মাতৃত্ব নারীর পূর্ণাঙ্গ রূপ। গর্ভধারণ করা সব নারীই স্বপ্ন থাকে। স্বপ্নপূরণের যাত্রাও হয় সুন্দর। তবে নিরাপদ গর্ভধারণের জন্য শারীরিকভাবে ফিট থাকা জরুরি। বর্তমান সময়ে নারীদের শারীরিক বিভিন্ন জটিলতা থাকে। যার কারণে গর্ভধারণেও দেখা দেয় নানা সমস্যা। সঠিক পুষ্টিকর খাবার কিংবা প্রয়োজনীয় খাবার না পেলে নারীদের শরীরে ভিটামিনের অভাব দেখা দেয়। যা নারীর গর্ভধারণের পথে বাধা হয়ে দাড়ায়।
যেসব নারী গর্ভধারণের চেষ্টা করছেন, তাদের কিছু বিষয়ে সতর্ক থাকতে হয়। বিশেষ করে কিছু খাবার যেমন খেতে হয়, তেমনি কিছু খাবারকে এড়িয়ে যেতে হয়। কারণ কিছু খাবার গর্ভধারণের ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, নারীদের গর্ভধারণের চেষ্টায় যেসব খাবার এড়িয়ে চলতে হবে, চলুন জেনে নেই এই আয়োজনে।
ট্রান্স ফ্যাটযুক্ত খাবার
ট্রান্স ফ্যাটযুক্ত খাবার নারীদের প্রজনন ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। গর্ভবতী হতে চাইলে প্রথমে ফাস্টফুডজাতীয় খাবারকে এড়িয়ে চলুন। কেক, চিপস, ক্যান্ডি খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। বিশেষজ্ঞরা জানান, ট্রান্স ফ্যাটযুক্ত খাবার সরাসরি নারীর প্রজনন ক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে। মাত্র ২% অতিরিক্ত ট্রান্স ফ্যাট খাওয়ার ফলে নারীর প্রজনন ক্ষমতা ৭৫% পর্যন্ত কমে যায়। এসব খাবার কোলেস্টেরল মাত্রাও বাড়িয়ে দেয়। সেই সঙ্গে শরীরের ওজন বেড়ে যায়। তাছাড়া ট্রান্স ফ্যাটযুক্ত খাবার শরীরে ইনসুলিন উৎপাদনকেও বাধা দেয়।
ডিম
ডিম স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। নারীদের প্রতিদিন ডিম খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। কিন্তু ডিমকে সঠিকভাবে রান্না করতে হবে। সঠিকভাবে রান্না না করলে ডিম থেকে স্যালমোনেলা ভাইরাস সংক্রমণের সম্ভাবনা থেকে যায়। যার ফলে নারীদের গর্ভধারণে প্রভাবে পড়ে। তাছাড়া অরগানিক ডিম খাওয়া উচিত। ভেজাল ডিম খেলে নারীদের প্রজনন ক্ষমতায় প্রভাব ফেলে।
মটরশুঁটি
বিশেষজ্ঞরা জানান, যারা গর্ভধারণের চেষ্টা করছেন তারা মটরশুটি খাওয়া এড়িয়ে যাবেন। নিয়মিত মটরশুটি খেলে নারীদের গর্ভধারণে প্রভাব ফেলে। সয়াবিনের মতো, মটরশুটিতে থাকা রাসায়নিক শুক্রাণুকে বাধা দেয়। যার ফলে গর্ভধারণে নারীদের সমস্যা হয়।
পনির
অনেকে পনির খেতে খুব পছন্দ করেন। নিশ্চিত করুন, সেই পনির নির্বীজকৃত দুধ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। অন্যথায় তা আপনার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। নির্বীজ করা না থাকলে এর মধ্যে ব্যাকটেরিয়া থাকে। তাই ভালোভাবে ফুটিয়ে এরপর ঘরেই পনির তৈরি করে খান। অন্যথায় বাজার থেকে কেনা পনিরকে এড়িয়ে চলুন।
