বিশেষজ্ঞরা বলেন, টাকার মাধ্যেম যেকোনও রোগের সংক্রমণ ছড়াতে পারে। কারণ টাকা সর্বজনীন ব্যবহার হয়। তাই টাকা রোগের বাহক এ বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই।
বিবিসি জানায়, ২০১৫ সালে দিল্লির ইন্সটিটিউট অব জিনোমিকস অ্যান্ড ইন্টিগ্রেটিভ বায়োলজি-র বিজ্ঞানীরা এক গবেষণা করেন। গবেষণায় জানা যায়, ভারতের বাজারে চালু নোটগুলোর ডিএনএ পরীক্ষা করে তাতে অন্তত ৭৮ রকম বিপজ্জনক মাইক্রোবের অস্তিত্বের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এগুলো থেকে মারাত্মক রোগ ছড়াতে পারে।
বাংলাদেশেও এ বিষয়ে একদল গবেষক গবেষণা পরিচালনা করেন। ২০১৯ সালের আগস্টে করা এই গবেষণায় বিজ্ঞানীরা বাংলাদেশের বাজারে চালু নোটে এবং ধাতব মুদ্রায় ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি পেয়েছেন। এই ধরনের ব্যাকটেরিয়া সাধারণত মলমূত্রের মধ্যে থাকে।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞানের ছাত্রী নিশাত তাসনিম প্রায় ছয় মাস ধরে বাজারে প্রচলিত টাকা ও কয়েন নিয়ে গবেষণা করেন। তিনি বলেন, “এসব মুদ্রায় ই-কোলাই জাতীয় ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি পাওয়া গেছে।“
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞানের শিক্ষক অধ্যাপক ড. আবদুল্লাহ হারুন চৌধুরী ওই গবেষণাটির তত্ত্বাবধানে ছিলেন। গবেষণায় ১৫টি উৎস থেকে নেওয়া কাগজের টাকার নোট ও কয়েনে এক হাজারের চেয়ে বেশি মাত্রায় ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি দেখেছেন। তারা জানান, এক হাজার মাত্রা পর্যন্ত ব্যাকটেরিয়াকে সহনশীল হিসেবে গ্রহণযোগ্য মনে করা হয়।
অধ্যাপক ড. আবদুল্লাহ হারুন চৌধুরী বলেন, " যা প্রমাণ পেয়েছি তা জনস্বাস্থ্যের দৃষ্টিকোণ থেকে ভয়াবহ। সাধারণ ব্যাকটেরিয়ার পাশাপাশি মানুষের মল মূত্র থেকে আসা ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতির প্রমাণ মিলেছে। যা ক্ষতিকারক।“
ড. চৌধুরী আরও বলেন, “মুদ্রার মাধ্যমে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। টাকায় বিভিন্ন ধরণের ব্যাকটেরিয়া পেয়েছি। যা মানুষের অন্ত্রে নানা ধরণের রোগ সৃষ্টি করে। তাই এর মাধ্যমে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়াটাও অস্বাভাবিক নয়।“
ড. চৌধুরীর ধারণা, “টাকা বা ডলার আন্তর্জাতিকভাবে বিনিময় হয়। এর মাধ্যমে করোনাভাইরাস শুধু একটি দেশের মধ্যে নয় বরং বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়তে পারে। টাকা মানুষ হাত দিয়ে ধরে। অনেক সময় মুখের থুথু নিয়ে গুনে নেয়। তাই এর মাধ্যমে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়াত শঙ্কা সবচেয়ে বেশি।“
বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনা সংক্রমণ এড়াতে ব্যাংক নোটের লেনদেন স্পর্শবিহীন বা প্রযুক্তির ব্যবহার করা যেতে পারে।