যেকোনো বয়সেই এখন শরীরে ডায়াবেটিস বাসা বাঁধে। অতিরিক্ত জাঙ্ক ফুড খাওয়া, মানসিক চাপ, ব্যায়াম না করা, বংশগত কিংবা অনিয়মিত জীবনযাপন এগুলোই ডায়াবেটিসের কারণ হতে পারে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকলে ধীরে ধীরে শরীরের নানা অংশে সমস্যা দেখা দেয়। এমনকি দাঁতের সমস্যাও বেড়ে যায়। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানান, ফুলে যাওয়া মাড়ি শরীরের রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধির লক্ষণ হতে পারে।
সমীক্ষায় দেখা গেছে, শরীরে উচ্চ রক্ত শর্করার মাত্রা কিডনি সমস্যা, ব্রেন স্ট্রোক এবং হার্ট অ্যাটাকের মতো প্রাণঘাতী অবস্থার সৃষ্টি করে।
ডায়াবেটিস বেড়ে যাওয়ার কিছু উপসর্গ রয়েছে, যা দেখে বুঝে নিন ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছ। রক্ত পরীক্ষা ছাড়া যেভাবে বুঝবেন রক্তে শর্করার পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
- অতিরিক্ত খিদে পাওয়া
- ঘন ঘন প্রস্রাব
- অল্পতেই ক্লান্ত হয়ে যাওয়া
- দাঁতের ক্ষয়, মাড়ি ফুলে যাওয়া, ঠোঁট ফাটা
- নিয়মিত দুইবার ব্রাশ করার পরও মুখ থেকে দুর্গন্ধ বের হওয়া
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, ফুলে যাওয়া মাড়ি শরীরের রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধির লক্ষণ হতে পারে। রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে গেলে মাড়ি অতিরিক্ত লালচে হয়ে যায়। দাঁত আলগা হয়ে যাওয়ার মতো লক্ষণও দেখা যায়। পাশাপাশি মুখ থেকে দুর্গন্ধ ছড়ায়।
বারডেমের দন্ত বিভাগে রোগীদের ওপর জরিপ চালিয়ে দেখা যায়, রোগীদের মধ্যে ৭৮ শতাংশই মাড়ির বিভিন্ন রোগ ও ২১ শতাংশ ডেন্টাল ক্যারিজে আক্রান্ত। সাদা ক্ষত, ক্যানডিয়াসিস ও লিউকোপ্লাকিয়ার সংখ্যাও কম নয়। ডায়াবেটিস রোগীদের মুখ ও দাঁতের বিশেষ যত্ন নিতে হয়।
- রক্তের শর্করা অবশ্যই নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
- দাঁত তোলা বা মুখের শল্যচিকিৎসার ক্ষেত্রে ওষুধ বা ইনসুলিনের মাত্রা ও নির্দিষ্ট সময় সম্পর্কে চিকিৎসককে জানাতে হবে।
- অস্ত্রোপচারের কারণে খাদ্যবিরতির প্রয়োজন হয় তবে এ সময় ওষুধ বা ইনসুলিন কীভাবে ব্যবহার করবেন, তা জেনে নিন।
- ডায়াবেটিস রোগীদের দন্তমল জটিল হয়। রক্তে শর্করা বেড়ে গেলে তা জীবাণুকে বাড়িয়ে তুলে। এতে দাঁতের মাড়ি ফুলে যায় এবং রক্ত বের হয়। প্রতিবার খাওয়ার পর নরম ব্রাশ দিয়ে দাঁত পরিষ্কার করুন, ডেন্টাল ফ্লস ব্যবহার করুন, আলগা দাঁত ব্যবহার করলে তা পরিষ্কার রাখুন এবং বছরে দুইবার দন্তচিকিৎসকের কাছে যাবেন।
প্রাথমিক পর্যায়ে ডায়াবেটিসের কোনো রোগী সব সময় তৃষ্ণার্ত বোধ করেন। এতে ঠোঁট ফাটা, মুখে ব্যথা, এমনকি কোনো খাবার বা পানীয় গিলতে কষ্ট হওয়ার মতো সমস্যা হয়।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানান, ডায়াবেটিস থাকলে নার্ভের কার্যক্ষমতা ও সংবেদনশীলতা কমে যায়। এতে দাঁতের শিরশিরানি বা ব্যথা চট করে টের পাওয়া যায় না। বছরে দুইবার ডাক্তারের কাছে গিয়ে দাঁত পরীক্ষা করালে ছোট সমস্যা থাকতেই তা ধরা পড়ে।
এছাড়া ডায়াবেটিস থাকলে মুখের মধ্যে সাদাটে প্যাঁচ, ছোটখাটো গোটার মতো দেখা যেতে পারে। মুখের লালা নিঃসরণ কমে যায়। তাই কফি, অ্যালকোহল বা অতিরিক্ত চা পানে সমস্যা হয়। ‘সুগার ফ্রি চিউইংগাম’ ব্যবহারে মুখের লালা নিঃসরণ কিছুটা বাড়ে।
ডায়াবেটিসের রোগীদের ভাঙা বা ধারালো দাঁত থেকে অনেক সময় মুখে ঘা হতে পারে। এই বিষয়েও সতর্ক থাকতে হবে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানান, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের প্রথম শর্ত জীবনযাত্রার পরিবর্তন। খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনা। এতে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ থাকে। খাবারের তালিকা থেকে সবচেয়ে আগে কমাতে হবে কার্বোহাইড্রেট।
ভাত, রুটি খেলে কোনোভাবেই রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে আসবে না। বরং খাদ্যতালিকায় শাকসবজি, মাছ রাখতে হবে। শস্য, ফল, বাদাম, সবুজ শাকসবজি এবং দুধ থেকে তৈরি পণ্য খেলে পেটও ভরবে এবং রক্তে শর্করার পরিমাণও বাড়বে না। সেই সঙ্গে নিয়মিত শারীর চর্চা করতে হবে।
সূত্র: ওরাল হেলথ