ডায়াবেটিস সম্পর্কে অনেক ভ্রান্ত ধারণা আছে। অনেকে মনে করে থাকেন বেশি মিষ্টি বা চিনি খেলে ডায়াবেটিস হয়। আসলে বেশি মিষ্টি খেলেই যে ডায়াবেটিস হবে, কথাটি ঠিক নয়। মূলত পেটের ভেতরে অবস্থিত অগ্ন্যাশয় থেকে নিঃসৃত হরমোন ‘ইনসুলিন’ রক্তের শর্করা বা গ্লুকোজ ভেঙে শরীরে শক্তি উৎপন্ন করে। অগ্ন্যাশয় থেকে ইনসুলিন নিঃসরণ না হলে বা কম হলে রক্তে গ্লুকোজ বা চিনির পরিমাণ বেড়ে যায়। এ অবস্থাই ডায়াবেটিস। কোনো কারণে ইনসুলিন কাজ করতে না পারলেও ডায়াবেটিস হয়।
বিশ্বজুড়ে দিন দিন বেড়েই চলেছে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা। এই রোগ থেকে সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়া সম্ভব নয়। তবে নিয়ম মেনে চলনে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। মূলত রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকলে এ রোগটি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
গবেষণায় দেখা গেছে, সবুজ শাকসবজি খেলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি ১৪ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়। তাই বিশেষজ্ঞরা নিয়মিত প্রচুর পরিমাণে শাকসবজি খাওয়ার পরামর্শ দেন। তাই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে খাদ্যতালিকার দিকে প্রথমে নজর দিন। যেসব খাবারে ক্যালরি এবং কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ কম, সে ধরনের খাবার ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপাদেয়।
পালংশাক: ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য পালংশাক খুব উপকারী। এতে আছে প্রচুর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। অল্প সেদ্ধ করে খেলে এর থেকে বেশি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট পাওয়া যায়। পালংশাক ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সবচেয়ে সুপরিচিত খাবার।
গাজর: গাজরে ক্যালরি এবং সুগারের উপাদান খুবই কম। গাজরে থাকা পটাশিয়াম কোলেস্টরেল এবং ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। গাজর চর্বি কমাতে সাহায্য করে বলে ওজনও কমে। এ ছাড়া ডায়াবেটিস প্রতিরোধে যেসব ভিটামিন এবং খনিজের প্রয়োজন তাও বিদ্যমান গাজরে।
টমেটো: চমৎকারভাবে দেহের ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখে এই টমেটো। টমেটোতে খুব কম পরিমাণে শর্করা থাকে। কিন্তু ক্রোমিয়ামের ভালো উৎস টমেটো, যা রক্তে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
ব্রকলি: ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অতিব জরুরি একটি সবজি হলো ব্রকলি। ব্রকলি ডায়াবেটিসের সঙ্গে যুদ্ধ করে রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে। ব্রকলি হৃদরোগের বিরুদ্ধেও বেশ কার্যকর।
করলা: করলা ইনসুলিন রেজিস্টেন্স কমিয়ে রক্ত থেকে শরীরের কোষগুলোর সুগার গ্রহণ করার ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। তা ছাড়া করলা শরীরের কোষের ভেতর গ্লুকোজের বিপাক ক্রিয়াও বাড়িয়ে দেয়। ফলে রক্তের সুগার কমে যায়। ডায়াবেটিসের রোগীরা রক্তে চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত করলা খেতে পারেন।
