নাগরিক ব্যস্ততার এই জীবনে নিজের দিকে তাকানোর সময় থাকে না অনেক সময়। ব্যস্ত জীবনের সব থেকে খারাপ প্রভাব পড়ে আমাদের খাদ্যাভ্যাসের ওপর। একেক দিন একেক সময়ে খাওয়া, কখনো-বা না খেয়েই থাকা, দীর্ঘক্ষণ পেট খালি রাখা কিংবা রাস্তার পাশের অস্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে পেট ভরানো হয় অনেক সময়ই। আবার চারপাশে এমন সব লোভনীয় খাবার থাকে যে চাইলেও নিজেকে সংযত রাখা যায় না। ফলে গ্যাস্ট্রিক হয় সঙ্গী। শীতের দিনে ভাজাভুজি খাবার একটু বেশিই খাওয়া হয়। এসব নানা কারণেই হানা দেয় গ্যাস্ট্রিকের মতো সমস্যা।
গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকে বাঁচতে ওষুধের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে বেশির ভাগ মানুষই। তাতে সাময়িক মুক্তি মিললেও দীর্ঘ সময় ধরে ওষুধ খেতে থাকলে আরও নতুন সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই চেষ্টা করুন ঘরোয়া উপায়ে গ্যাসের সমস্যা দূর করতে। সে জন্য প্রথমত আপনার লাইফস্টাইলে পরিবর্তন আনতে হবে। এরপর খেতে হবে এমন কিছু খাবার, যেগুলো গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা সারিয়ে তুলতে কাজ করবে।
চলুন জেনে নেওয়া যাক কোন খাবারগুলো নিয়মিত খেলে ওষুধ ছাড়াই গ্যাস্ট্রিক দূর হবে
গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় পান করুন জিরাপানি
আমাদের প্রায় সবার রান্নাঘরেই জিরা নামক মসলাটি পাওয়া যাবে। এটি অনেক ধরনের রান্নার কাজে ব্যবহার করা হয়। জিরা গ্যাস্ট্রিক সারাতেও দারুণ কাজ করে। এটি হজম রসকে উদ্দীপিত করে। এর ফলে বদহজম ও অ্যাসিডিটির মতো সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। মসলাদার বা মুখরোচক খাবারের সঙ্গে অনেককেই জিরাপানি খেতে দেখবেন।
তুলসীপাতা সারাবে গ্যাস্ট্রিক
পেটের যেকোনো সমস্যা দূর করতে তুলসীপাতার ব্যবহার বেশ পুরোনো। এই পাতার নির্যাস গ্যাস্ট্রাইটিসে আক্রান্ত ইঁদুরের গ্যাস্ট্রিক মিউকোসার প্রদাহ কমানোর ক্ষেত্রে কার্যকরী বলে গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে। আপনি যদি নিয়মিত তুলসীপাতা খান তবে ওষুধ ছাড়াই দূর হবে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা।
মৌরি হবে গ্যাস্ট্রিকের শত্রু
গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করতে আরেকটি কার্যকরী খাবার হলো মৌরি। এটি গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করার পাশাপাশি কোষ্ঠকাঠিন্য সারাতেও কাজ করে। মৌরি আমাদের পাকস্থলী এবং অন্ত্রের পেশিগুলোতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। এর ফলে অ্যাসিড রিফ্লাক্সের কারণে সৃষ্ট গ্যাস ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়।
গ্যাস্ট্রিক নিয়ন্ত্রণে ক্যামোমিল টি
গ্যাস্ট্রিকের সমস্যার জন্য আরেকটি সহজ ও কার্যকরী খাবার হলো ক্যামোমিল টি। এই ভেষজ চা নিয়মিত খেলে ওষুধ ছাড়াই দূর হবে গ্যাস্ট্রিক। ক্যামোমিল টি গ্যাস্ট্রিকের কারণে সৃষ্ট প্রদাহ কমানোর পাশাপাশি মুক্তি দেয় আলসার থেকেও। প্রতিদিন এক কাপ ক্যামোমিল টি পান করলে আপনার হজম ক্ষমতা বাড়াতে কাজ করবে।
গ্যাস্ট্রিক থেকে মুক্তি দেবে পুদিনা
পেট ফাঁপার সমস্যা থাকলে নিয়মিত পুদিনাপাতা খাবেন। এই ভেষজ আপনার পেটে গ্যাস জমতে দেয় না। পেপারমিন্ট অয়েলে থাকে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল যৌগ, যা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে আপনাকে সাহায্য করবে।
গ্যাস্ট্রিক নিরাময়ে কলা ও কমলা
কলা ও কমলা পাকস্থলীর অতিরিক্ত সোডিয়াম দূর করতে সহায়তা করে। এতে করে গ্যাসের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এ ছাড়া কলার সল্যুবল ফাইবারের কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার ক্ষমতা রাখে। সারা দিনে অন্তত দুটি কলা পেট পরিষ্কার রাখতে কাজ করে।
গ্যাস্ট্রিকে কাজে লাগবে ঠান্ডা দুধ
ক্যালসিয়াম শরীরের অম্ল শুষে নিতে অনেকটা সাহায্য করে। তাই গ্যাসের সমস্যায় ঠান্ডা দুধ খান। গরম দুধ অনেকেই সহ্য করতে পারেন না। শরীরে সহ্য না হলে গরম দুধ গ্যাসের সমস্যা বাড়ায়। কিন্তু দুধ ঠান্ডা হলে সেই সমস্যা তো থাকেই না, বরং গ্যাস্ট্রাইটিসের ব্যথা অনেকটা কমিয়ে দিতে পারে।
গ্যাস্ট্রিক রোধে ডাবের পানি
গ্যাসের সমস্যা কাটাতে ডাবের পানি হতে পারে ভালো বিকল্প। কারণ পটাশিয়াম ও সোডিয়ামের অন্যতম প্রাকৃতিক খনি এই ডাব। চিকিৎসকদের মতে, প্রতিদিন সকালে বা দুপুরে খাওয়ার পর একটি ডাবের পানি খেলে এর ক্ষারীয় ভাব হজম সমস্যাকে যেমন দূরে রাখে, তেমনই পেট ঠান্ডা হয়।
দারুচিনি ও লবঙ্গ হবে গ্যাস্ট্রিকের শত্রু
এক কাপ পানিতে আধ চামচ দারুচিনি গুঁড়া মেশান। সেই পানি ফুটিয়ে ঠান্ডা করে খান। দারচিনির অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট গ্যাস-অম্বলকে দূরে রাখে।
প্রতিদিন খাওয়ার পর দু-তিনটি লবঙ্গ চিবিয়ে খাওয়ার অভ্যাস গ্যাসের সমস্যার সঙ্গে লড়তে সাহায্য করে। লবঙ্গর রসের প্রভাবে শরীরে হাইড্রক্লোরিক অ্যাসিডের পরিমাণ বাড়ে। ফলে সমস্যা কমে অনেকটাই।
সূত্র: প্রথম আলো