ভিটামিন এ হল একটি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান যা শিশুর সুস্থ বিকাশ ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এটি চোখের স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য এবং শিশুদের রাতকানা ও অন্যান্য চোখের রোগ থেকে সুরক্ষা প্রদান করে। তাই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) ও বাংলাদেশ সরকার নিয়মিতভাবে ৬ মাস থেকে ৫ বছর বয়সী শিশুদের ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ানোর উদ্যোগ নিয়ে থাকে।
বাংলাদেশে অপুষ্টিজনিত সমস্যার কারণে শিশুদের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। ভিটামিন এ-এর অভাব হলে শিশুদের দৃষ্টিশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, এমনকি তারা অন্ধত্বের শিকারও হতে পারে। এছাড়া, এটি সংক্রমণজনিত রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে এবং শিশু মৃত্যুর হার কমিয়ে আনে।
ভিটামিন এ-চোখের স্বাস্থ্য রক্ষা
ভিটামিন এ-এর অভাব শিশুদের দৃষ্টিশক্তির জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে। এটি কর্নিয়ার স্বচ্ছতা বজায় রাখে এবং রাতকানা রোগ প্রতিরোধ করে। শিশুদের রাতকানা রোগ হলে অন্ধকারে দেখতে সমস্যা হয়, যা ধীরে ধীরে সম্পূর্ণ অন্ধত্বের দিকে নিয়ে যেতে পারে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি
ভিটামিন এ শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং বিভিন্ন সংক্রমণজনিত রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে। এটি শ্বাসতন্ত্র, অন্ত্র ও ত্বকের সুরক্ষা প্রদান করে। ফলে শিশু সহজে অসুস্থ হয় না।
সংক্রমণ প্রতিরোধে সহায়তা
শিশুরা সাধারণত ডায়রিয়া, হাম, নিউমোনিয়ার মতো সংক্রমণের ঝুঁকিতে থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত ভিটামিন এ গ্রহণ করলে এই রোগগুলোর প্রকোপ কমে এবং শিশুর সুস্থ থাকার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
বৃদ্ধি ও বিকাশে সহায়ক
ভিটামিন এ শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এটি হাড়ের বৃদ্ধি, কোষ বিভাজন এবং বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে।
শিশুমৃত্যুর হার কমানো
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, শিশুদের নিয়মিত ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ানো হলে ২৪% পর্যন্ত মৃত্যুহার কমানো সম্ভব। বিশেষ করে অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের ক্ষেত্রে এটি জীবন রক্ষাকারী ভূমিকা পালন করে।
ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ানোর নিয়ম
বাংলাদেশে সরকার প্রতি বছর দুইবার জাতীয় ভিটামিন এ প্লাস ক্যাম্পেইন পরিচালনা করে। এই ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে ৬ মাস থেকে ৫ বছর বয়সী শিশুদের বিনামূল্যে ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ানো হয়। ৬-১১ মাস বয়সী শিশুদের জন্য নীল ক্যাপসুল (১,০০,০০০ আইইউ)। ১২-৫৯ মাস বয়সী শিশুদের জন্য লাল ক্যাপসুল (২,০০,০০০ আইইউ) খাওয়ানো হয়। শিশুকে খাওয়ানোর সময় অবশ্যই তাকে খালি পেটে না দিয়ে খাওয়ার পর বা মায়ের দুধ পান করানোর পর ক্যাপসুল দিতে হবে।
ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ালে কিছু শিশুর মধ্যে হালকা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে, যেমন, সাময়িক ডায়রিয়া, বমি ভাব, মাথা ঘোরা,ক্ষুধামন্দা।
এই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলো সাধারণত এক-দুই দিনের মধ্যে চলে যায় এবং এটি শিশুদের জন্য ক্ষতিকর নয়।