বিশ্বের প্রায় অধিকাংশ নারীই স্তন ক্যান্সারে ভুগছে। প্রথম দিকে স্তন ক্যান্সার ধরা না গেলেও, ধীরে ধীরে এটি মারাত্মক আকার ধারণ করে। ক্যান্সার মরণব্যাধি রোগ। সঠিক সময়ে ধরা পড়ে এবং এর চিকিৎসা শুরু করলে পুনরুদ্ধার করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন চিকিত্সকরা।
অক্টোবর মাস স্তন ক্যান্সার সচেতনতার মাস। প্রতিটি নারীই স্তন ক্যান্সার সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকা উচিত। স্তন ক্যান্সার জেনেটিক কারণে হতে পারে। অর্থাত্ মায়ের স্তন ক্যান্সার থাকলে মেয়েরও তা হতে পারে। তাই কারো পারিবারিক ইতিহাস থাকলে আগে থেকেই সতর্ক থাকা প্রয়োজন।
সম্প্রতি গবেষকরা জানিয়েছেন, অবিবাহিত নারীদের স্তন ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বেশী থাকে। রিসার্চগেটের একটি সমীক্ষা অনুসারে, অবিবাহিত নারীদের মধ্যে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি ২৪% থেকে ২৮% বেশি। সন্তান জন্ম না দেওয়া এবং বুকের দুধ না খাওয়ানোর কারণেই এমনটা হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা জানান, গর্ভাবস্থায় নারীদের অনেক হরমোনের পরিবর্তন হয়। সন্তান জন্মের পর বুকের দুধ বাচ্চাকে খাওয়ানো অত্যন্ত জরুরি। এতে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে যায়। এছাড়াও হরমোনাল প্রতিস্থাপন থেরাপির মাধ্যমেও স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে। হরমোনাল রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি শুধুমাত্র সেই সব নারীদের দেওয়া হয় যাদের মেনোপজ হয়েছে। যাদের ডিম্বাশয় কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। এই থেরাপি ৬ মাস থেকে ১ বছর পর্যন্ত নেওয়া যায়।
বিশেষজ্ঞরা জানান, জরায়ু নেই এমন নারীদের ইস্ট্রোজেন থেরাপি এবং জরায়ু আছে এমন নারীদের ইস্ট্রোজেন প্রোজেস্টেরন থেরাপি দেওয়া হয়। এই থেরাপিতে কৃত্রিমভাবে হরমোন দেওয়া হয়। যার কারণে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে।
মায়ো ক্লিনিকে প্রকাশিত সেন্টার ফর উইমেন হেলথের রিপোর্ট অনুযায়ী, ৫০ বছর পর এই ধরণের থেরাপি নেওয়া ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। কোনো নারী যদি ৫ বছর ধরে টানা হরমোন থেরাপি গ্রহণ করেন, তবে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে।
বিশেষজ্ঞরা আরও জানান, যারা নিয়মিত জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল গ্রহণ করেন তাদের স্তন ক্যান্সার হতে পারে। জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল অবাঞ্ছিত গর্ভাবস্থা থেকে রক্ষা করলেও তা স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।
স্তন ক্যান্সার নিয়ে আমেরিকায় পরিচালিত এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, এক লাখ নারীর মধ্যে ৮ জনের স্তন ক্যান্সার হওয়ার পেছনে জন্মনিয়ন্ত্রণকারী পিল সেবন দায়ী। যেখানে অল্প বয়সী নারীরাও রয়েছেন। এছাড়াও যে নারীরা আইইউএস (IUS) অর্থাৎ অন্তঃসত্ত্বা সিস্টেম ইনস্টল করেছেন তারাও স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকিতে রয়েছেন। জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল এবং IUS এর কারণে ইস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টেরন হরমোন নিঃসরণ হয়। যা স্তন ক্যান্সারের অন্যতম কারণ।
শুধু তাই নয়, নারীদের মানসিক চাপ, অতিরিক্ত জাঙ্ক ফুড খাওয়া, ধূমপান বা মদ্যপান করাসহ খারাপ অভ্যাসের কারণেও স্তন ক্যান্সার হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা জানান, স্তন ক্যান্সারের তেমন কোনো লক্ষণ দেখা যায় না। তাই মাঝে মাঝে নিজেকেই পরীক্ষা করে নিতে হয়। স্তনে ব্যথা অনুভব করা, চাপ দিলে কোনো পিণ্ড অনুভব করা, স্তনবৃন্ত থেকে রক্তপাত হওয়া বা কোনো তরল স্রাব বের হলেই ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে। অর্থাত্ হাত দিয়ে পুরো স্তন ঢেকে পুরো শক্তি দিয়ে চাপ দিন। কোনো পিণ্ড বা ফোলাভাব রয়েছে কিনা পরীক্ষা করুন। স্তনগুলো শক্ত কিনা দেখুন। আকার বা রঙের পরিবর্তন হচ্ছে কিনা খেয়াল করুন। ৪০ বছর বয়সের পর প্রতি বছর ম্যামোগ্রাফি করে নিন। স্তন ক্যান্সার এড়াতে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি একটি এক্স-রে মেশিনের মাধ্যমে করা হয়। এই পরীক্ষায় স্তন পৃষ্ঠের নীচের টিস্যু এবং নালীগুলো দেখা যায়। কোনো পিণ্ড দেখা গেলে তা টিউমার ধরা হয়।
ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের মতে, ক্যান্সারের ধরন ও স্টেজ অনুযায়ী চিকিৎসা শুরু করতে হয়। সার্জারি, রেডিয়েশন থেরাপি, কেমোথেরাপি কিংবা টার্গেটেড বায়োলজিক্যাল থেরাপি দিয়ে স্তন ক্যান্সারের চিকিত্সা করা হয়। প্রথম পর্যায়ে স্তন ক্যান্সার ধরা পড়লে তা পুরোপুরি নিরাময় করা সম্ভব।