হঠাৎ করে মনের অবস্থার পরিবর্তনকেই মুড সুইং বলে। এটি একটি মানসিক অবস্থা। মুড সুইংয়ে ব্যক্তি খুব দ্রুতই খুশি থেকে বিষণ্ন, উত্তেজিত বা রাগান্বিত হয়ে পড়ে। যা ব্যক্তিজীবনে জটিলতার সৃষ্টি করে। ব্যক্তিগত, পারিবারিক এবং সামাজিক জীবনে নানা সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। মুড সুইং-এর পেছনে বিভিন্ন কারণ থাকে। শারীরিক, মানসিক, হরমোনজনিত এবং পারিপার্শ্বিক বিভিন্ন কারণে মুড সুইং হতে পারে। এই কারণগুলো চিহ্নিত করে সঠিক চিকিৎসা করা অত্যন্ত প্রয়োজন। বিশেষজ্ঞরা জানান, স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা মুড সুইং প্রতিরোধে সাহায্য করে। তবে এর আগে মুড সুইংয়ের কারণ চিহ্নিত করতে হবে। যেমন_
হরমোনজনিত কারণ
হরমোনের পরিবর্তন মুড সুইং-এর একটি প্রধান কারণ। বিশেষ করে নারীদের ক্ষেত্রে মেনস্ট্রুয়াল সাইকেল, গর্ভাবস্থা, মেনোপজ ইত্যাদি কারণে হরমোনের স্তরে বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটে। যা মুড সুইংয়ের কারণ হতে পারে। এছাড়াও থাইরয়েড হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, যেমন হাইপোথাইরয়েডিজম বা হাইপারথাইরয়েডিজম মনের ওপর প্রভাব ফেলে। এতে মুড সুইংয়ের সৃষ্টি হয়।
মানসিক স্বাস্থ্যজনিত কারণ
বিভিন্ন মানসিক রোগের সঙ্গে মুড সুইং-এর সম্পর্ক থাকতে পারে। যেমন, বাইপোলার ডিজঅর্ডার একটি প্রধান মানসিক অসুস্থতা যেখানে ব্যক্তিরা অত্যন্ত উচ্ছ্বসিত (ম্যানিয়া) এবং অত্যন্ত বিষণ্ন (ডিপ্রেশন) অবস্থায় থাকে। এছাড়াও ডিপ্রেশন, অ্যাংজাইটি, এবং বর্ডারলাইন পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডারের মতো মানসিক সমস্যাগুলোও মুড সুইং-এর জন্য দায়ী।
শারীরিক স্বাস্থ্যজনিত কারণ
বিভিন্ন শারীরিক অসুস্থতা যেমন দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা, মাইগ্রেন, ডায়াবেটিস এবং হার্টের সমস্যা থাকলে তা মানসিক অবস্থাকে প্রভাবিত করে। এছাড়াও, খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনযাপনের ধরনও মনের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, খাদ্যাভ্যাসে শর্করা এবং ক্যাফেইনের অত্যাধিক গ্রহণ বা খাদ্যাভ্যাসের অনিয়ম মুড সুইংয়ের কারণ হতে পারে। অনিয়মিত ঘুম বা ঘুমের অভাবও মনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
পারিপার্শ্বিক কারণ
প্রতিদিনের জীবনে বিভিন্ন চাপ থাকে। যেমন কাজের চাপ, সম্পর্কের সমস্যা, আর্থিক সমস্যা, এবং পারিবারিক চাপ, মনের ওপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। এই চাপগুলো একত্রে মনের ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি করতে পারে। যার ফলে মুড সুইং-এর হতে পারে। এছাড়াও আকস্মিক পরিবর্তন বা ট্রমাটিক ইভেন্ট, যেমন প্রিয়জনের মৃত্যু বা চাকরি হারানো মনের ওপর গভীর প্রভাব ফেলে।
আসক্তি এবং মাদকদ্রব্যের প্রভাব
অ্যালকোহল, নিকোটিন, এবং বিভিন্ন ধরনের মাদক মনের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। যার কারণে মুড সুইং হয়। বিশেষ করে, এই ধরনের পদার্থের প্রতি আসক্তি থাকলে ব্যক্তি মানসিক এবং শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে। যা তাদের মনের স্থায়িত্বকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
আত্ম-পরিচর্যার অভাব
স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম এবং মানসিক বিশ্রামের অভাব হলে মানুষের মনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এতে মনের স্থায়িত্ব নষ্ট হয়। ব্যক্তি মুড সুইংয়ের শিকার হতে পারেন। এছাড়া সামাজিক বন্ধন এবং সমর্থনের অভাবও মনের ওপর প্রভাব ফেলে। যার কারণে মুড সুইং হতে পারে।