• ঢাকা
  • বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ২৮ মাঘ ১৪৩০, ১৩ শা'বান ১৪৪৬

প্রেগন্যান্সি ডায়াবেটিস হলে কেন সাবধান হতে হবে


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২৫, ১০:৪৭ পিএম
প্রেগন্যান্সি ডায়াবেটিস হলে কেন সাবধান হতে হবে
ছবি: সংগৃহীত

প্রেগন্যান্সি ডায়াবেটিস বা গর্ভকালীন ডায়াবেটিস হলো গর্ভাবস্থায় দেখা দেওয়া একটি বিশেষ ধরনের ডায়াবেটিস। সাধারণত এই সমস্যাটি গর্ভাবস্থার দ্বিতীয় বা তৃতীয় ত্রৈমাসিকের সময় দেখা যায়। গর্ভবতীর শরীরে রক্তে অতিরিক্ত গ্লুকোজ জমা হলে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়। যদিও এই সমস্যা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শিশুর জন্মের পর সেরে যায়, তবে এর সময়মতো সঠিক চিকিৎসা না হলে মা ও শিশুর স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়তে পারে।

প্রেগন্যান্সি ডায়াবেটিস কেন হয়?

গর্ভাবস্থায় শরীরে বেশ কিছু হরমোন উৎপন্ন হয় যা শিশুর বিকাশে সহায়তা করে। তবে এই হরমোনগুলো কখনো কখনো ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাধাগ্রস্ত করে। ইনসুলিন হলো একটি হরমোন যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। ইনসুলিনের কার্যক্ষমতা কমে গেলে রক্তে গ্লুকোজ জমা হতে শুরু করে, যার ফলে প্রেগন্যান্সি ডায়াবেটিস দেখা দিতে পারে।

হরমোনের পরিবর্তন
গর্ভাবস্থায় প্লাসেন্টা থেকে বেশ কিছু হরমোন নিঃসৃত হয় যেমন প্লাসেন্টাল ল্যাক্টোজেন এবং কোর্টিসল। এগুলো ইনসুলিন রোধী হিসেবে কাজ করে, যা রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে।

ইনসুলিন প্রতিরোধ
কিছু নারীর শরীর পর্যাপ্ত ইনসুলিন তৈরি করতে পারে না বা ইনসুলিনের প্রতি সংবেদনশীল থাকে না। এ কারণে রক্তে অতিরিক্ত গ্লুকোজ জমা হতে থাকে।

ওজন বৃদ্ধি
অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা প্রেগন্যান্সি ডায়াবেটিসের অন্যতম কারণ। ওজন বেশি হলে শরীরে ইনসুলিন প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।

জেনেটিক প্রভাব
পরিবারের কারও ডায়াবেটিস থাকলে প্রেগন্যান্সি ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

বয়সের প্রভাব
৩০ বছরের বেশি বয়সে গর্ভধারণ করলে প্রেগন্যান্সি ডায়াবেটিসের সম্ভাবনা বেশি থাকে।

পূর্ববর্তী ইতিহাস
পূর্বে গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস থাকার ইতিহাস থাকলে বা অতিরিক্ত ওজনের শিশু জন্ম দেওয়ার অভিজ্ঞতা থাকলে এই সমস্যার ঝুঁকি বাড়ে।

প্রেগন্যান্সি ডায়াবেটিসের লক্ষণ কেমন হয়
প্রেগন্যান্সি ডায়াবেটিসের তেমন সুস্পষ্ট লক্ষণ নাও থাকতে পারে। তবে কিছু সাধারণ উপসর্গ দেখা দিতে পারে। অতিরিক্ত পিপাসা লাগা, ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া, ক্লান্তি অনুভব করা, চোখে ঝাপসা দেখা, অতিরিক্ত ক্ষুধা লাগা।

যে স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকে
গর্ভকালীন ডায়াবেটিস হলে মায়ের জন্য ঝুঁকি থাকে। প্রি-একলাম্পসিয়া (উচ্চ রক্তচাপ ও প্রোটিন ইউরিন) হতে পারে। জরায়ু সংক্রান্ত জটিলতা হতে পারে। পরবর্তী জীবনে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বেড়ে যায়। শিশুর জন্যেও ঝুঁকি থাকে। অতিরিক্ত ওজন নিয়ে শিশুর জন্ম (ম্যাক্রোসোমিয়া) হতে পারে। জন্মের পর শিশুর শর্করার মাত্রা কমে যাওয়ার (নিওনেটাল হাইপোগ্লাইসেমিয়া) সম্ভাবনা থাকে। শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা হতে পারে। পরবর্তী জীবনে স্থূলতা এবং টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি থাকে।

প্রেগন্যান্সি ডায়াবেটিস হলে কী করবেন

স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস
কম কার্বোহাইড্রেট এবং উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবার খান। শাকসবজি, ফলমূল, এবং পূর্ণ শস্য খাদ্যতালিকায় রাখুন।

শারীরিক ব্যায়াম
গর্ভাবস্থায় নিয়মিত হালকা ব্যায়াম (যেমন হাঁটা, ইয়োগা) ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।

ওজন নিয়ন্ত্রণ
গর্ভাবস্থার শুরু থেকেই স্বাস্থ্যসম্মত ওজন ধরে রাখার চেষ্টা করুন।

ডাক্তারি পরামর্শ
নিয়মিত রক্তের শর্করা পরীক্ষা করুন। প্রয়োজনে ইনসুলিন থেরাপি গ্রহণ করুন। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ গ্রহণ করুন।

মানসিক স্বাস্থ্য
মানসিক চাপ কমানোর জন্য রিলাক্সেশন টেকনিক ব্যবহার করতে পারেন।

প্রেগন্যান্সি ডায়াবেটিস একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা হলেও সঠিক সচেতনতা ও চিকিৎসার মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। গর্ভবতী নারীদের উচিত নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং জীবনধারা পরিবর্তনের মাধ্যমে এই সমস্যার ঝুঁকি এড়ানো। সুস্থ মা মানেই একটি সুস্থ ও সুন্দর ভবিষ্যৎ।

Link copied!