বাঁধাকপি: শীতকালীন সবজি পাতাকপি বা বাঁধাকপি। পাতাকপিতে অনেক কম শর্করা রয়েছে। এই সবজিটি টাইপ-২ রোগীদের ডায়াবেটিসের ঝুঁকি হ্রাস করে এবং টাইপ-১ রোগীদের রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখে।
ঢেঁড়স: ঢেঁড়সের মধ্যে থাকা উপকারী ফাইবার দেহের গ্লুকোজের মাত্রা কমিয়ে রাখে। তাই ডায়াবেটিস কমাতে ঢেঁড়স অত্যন্ত উপকারী একটি সবজি। ডায়াবেটিক রোগীদের প্রতিদিন খাবারের তালিকায় ঢেঁড়স রাখা উচিত।
মটরশুঁটি: ফাইবার বা আঁশযুক্ত খাবার ডায়াবেটিস রোগীর জন্য অনেক উপকারী। মটরশুঁটি ফাইবারে ভরপুর একটি সবজি। মটরশুঁটি রক্তের গ্লুকোজের মাত্রাকে সাধারণ মাত্রায় রাখে।
ক্যাপসিকাম: ক্যাপসিকামের রয়েছে নানা উপকারিতা। আপনার প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় একটি করে ক্যাপসিকাম রাখলে অনেক রকম অসুখ থেকে মুক্তি পেতে পারেন। এই সবজিটি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতেও কার্যকর এবং রক্তে শর্করার মাত্রাও স্থির রাখে। তা ছাড়া ক্যাপসিকামের অ্যাক্টিভেটিং থার্মোজেনেসিস এবং হজম শক্তি উন্নত করার ক্ষমতা রয়েছে, যা দ্রুত ওজন কমাতেও সহায়ক।
সবুজ চা: সবুজ চা মানুষের শরীরে ইনসুলিনের মতো কাজ করে; ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সাহায্য করে এটি।
ওয়াইল্ড স্যামন: ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য অন্যতম একটি ঔষধি খাদ্য ওয়াইল্ড স্যামন। এতে উচ্চ মাত্রায় ওমেগা-৩ রয়েছে। ফ্যাটি অ্যাসিডের একটি বড় উৎস এটি। ডায়াবেটিস রোগের পাশাপাশি কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকিও কমায় ওয়াইল্ড স্যামন।
মাছ: গবেষণায় দেখা যায়, মাছের ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড ইনসুলিনের সংবেদনশীলতাকে উন্নত করতে সাহায্য করে। এটি গ্লুকোজের ঘনত্ব কমিয়ে ডায়াবেটিস রোগের ঝুঁকি হ্রাসে সহায়তা করে। এতে চর্বিহীন প্রোটিন রয়েছে।
টক দই: টক দই একটি স্বাস্থ্যকর খাদ্য। এতে চিনির পরিমাণ খুব কম। এটি রক্তে চিনির পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে। দুপুরের খাবারের সঙ্গে বা বিকেলের নাস্তায় স্যান্ডউইচের সঙ্গে টক দই খাওয়া যায়। এটি ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সাহায্য করে।
ডিমের সাদা অংশ: ডিম পেশি গঠনকারী খাদ্য। এতে উচ্চমানের প্রোটিন রয়েছে। ডিমের সাদা অংশে উচ্চ মানের চর্বিহীন প্রোটিন এবং কম মাত্রায় কার্বোহাইড্রেট রয়েছে যা ২ ধরনের ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সাহায্য করে।
লেবু: লেবু ও লেবুজাতীয় ফল ডায়াবেটিস প্রতিরোধে কাজ করে। গবেষণায় দেখা গেছে, শরীরে ভিটামিন সির অভাবে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি রয়েছে। তবে লেবুজাতীয় ফল খেলে ভিটামিন সির অভাব পূরণ হয়। জাম্বুরা, কমলা, লেবু এবং লাইমস ডায়েবেটিস নিয়ন্ত্রণে ইনসুলিনের মতো কাজ করে।
বাদাম: গবেষণায় দেখা গেছে, ডায়াবেটিসের ঝুঁকি প্রায় ২১ শতাংশ পর্যন্ত কমায় চীনাবাদাম। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ১ আউন্স আখরোট বা কাজুবাদাম ডায়াবেটিস প্রতিরোধে বিস্ময়করভাবে কাজ করে। নিয়মিত বাদাম খেলে হৃদরোগের ঝুঁকিও কমে।