• ঢাকা
  • সোমবার, ২১ এপ্রিল, ২০২৫, ৮ বৈশাখ ১৪৩২, ২২ শাওয়াল ১৪৪৬

ব্রয়লার মুরগি খাওয়া কেন ক্ষতিকর?


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: এপ্রিল ২০, ২০২৫, ০৫:৪২ পিএম
ব্রয়লার মুরগি খাওয়া কেন ক্ষতিকর?
ছবি: সংগৃহীত

খাদ্য চাহিদা পূরণে ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন বেড়েছে। ব্রয়লার মুরগি দ্রুত বাড়ে, কম খরচে উৎপাদন হয় এবং সহজলভ্য। তাই প্রতিদিনের খাবার টেবিলে ব্রয়লার মুরগি স্থান করে নিয়েছে। কিন্তু জানেন কি, এই ব্রয়লার মুরগি খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো, না ক্ষতিকর?

বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণা, চিকিৎসকের মতামত এবং বাস্তব অভিজ্ঞতা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, কিছু কারণ রয়েছে যার কারণে ব্রয়লার মুরগিকে ক্ষতিকর বলা হয়।

কৃত্রিম খাদ্য ও হরমোনের ব্যবহার
ব্রয়লার মুরগিকে অল্প সময়ের মধ্যে বড় করে তোলার জন্য কৃত্রিম খাদ্য ও হরমোন ব্যবহার করা হয়। মাত্র ৩০-৩৫ দিনের মধ্যেই এগুলো বাজারজাত করা হয়। এই অস্বাভাবিক দ্রুত বৃদ্ধির জন্য ফিডে উচ্চমাত্রার প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট এবং কখনো কখনো হরমোনজাতীয় উপাদান মেশানো হয়। এই কৃত্রিম হরমোন শরীরের মধ্যে প্রবেশ করলে দীর্ঘমেয়াদে নানা ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করতে পারে, যেমন_ হরমোন ভারসাম্য নষ্ট হওয়া, মেয়েদের মধ্যে সময়ের আগেই বয়ঃসন্ধি শুরু হওয়া, ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়া এবং লিভার ও কিডনির উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে।

অতিরিক্ত অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার
ব্রয়লার মুরগি যাতে অসুস্থ না হয় বা মৃত্যুহার কম হয়, সেজন্য উৎপাদকরা খাদ্যে অ্যান্টিবায়োটিক মেশান। এই অ্যান্টিবায়োটিক শরীরে জমা হয়ে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স তৈরি করতে পারে। যার ফলে ভবিষ্যতে কোনো সংক্রমণের জন্য অ্যান্টিবায়োটিক কাজ না করার শঙ্কা থাকে। যা এক ভয়াবহ স্বাস্থ্যঝুঁকি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই অ্যান্টিবায়োটিক অতিরিক্ত মাত্রায় গ্রহণ করলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে যেতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদে এটি হৃদরোগ, এলার্জি এবং পেটের নানা সমস্যার কারণ হতে পারে।

স্বাস্থ্যহানিকর পরিবেশে লালন
ব্রয়লার মুরগিগুলো সাধারণত গাদাগাদি করে ছোট জায়গায় রাখা হয়, যেখানে আলো-বাতাস ঠিকমতো প্রবেশ হয় না। তাদের চলাফেরার সুযোগও সীমিত। এই ধরনের পরিবেশে মুরগির শরীরে প্রাকৃতিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। ফলে রোগপ্রবণতা বাড়ে এবং মাংসে বিষাক্ত পদার্থ জমে থাকার সম্ভাবনা তৈরি হয়। এই মাংস মানুষের শরীরে প্রবেশ করলে হজমে সমস্যা, অ্যালার্জি, এমনকি পেটের নানা জটিল রোগ সৃষ্টি হতে পারে।

পুষ্টিগুণে ঘাটতি
দেশি বা প্রকৃতভাবে লালিত মুরগির তুলনায় ব্রয়লার মুরগির পুষ্টিগুণ তুলনামূলক কম। দেশি মুরগির মাংসে প্রাকৃতিক প্রোটিন, আয়রন, ভিটামিন বি১২ ও অন্যান্য খনিজ উপাদান বেশি থাকে। অন্যদিকে, ব্রয়লারে এই উপাদানগুলো কৃত্রিম খাদ্য নির্ভর এবং অনেক সময় দেহের জন্য সহজে শোষণযোগ্য হয় না। অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত হওয়ার কারণে এটি বেশি খেলে শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।

দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব
যদিও ব্রয়লার মুরগির তাৎক্ষণিক কোনো প্রভাব চোখে পড়ে না, তবে নিয়মিত ও দীর্ঘদিন এই মুরগির মাংস খেলে শরীরে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। অনেক সময় এটি ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ক্যানসার, হরমোনজনিত সমস্যা এবং ওজন বেড়ে যাওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

শিশু ও রোগীদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ

শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় কম। তাই তাদের জন্য ব্রয়লার মুরগি খাওয়ানো স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়াতে পারে। একইভাবে যেসব ব্যক্তি কিডনি, লিভার বা হরমোনজনিত রোগে আক্রান্ত, তাদের জন্য এই মুরগির মাংস আরও বেশি ক্ষতিকর হতে পারে।

Link copied!