কেনা বিশুদ্ধ পানি
বাড়িতে কি কেনা বিশুদ্ধ পানি পান করেন? এই পানি কতটা নিরাপদ? অনেক সময় এসব পানিতে বিভিন্ন রাসায়নিক মেশানো হয় বিশুদ্ধ করার জন্য়। যা হয়তো শুরুতে কোনো সমস্যা করছে না। কিন্তু এক সময় এটি শরীরে মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে। এই ধরণের পানিতে ট্রেস মাইক্রোবসও থাকে। যার কারণে এসব পানি প্রচুর পরিমাণে পান করলে শরীর থেকে লবণ বের করে দেয়। তাই যতটা সম্ভব বাড়িতেই পানি বিশুদ্ধ করে পান করা ভালো।
শর্করাযুক্ত খাবার
চিনি ও শর্করাযুক্ত খাবার নারীদের ডিম্বাশয়ের উপর প্রভাব ফেলে। যেসব নারীর পিসিওএস-র সমস্যা রয়েছে তাদের শর্করাজাতীয় খাবার এড়িয়ে চলা উচিত। চিনি ও কার্বোহাইড্রেট খাবার পুষ্টিগুণ নষ্ট করে দেয়। যা নারীর প্রজনন ক্ষমতা ঠিক রাখতে গুরুত্বপূর্ণ । তাছাড়া এসব খাবার ইনসুলিন মাত্রা বাড়াতে শুরু করে, যা নারীর ডিম্বাশয়ের ওপর প্রভাব ফেলে। নারীদের গর্ভনিষেকের সম্ভাবনাও কমিয়ে দেয়। পিসিওএস-যুক্ত নারীদের এই ধরণের সমস্যা বেশি হয়। বিশেষ করে অনিশ্চিত ডিম্বস্ফোটোনের সমস্যা ভোগে নারীরা।
সোয়াজাতীয় খাবার
যেসব নারী গর্ভধারণে চেষ্টা করছেন তাদের সোয়াজাতীয় খাবারও এড়িয়ে চলা উচিত। সোয়ায় কিছু যৌগ রয়েছে। নারীদেহের এস্ট্রোজেনের মতোই এটি কাজ করে। যৌগগুলো নিষেকের জন্য ডিম্বাণুর দিকে এগিয়ে যাওয়া শুক্রাণুকে ধ্বংস করে দেয়। যার ফলে গর্ভধারণের সম্ভাবনা কমে যায়।
উচ্চ পারদযুক্ত মাছ
যেসব মাছে উচ্চ অনুপাতে পারদ রয়েছে তা নারীর প্রজনন ক্ষমতার জন্য ক্ষতিকর। যারা গর্ভধারণে চেষ্টা করছেন বা গর্ভবতী হয়েছেন তারা এসব মাছ খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। সালমন, চিংড়ির মধ্যেই সীমিত থাকুন।
সোডাযুক্ত পানীয়
সোডাযুক্ত পানীয়কে বিদায় জানাতে হবে। এতে উচ্চ পরিমানে ফ্রুক্টোজ যুক্ত ভুট্টা সিরাপ থাকে। তাছাড়া এগুলো প্রিজারভেটিভ করে রাখা হয়। মজাদার স্বাদ যোগ করার জন্য বিভিন্ন উপাদানও ব্যবহার করা হয়। যা শরীরে বিষক্রিয়া ঘটায়। যার প্রভাব সরাসরি পড়তে পারে নারীর প্রজনন ক্ষমতার উপরে।
কাঁচা খাবার
কাঁচা খাবার খাওয়ার আগে সাবধান হোন। অধিকাংশ কাঁচা খাবারে ব্যাকটেরিয়া থাকে। যা গর্ভধারণে বাধা সৃষ্টি করে। এমনকি অনেক সময় গর্ভধারণের পর ভ্রুণের গর্ভপাতও হয়ে যেতে পারে। তাই পুরোপুরি সেদ্ধ বা রান্না করা খাবারই খাবেন। গর্ভধারণের চেষ্টা করলে এসব খাবার এড়িয়ে যাবেন। যতটা সম্ভ টাটকা সবজি ও ফল খাওয়া চেষ্টা করুন। এটি প্রয়োজনীয় পুষ্টির জোগান দেবে।
সূত্র: উইমেন্স হেলথ