আজ ৮ অক্টোবর শুক্রবার, বিশ্ব ডিম দিবস। প্রতিবছর অক্টোবরের দ্বিতীয় শুক্রবার দিবসটি পালিত হয়। ‘প্রতিদিন ডিম খাই , রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াই’ এই স্লোগানেই পালিত হচ্ছে দিবসটি।
ডিমকে ন্যাচারাল মাল্টি ভিটামিন বলা হয়। একটি সম্পূর্ণ ডিমে থাকে ১৪৩ ক্যালরি। আর কার্বোহাইড্রেট থাকে ০.৭২ গ্রামের মতো। প্রোটিন থাকে ১২.৫৬ গ্রাম, ফ্যাট থাকে ৯.৫১ গ্রাম। এছাড়া ফসফরাস থাকে ১৯৮ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম ১৩৮ মিলিগ্রাম, জিঙ্ক থাকে ১.২৯ মিলিগ্রাম। তাই সুস্থ দেহের জন্য ডিম বেশ উপকারী।
ডিম খাওয়া শারীরিক বিভিন্ন রোগের সমাধান করতে পারে। তবে এটি নির্ভর করে কে কীভাবে ডিম খাচ্ছেন। অনেকভাবেই রান্না করে ডিম খেয়ে থাকি আমরা। ডিমের ওমলেট, ডিমের পোচ যেমন পছন্দ তেমন করেই ডিম খাওয়া হয়। তবে ডিম সেদ্ধ খেলেই উপকার বেশি বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যবিদরা।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেন, সেদ্ধ ডিমে প্রাকৃতিকভাবেই প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন আছে। সকালের নাশতায় একটি সেদ্ধ ডিম খেলে ৬ গ্রামের বেশি প্রোটিন পাওয়া যায়।
সেদ্ধ ডিমে মনো-আনস্যাচুরেটেড ও পলি-আনস্যাচুরেটেড চর্বি থাকে। এগুলো স্যাচুরেটেড ফ্যাটকে সরিয়ে দিয়ে তার স্থান দখল করে, যা রক্তের কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমিয়ে ফেলে। ডিমে থাকা ওমেগা ৩ এই কাজটি করতে সাহায্য করে। আবার ডিম এইচডিএল বা ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ায় প্রায় ১০ শতাংশ।
সেদ্ধ ডিম খেলে হৃৎপিণ্ড ভালো থাকে। হার্টের জন্য উপকারী মনো-আনস্যাচুরেটেড ও পলি-আনস্যাচুরেটেড চর্বি। এটি ইনসুলিনও নিয়ন্ত্রণ করে। রক্তের চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখে। বিশেষ করে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের জন্য এ ধরনের ফ্যাটগুলো খুবই উপকারী। সেদ্ধ ডিমের দুই-তৃতীয়াংশই এ ধরনের উপকারী ফ্যাট দিয়ে গঠিত।
এছাড়া ডিমের একটি প্রধান খাদ্য উপাদান হলো ভিটামিন এ। এটি রেটিনায় আলো শুষে নিতে সহায়তা করে। কর্নিয়ার পাশের মেমব্রেনকে রক্ষা করে, যা রাতকানার ঝুঁকি কমায়। সেদ্ধ ডিম খেলে খাবার তালিকায় ৭৫ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন এ যুক্ত হয়।
সেদ্ধ ডিমে রয়েছে ভিটামিন ডি, যা হাড় ও দাঁত শক্ত করে। ভিটামিন ডি রক্তের ক্যালসিয়ামের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে, যা দেহের হাড়ের কাঠামো মজবুত ও শক্ত হয়। হাড় ক্ষয় রোধ হয়।
সেদ্ধ ডিমে থাকে ভিটামিন ই, যা কোষ আর ত্বকে থাকা ফ্রি র্যাডিকেল ধ্বংস করে। এতে ক্যানসারের ঝুঁকি কমে এবং নতুন কোষ তৈরিতে সাহায্য করে। এটি ব্রেস্ট ক্যানসারের ঝুঁকিও কমিয়ে দেয়।
নারী স্বাস্থ্যে প্রতিদিন ৫০-৬০ শতাংশ প্রোটিন দরকার, যা ডিম থেকেই পাওয়া যায়। একটি সেদ্ধ ডিম থেকে ৬.৫ গ্রাম প্রোটিন মেলে।
শরীরের কোলাইনের ঘাটতি হলে লিভারের নানা সমস্যা বা নিউরোলজিক্যাল ডিসঅর্ডার হয়। ডিমে প্রায় ৩০০-৩৫০ মাইক্রোগ্রাম কোলাইন থাকে। সেদ্ধ ডিম খেলে লিভার ও স্নায়ু ভালো থাকে।
নখ মজবুত করে সালফার। ডিমে সালফারের উৎস রয়েছে। নখকে সুন্দর ও সাদা রাখতেও সাহায্য করে সালফার।
অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতায় নারী ও শিশুরা বেশি ভোগে। শরীরে পর্যাপ্ত আয়রন থাকলে অ্যানিমিয়া হয় না। সেদ্ধ ডিম খেলে আয়রন পাওয়া যায়, যা রক্তাল্পতা সমস্যার সমাধান করে।
শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। সেদ্ধ ডিম খেলে ঘন ঘন সর্দি-কাশি বা জ্বরের সমস্যাও কেটে যায়। কারণ ডিমে থাকা জিঙ্ক ইমিউনিটি সিস্টেমকে অনেকটাই শক্তিশালী করে।
ডিমের কুসুম ওজন বাড়িয়ে দেয় না। বরং সেদ্ধ ডিম খেলে ওজন কমে। কারণ ডিম অতিরিক্ত ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করে।
সেদ্ধ ডিমে প্রায় ৮০ ক্যালোরি রয়েছে। এর মধ্যে ৬০ শতাংশ ক্যালোরি আসে চর্বি থেকে। ফলে সকালে সেদ্ধ ডিম খেলে সারা দিন শক্তি পাওয়া যায়। ডিমের কুসুম না খেয়ে শুধু সাদা অংশ খেলেও অর্ধেক ক্যালোরি পাওয়া যায়।
পুষ্টিবিদদের মতে, দিনে একটি নয়, অন্তত দুটি ডিম কুসুমসহ খেতে পারবেন। আর যদি এর চেয়েও বেশি ডিম খেতে চান তাহলে সাদা অংশ খেতে পারেন।