করোনার লকডাউন পরিস্থিতিতে গৃহবন্দী শিশুরা। যত দিন যাচ্ছে শিশুরা মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ছে। শিশু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্ট্রেস এবং উদ্বেগের মতো সমস্যা বাচ্চাদের মধ্যেও দেখা দিচ্ছে। দীর্ঘ সময় স্কুল বন্ধ থাকা, চার দেয়ালের মাঝে সারাদিন কাটানো, শারীরিক অসুস্থতা কিংবা পরিবারের কাউকে হারানোর মতো বিভিন্ন কারণে শিশুরা মানসিক চাপ অনুভব করছে। বাচ্চাদের মধ্যে মানসিক চাপ ও উদ্বেগ বাড়তে থাকলে তা আচরণে প্রকাশ পায়। এমনকি তা স্বাস্থ্যের জন্যও অত্যন্ত ক্ষতিকারক।
বাচ্চা মানসিক চাপে ভুগছেন কিনা তা দেখার দায়িত্ব বাব-মার। বাচ্চাদের মধ্যে স্ট্রেসের লক্ষণগুলো শনাক্ত করে মা-বাবার সেই বিষয়গুলোতে আরো সতর্ক হওয়া উচিত।
বাচ্চার মানসিক চাপ বোঝা যাবে তার আচরণে। কীভাবে বুঝবেন তা জানাব এই আয়োজনে।
ঘুমের মধ্যে ভয় পাওয়া
মানসিক চাপে থাকলে বাচ্চারা ঘুমের মাঝে আতঙ্কিত হয়ে উঠে। ঘুমের মধ্যে তাদের দুঃস্বপ্ন আসতে পারে। পড়াশোনার চাপে,বাড়িতে কোনও সমস্যা হলে, কারও কারও ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্ট, পরীক্ষার আগে কিংবা মনের মধ্যে কোন ভয় থাকলে বাচ্চাদের ঘুমের মধ্যে দুঃস্বপ্ন দেখে। যদি বাচ্চার বার বার রাতে ঘুম ভেঙে যায় কিংবা ঘুমোতে না পারে তবে বুঝে নিবেন আপনার সন্তান মানসিক চাপে আছে।
খাওয়া-দাওয়ায় অনিহা
অস্থিরতা বা মানসিক চাপ থাকলে বাচ্চার খাওয়া-দাওয়ায় অনিহা চলে আসবে। হঠাত্ করে বাচ্চার খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন দেখলে বুঝে নিবেন মানসিক চাপে রয়েছে।
অমনোযোগী হয়ে যাবে
পড়াশোনায় বা বাইরে কোনও কাজে আগ্রহ না থাকা, অমনোযোগী হওয়া বাচ্চাদের মানডিক চাপের লক্ষণ। অন্যদিকে বাচ্চাদের ওপর পড়াশোনা এবং খেলাধুলায় আরও ভালো পারফর্ম করার চাপ থাকলে মানসিক চাপ বাড়তে পারে।
আক্রমণাত্মক ব্যবহার
বাচ্চাদের কোনও পরিস্থিতি কঠিন মনে হলে বা কোন বিষয়ে চাপ থাকলে তারা অনেক সময় আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে। সবকিছু এড়িয়ে যাওয়া বা চিৎকার করা সাধারণত চাপ এবং উদ্বেগের লক্ষণ। অনেক সময় বড়দের সঙ্গে বেয়াদবী বা খারাপ ব্যবহার করতেও দ্বিধা করে না। এমন আচরণে বুঝে নিবেন বাচ্চা প্রচন্ড মানসিক চাপে রয়েছে।
ঘুমের মধ্যে বিছানায় প্রস্রাব
বাচ্চারা মানসিক চাপ বা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগলে অনেক সময় ঘুমের মধ্যেই বিছানায় প্রস্রাব করে দেয়। শিশুদের মধ্যে এই প্রবনতা বেশি। বাচ্চার ওপর রাগ না করে এর পিছনের কারণটি বোঝার চেষ্টা করুন। মানসিক চাপে এমনটা হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে শারীরিক অসুস্থতায়ও এমনটা হতে পারে।
অতিরিক্ত চাপ দেওয়া
স্কুলে পড়াশোনায় বা বাড়িতে কোনও কারণে বাচ্চারা চাপে থাকে এবং আপনার বাচ্চার মনের অবস্থা যদি আপনি বুঝতে না পারেন তাহলে তা মনের ওপর গভীর প্রভাব ফেলে। বাচ্চারা আত্মবিশ্বাস হারিয়ে বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়-স্বজনের থেকে নিজেকে আলাদা করে নেয়।
একা থাকা
বাচ্চারা যদি একা থাকা শুরু করে তবে বুঝতে হবে তাদের মনের অবস্থা ভালো নয়। মানসিক চাপের কারণে তারা নিজেদের আলাদা করে নেয়।
বাচ্চার মানসিক চাপ কমাতে অভিভাবকরা যা করবেন-
- বাচ্চার সঙ্গে যেকোনও সমস্যার ব্যাপারে কথা বলুন।
- চেষ্টা করুন বাচ্চাকে নিশ্চিত করতে যে আপনি তার পাশে আছেন।
- যে কোনও সমস্যা সমাধানের বাচ্চাকে সহায়তা করুন।
- বাচ্চার শারীরিক কোনও সমস্যা হলে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলুন।