেকে প্রথম প্রাথমিক রিপোর্ট প্রস্তাব করেছিল, রক্তের ধরন করোনা ঝুঁকি প্রভাবিত করতে পারে। ইতালি ও স্পেনের পরবর্তী সময়ে এই বিষয়ে গবেষণা করা হয়। গবেষণায় এই তথ্য সমর্থন করেছেন।
এদিকে ডেনমার্ক ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে অন্যান্য গবেষণায় এই বিষয়ে মিশ্র এবং বিরোধপূর্ণ ফলাফল দেওয়া হয়।
বিভিন্ন গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য পরিষ্কার করার জন্য, ইউটারার মারে ইন্টারমাউন্টেন মেডিকেল সেন্টার হার্ট ইনস্টিটিউটের ডাক্তার জেফরি অ্যান্ডারসনের নেতৃত্বে গবেষকরা, ইন্টারমাউন্টেন হেলথ কেয়ারসহ হাজার হাজার রোগীর তথ্য বিশ্লেষণ করেছেন। বিশ্লেষণের গবেষণায় ১১ হাজার ৫০০ জন করোনাভাইরাস পজিটিভ হয়েছেন। বাকিরা নেগেটিভ ছিলেন।
চলতি বছর ৫ এপ্রিল জ্যামা নেটওয়ার্ক ওপেনে রিপোর্টটি উপস্থাপন করেন গবেষকরা। যেখানে তারা জানান, রক্তের ধরন কোভিড সংক্রমণের ঝুঁকিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেনি।
নিউইয়র্কের মাউন্ট সিনাই সাউথ নাসাউ-এর মেডিসিন এবং হাসপাতালের মহামারি বিশেষজ্ঞ ডাক্তার. অ্যারন গ্ল্যাট বলেন, “মানুষের এক ধরনের রক্তের গ্রুপ থাকলে আতঙ্কিত হওয়া উচিত অথবা অন্য রক্তের গ্রুপ থাকলে আশ্বস্ত হওয়া উচিত। এটির কোনো ব্যবহারিক পার্থক্যের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। সুরক্ষা ব্যবস্থা সবার জন্য়ই সমান। শঙ্কামুক্ত বা শঙ্কিত হওয়ার বিষয়টিও সমান।”
সূত্র: হেলথডে