ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ বেড়েছে। দেশজুড়ে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। মৃত্যুর সংখ্যাও প্রতিদিন উঠা নামা করছে। বিগত কয়েক বছর ধরেই ডেঙ্গু জ্বরের ধরণ বদলেছে। ধীরে ধীরে এটি ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। এখন এই জ্বরে প্রাণহানির ঘটনাও বেশি হচ্ছে। এই বছর ডেঙ্গু জ্বরের ধরণ একটু আলাদা বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, বর্তমান সময়ের ডেঙ্গু রোগীর অধিকাংশই সেকেন্ডারি রোগী। যারা আগেও ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন। দ্বিতীয় পর্যায়ে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ায় উপসর্গও ভিন্ন হচ্ছে। যা থেকে জটিলতা বাড়ছে এবং মৃত্যুঝুঁকি বেশি থাকছে।
বিশেষজ্ঞরা জানান, ডেঙ্গু জ্বর তিন ধরনের হচ্ছে। গ্রুপ–এ–তে কোনো জটিলতা থাকে না। গ্রুপ–বি রোগীদের ‘ওয়ার্নিং সাইন’ অর্থাৎ বিপদসংকেত থাকে । যাদের হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস, কিডনি বা লিভারজনিত ক্রনিক রোগ ছিল বা এরা উচ্চ স্বাস্থ্য-ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। স্থূলকায়, গর্ভবতী, শিশু বা বয়স্ক রোগীরা এই গ্রুপে রয়েছে। গ্রুপ–সি হচ্ছে তীব্র জটিল রোগী। বুকে বা পেটে পানি, সঙ্গে শ্বাসকষ্ট বা রক্তচাপ কমে যাওয়া, তীব্র রক্তক্ষরণের কারণে রক্তচাপ কমে যাওয়া অথবা নির্দিষ্ট একটা অঙ্গ বিকল, যেমন লিভার ফেইলিউর, ব্রেন এনকেফালাইটিস, কিডনি ফেইলিউর মতো জটিল সমস্যা দেখা যাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা আরও জানান, ডেঙ্গু জ্বর নির্ণয় করতে ৭ দিনের মতো সময় লাগে। জ্বরের প্রথম তিন-পাঁচ দিনের মধ্যে সিবিসি ও এনএসওয়ান অ্যান্টিজেন এবং ৭ দিন পর ডেঙ্গু আইজি-এম ও আইজি-জি অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করতে হবে। এছাড়াও ‘টরনিকুয়েট টেস্ট’ নামে এমন একটি পরীক্ষাও রয়েছে, যা ডেঙ্গু জ্বর নির্ণয়ের সহায়ক।
ডেঙ্গু রোগীর করণীয় পদক্ষেপ নিয়ে বিশেষজ্ঞরা জানান, রোগীকে চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থাকতে হবে। নির্দেশনামাফিক রক্তচাপ পরীক্ষা করতে হবে। নির্দিষ্ট সময় পর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে। পরিস্থিতি জটিল হওয়ার আগেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।
ডেঙ্গু রোগীর খাওয়া-দাওয়া নিয়ে বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন, জ্বরের সাধারণ চিকিৎসার পাশাপাশি রোগীকে প্রচুর তরল খাবার খেতে হবে। পুষ্টি ও লবণসমৃদ্ধ তরল বেশি খেতে হবে। খাওয়ার স্যালাইন, ডাব, ফলের রস, শরবত, ভাতের মাড় খাওয়া যেতে হবে। মনে রাখতে হবে, ডেঙ্গু জ্বরের পরিস্থিতি জটিল হওয়ার চিকিৎসা শুরু করা হলে, তা থেকে বেরিয়ে আসা কঠিন হয়। তাই শুরু থেকেই সঠিক চিকিত্সা নিতে হবে।